পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের তুর্কি ফার্স্টলেডির চিঠি : রাখাইনে প্রবেশাধিকার চায় কানাডা : ঐক্যের ডাক মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের
মিয়ানমারকে সতর্ক করে দিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এটাই মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির শেষ সুযোগ। এরমধ্যে তিনি সহিংসতা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ না করলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে। মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতিকে তিনি জাতিগত নিধন আখ্যায়িত করেন। গতকাল রোববার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাখাইনে যে জাতিগত নির্মূল অভিযান চলছে, তা এখনই বন্ধ করা না গেলে বিপর্যয় সত্যিই ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার মুখে রাখাইন থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে।
এর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক চিঠিতে মহাসচিব গুতেরেস রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই চিঠিতে মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের মুখে যেভাবে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেন আন্তোনিও গুতেরেস। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানের ফলে আরো ব্যাপক এলাকাজুড়ে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাখাইনের সহিংসতা মানবিক বিপর্যয় হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের তুর্কি ফার্স্টলেডির চিঠি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের স্ত্রী ফার্স্টলেডি এমিনি এরদোগান রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সক্রিয় করতে বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এবং বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের কথা তুলে ধরে চিঠিতে তুর্কি ফার্স্টলেডি লিখেছেন, চলমান মানবিক সঙ্কটে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় তাদের কান বন্ধ করে রেখেছে এবং না দেখার ভান করছে, এটা খুব লজ্জাজনক। ধর্ষণের শিকার অসংখ্য নারী, যাদের শিশু ও স্বামীদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে চোখের সামনে, তাদের দুর্দশার কথা শোনা ছিল ভীষণ কষ্টের। আমি কখনও ওই নারী ও শিশুদের কথা ও বেপরোয়া চাহনি ভুলতে পারব না। প্রাথমিকভাবে আমরা রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার মানবিক সহযোগিতা দিয়েছি।
চিঠিতে এমিনি এরদোগান তুরস্কের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিভিন্ন সময় সহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। রাখাইনে চলমান সহিংসতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার লঙ্ঘণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লিখেছেন, একজন মা, নারী ও মানুষ হিসেবে আমি মনে করি আমাদের উচিত এমন একটি পৃথিবী গড়ে তোলা যেখানে কেউ জাতিগত বা ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হবে না। ফার্স্টলেডি আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বনেতাদের স্ত্রীরা এমন পৃথিবী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এমিনি এরদোগান। এ সময় তার সঙ্গে তুর্কি রাজনীতিবিদন ও দেশটির ত্রাণ সংস্থার প্রধান সফরসঙ্গী ছিলেন। রোহিঙ্গা শিবিরে তিনি ত্রাণ বিতরণ করেন। রাখাইনে প্রবেশাধিকার চায় কানাডা
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কফি আনান কমিশন বাস্তবায়নে গঠিত কমিটির কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কানাডা। পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়ত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার দাবি করেছে জাস্টিন ট্রুডোর দেশ। জাতিসংঘের ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের নীতিকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে দেশটি। টরেন্টোভিত্তিক সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’কে ফোন করে পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চলতি মাসের প্রথমে একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশের মাধ্যমে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছিল, অন্তত ৭০০ বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে কাজ করার সুযোগ দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিল। এবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কানাডায় প্রবেশাধিকার চাইবে কানাডা। তিনি বলেন, মিয়ানমারে কানাডার রাষ্ট্রদূত রাখাইনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে সেখানে কোনও স্বাধীন কমিশনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সা¤প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে স্বাধীনতাকামীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। তখন থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। বিপন্ন মানবতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে সারাবিশ্ব। গত শনিবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমর্থনে দুইটি প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে কানাডাতেও। সেই দুই মিছিলের একটিতে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিলা ফ্রিল্যান্ড মিয়ানমারকে জাতিগত নিধনের দায়ে অভিযুক্ত করেন। বলেন, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের কাছে এটা জাতিগত নিধনই মনে হচ্ছে। আর এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি গর্বিত যে, কানাডীয়রা এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে। ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ জোরদার হওয়ার পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। তবে এইসব তথ্য পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় সংবাদ সংগ্রাহকদের।
ঐক্যের ডাক দিলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্বিচারে নির্যাতনের অভিযোগে যখন সারাবিশ্ব সোচ্চার তখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হেই তার দেশবাসীকে ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারবাসীকে এক হতে হবে আর তা হচ্ছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের কেউ নয়, তাদের কোনো ভিত্তি বা শিকড় দেশটিতে নেই। রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করছে তার সেনাবাহিনী এ অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেন জেনারেল মিন।
জেনারেল মিনের অভিমত, রাখাইন প্রদেশে তাদের ‘উচ্ছেদ অভিযানের’ উদ্দেশ্য হলো ২৫ আগস্ট যেসব রোহিঙ্গা ‘বিদ্রোহী’ পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া। তাদের এই অভিযানে অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। আর এই সহিংসতা থেকে বাঁচতে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। পালিয়ে আসা শরণার্থীরা জানাচ্ছে, সেনাবাহিনীরা তাদেরকে হত্যা করছে ও তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এই অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থান বহু সময় ধরেই ব্যাপক আলোচিত বিষয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের অনেকেই এই সংখ্যালঘু মুসলিম স¤প্রদায়টিকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে। এমনকি তাদেরকে রোহিঙ্গা বলেও স্বীকৃতি দেয় না। তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের পরিচয় বাঙালি।
মিয়ানমার সেনাপ্রধান, জেনারেল মিন অং হেই অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত শনিবার এক পোস্টে বলেন, মিয়ানমারে কখনো কোন জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে না থাকা সত্তে¡ও তারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি চেয়েছে। জাতীয় স্বার্থের কারণে এই বাঙালি ইস্যু নিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে আমাদেরকে একত্রিত হতে হবে। পুরো বিশ্বজুড়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই নৃশংস অভিযানের সমালোচনা করা হচ্ছে, নিন্দা জানানো হচ্ছে। মিয়ানমারের কার্যত বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চির হাতে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। তবে সামরিক বাহিনীর এই অভিযানের প্রতি নিন্দা প্রকাশ না করায় তিনিও সমালোচিত হয়েছেন ব্যাপকভাবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) এই নোবেলজয়ী দেশনেত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশবাসীর কাছে বক্তব্য রাখবেন। অনেকের ধারণা এই বক্তব্যে তিনি এতদিন কেন এই ইস্যুতে চুপ ছিলেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে এবং ‘রোহিঙ্গামুক্ত মিয়ানমার’-এর ঘোষণা দিতে পারেন।
এদিকে রাখাইন প্রদেশের এই নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মিয়ানমারে এক দূত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই মার্কিন দূত হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি সহকারী সচিব প্যাট্রিক মার্ফি। তিনি মিয়ানমারের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন ও রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করবেন। তবে রাখাইনের আরও উত্তরে, যেখানে সংঘর্ষ বিদ্যমান সেখানে যাবেন না। মিয়ানমারে ৫০ বছর ধরে চলা সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এখনও দেশটিতে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। দেশটির সীমান্ত রক্ষা, প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ও ডেইলি সাবাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।