Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিলিস্তিনিদের বিভীষিকাময় স্মৃতি

সাবরা-শাতিলা গণহত্যার ৩৫ বছর

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


বৈরুতের সাবরা-শাতিলা উদ্বাস্তু শিবিরে ফিলিস্তিনি গণহত্যার এবার ৩৫ বছর পূর্তি হল। সে ভয়ঙ্কর গণহত্যা থেকে যারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন সে হত্যা, ধ্বংস-রক্তস্রোতের বিভীষিকাময় স্মৃতি আজো তাদের তাড়িয়ে ফেরে। খবর মিডল ইস্ট মনিটর ও আল জাজিরা।
১৯৮২-র জুনে ইসরাইল লেবাননে আগ্রাসন চালানোর পর ইসরাইলের মিত্র সাউথ লেবানন আর্মি (এসএলএ) ও লেবাননের ডানপন্থী ফ্যালাঞ্জিস খ্রিস্টানরা ইসরাইলের সহায়তায় সাবরা-শাতিলা উদ্বাস্তু শিবিরে হামলা চালায়। তারা শিবিরের ফিলিস্তিনিদের নির্বিচার হত্যা, পরিবারের সামনে নারীদের ধর্ষণ ও গর্ভবতী মহিলাদের লাঞ্ছিত করে।
১৯৮২ সালের ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর বর্বর ইসরাইলি ও খ্রিস্টানরা এ হত্যাকান্ড চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এক বর্গ কি মি আয়তনের সাবরা-শাতিলা শিবিরের অবস্থান পশ্চিম বৈরুতে। এটি লেবাননের ১২টি ফিলিস্তিনি ক্যাম্পের একটি।
হত্যাকান্ড শুরুর আগের রাতে ইসরাইলের তৎকালিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরিয়েল শ্যারন পরিকল্পিত এ হত্যাকান্ড যাতে নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয় সে জন্য ইসরাইলি বাহিনীকে গোটা উদ্বা¯ুÍ শিবির ঘিরে রাখার নির্দেশ দেন। ফলে আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম রক্তপাত ঘটানোর পথ মসৃণ হয়। তারপর ইসরাইলি সৈন্য ও খ্রিস্টান মিলিশিয়ারা রক্তের নেশায় মেতে ওঠে।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদলুর সাংবাদিক এ সপ্তাহে সাবরা-শাতিলা পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে বাস করা প্রাণে রক্ষা পাওয়া কয়েক জন মানুষের কাছে সেদিনের পৈশাচিক বর্বরতার স্মৃতিচারণ শোনেন। এখানে বর্তমানে ১২ হাজার লোক বাস করে।
৫০ বছর বয়স্কা আমল আল-কিরমি সেদিনের এক প্রত্যক্ষদর্শিনী। সেদিন তিনি ছিলেন ১৫ বছরের কিশোরী। সাদ হাদ্দাদের কুখ্যাত মিলিশিয়া বাহিনী শিবিরে হামলা শুরুর আগেই তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বিস্তৃত শিবির এলাকার পূর্ব দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
লেবাননের সেনাবাহিনীর এক সাবেক মেজর সাদ হাদ্দাদ সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় দক্ষিণ লেবাননে ৪শ’ সদস্যের এক মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। লেবাননে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়ার ঘোর বিরোধী প্রচন্ড ফিলিস্তিনি বিদ্বেষী সাদ তার বাহিনীর নাম দেন এসএলএ এবং তিনি ইসরাইলের সাথে জোট গঠন করেন।
কিরমি বলেন, এসএলএ মিলিশিয়াদের সাথে ফ্যালাঞ্জিসরাও এ হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। তিনি বলেন, তারা আমাদের সাথে চালাকি করে। তারা লাউড স্পিকারে ঘোষণা করে যে যারা শিবির ছেড়ে যাবে তাদের ফিলিস্তিনে নিজ বাড়িঘরে ফিরে যেতে দেয়া হবে। ইসরাইল ও তাদের লেবাননী মিত্রদের এ কথায় শিবিরের ফিলিস্তিনিদের অনেকেই বিশ^াস করে। শিবিরবাসীরা যখন তাদের কথা শুনল তখন তাদের হামলা ও হত্যা করা হয়।
তখন যার বয়স ছিল ১০ বছর, এখন ৪৫ বছরে পৌঁছা মোহাম্মদ আল হাসানাইন তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, এক ইসরাইলি সৈন্য ও দু’ খ্রিস্টান মিলিশিয়া এক গর্ভবতী নারীর পেট কেটে ভ্রƒণ বের করে এনে একটি দেয়ালের উপর রেখে দেয়। তিনি বলেন, বিস্ময়কর ব্যাপার যে আমাদের কয়েকজন পালাতে পেরেছিল। তিনি আরো বলেন, তিনদিন ধরে হত্যাকান্ড চালিয়ে খুনি ইসরাইলি ও খ্রিস্টানরা চলে যাবার পর কয়েকমাস পরও শিবিরে দুর্গন্ধ ছিল।
৬৭ বছর বয়স্ক সাইদ আল-কাসিম বলেন, তার বয়স তখন ৩২। তিনি হালকা অস্ত্রসজ্জিত ২০ জনেরও বেশি তরুণকে নিয়ে শিবিরের লোকদের রক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, মাদক ও পিল খেয়ে নেশা করে আসা খ্রিস্টান মিলিশিয়ারা সেদিন যে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছিল তার কোনো নজির নেই। তিনি এ হত্যার জন্য আংশিক ভাবে শিয়া আমল মুভমেন্টকেও দায়ী করেন। কারণ, ঐ অঞ্চলে সে সময় সুন্নী-শিয়া উত্তেজনা চলার প্রেক্ষাপটে শিয়া আমল আন্দোলন ইসরাইলিদের শিবিরে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।
সাবরা-শাতিলা গণহত্যার জন্য উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ৫৫ বছর বয়স্ক সাইদ আল-আমরি বলেন, বাদিদের অধিকাংশকে মামলা তুলে নেয়ার শর্তে ইউরোপে আশ্রয় দেয়া দেয়া হয়।
১৯৮৩ সালে ইসরাইল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন এ হত্যাকান্ডের জন্য অ্যারিয়েল শ্যারনকে ব্যক্তিগত ভাবে দায়ী করে। বিশ্লেষকরা বলেন, মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ৩৫ তম বার্ষিকী এ কথাই মনে করিয়ে দেয় যে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ জন্য ইসরাইলকে দায়ী করতে এবং ফিলিস্তিনি মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে সাবরা-শাতিলার পর ইসরাইলের সামরিক বাহিনী তাদের যুদ্ধাপরাধ অব্যাহত রেখেছে। যেমন গাজা। গত এক দশক ধরে ইসরাইল গাজায় ধ্বংস ও হত্যা চালাচ্ছে এবং অবরোধ করে রেখেছে। অযৌক্তিক ও মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে তারা হত্যা করেছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে। গাজায় যখন তখন তারা হামলা চালায়। এ জন্য তাদের ইমপিউনিটি দেয়া হয়েছে।



 

Show all comments
  • ইবরাহিম ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ৬:৫০ পিএম says : 0
    দু'চোখ দিয়ে চেয়ে আছি তার দিকে যার হাতে আল্লাহ মুক্তির ঝান্ডা দিয়ে আমাদের সাহাজ্য করবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিলিস্তিনি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ