বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিরাট সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সরকারী উদ্যোগের অভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সম্ভাবনাটি বিকল্প ভোজ্য তেল। মাঠ ফসল ছাড়াই নারিকেল থেকে দেশের মোট চাহিদার ভোজ্য তেল উৎপাদন সম্ভব। এমনকি আমদানির বদলে করা যাবে রফতানি। দরকার শুধু উদ্যোগের। নারিকেল গাছকে সাধারণের ‘পেনশন মানি’ হিসেবে উল্লেখ করে ফিলিপাইনের প্রশিক্ষণগ্রহণকারী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিরুল ইসলাম এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে বর্তমানে ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। শুধুমাত্র নারিকেল থেকে তেল উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ মাঠ ফসল ছাড়াই দেশের মোট চাহিদা পুরণ করে আরো প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন শুধুমাত্র নারিকেল থেকে উৎপাদিত ভোজ্য তেল রফতানী করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। সুত্রমতে, নারিকেল ভোজ্য তেলের চাহিদার পুরোটা পুরণ হলে বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে না। উপরন্তু রফতানীও করা যাবে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে নারিকেল তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশে অভ্যাস গড়ে তুললে সয়াবিন তেল পরিহার করবে ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বাংলাদেশে সরিষা, বাদাম, সয়াবিন, তিল, তিসি ও সুর্যমুখী তৈলবীজ ফসল থেকে সাধারণত ভোজ্য তেল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পরমাণু কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট বিভিন্ন তৈলবীজ ফসলের উফসীজাত উদ্ভাবন করেছে। তাতে প্রতি হেক্টরে ১৬শ’ থেকে ২৪শ’ কেজি তৈলবীজ ফসল উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতিতে পরিকল্পিতভাবে উফসী জাতের সরিষা, সূর্যমুখী, তিসি, তিল, সয়াবিন ও চীনাবাদাম ব্যাপকহারে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। মাঠ ফসলের মাধ্যমে উৎপাদিত ভোজ্য তেলের পাশাপাশি যদি নারিকেল তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগানো যায়, তাহলে দেশ বিরাট লাভবান হবে। প্রতি হেক্টর এলাকার নারিকেল থেকে কমপক্ষে ৩ হাজার কেজি ভোজ্য তেল উৎপাদন করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছে।
গবেষণার তথ্য হচ্ছে, নারিকেলের তেলে ৯২ শতাংশ সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড আছে। যার মধ্যে আছে ৫০ শতাংশ লরিক এসিড যা শরীরে মনোলরিন তৈরী করে। যা মাতৃদুগ্ধের মতো পুষ্টিগুণসম্পন্ন। শরীরের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এবং ভাইরাসজনিত রোগ ধ্বংস করে। এটি পরীক্ষিত। নারিকেলের ভোজ্য তেলটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসন্মত। এমনকি কর্মক্ষমতা বাড়ায় হৃদপিন্ডের। অথচ সয়াবিনের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা নারিকলে তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। যার জন্য বাংলাদেশে নারিকেল তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত নারিকেল তেল উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। যার কারণে ভোজ্য তেলের বাজার ক্রমেই আমদানী নির্ভর হয়ে পড়ছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। খাদ্য সামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ ভোজ্য তেল নিয়ে এই তুখলকি কারবার ক্রমাগতভাবে বাড়ছেই। যা থেকে দেশবাসীকে পরিত্রাণ দিতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে নতুন ফর্মুলার বা¯তবায়ন জরুরি বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট সুত্রে জানা গেছে , দেশে বর্তমানে গড়ে প্রতিবছর ৬ লাখ হেক্টর জমিতে ভোজ্য তেল ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। উৎপাদন হয় ৫ লাখ মেট্রিক টন । নারিকেল থেকে ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরণ ছাড়াও এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। নারিকেল গাছ থেকে সুমিষ্ট ডাবের পানি, শাস, জ্বালানী ও ঝাড়–সহ অনেক কিছু ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তেল, খৈল ও দুধ সংগ্রহ করা ছাড়াও ছোবড়ার আঁশ দিয়ে দড়ি ও গুড়া দিয়ে জৈব সার তৈরী করা যায়। নারিকেল অর্থনীতির অন্যতম উৎস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারিকেল গবেষণাগারসহ স¤প্রসারণে রয়েছে বোর্ড। বাংলাদেশে গবেষণাগার ও স¤প্রসারণ বোর্ড গড়ে তোলা হবে বিরাট লাভবান হওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাই সরকারকে বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।