রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সংসদ নির্বাচন হয় না, নেতারা ব্যস্ত ঠিকাদারিতে
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা নগরীর তিনটি সরকারি কলেজ ও একটি বেসরকারি কলেজে ২০বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে যোগ্য নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না তেমনি ক্রীড়া সাংস্কৃতিক ও কলেজের কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে গতিশীলতা আসছে না। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কমিল্লা সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় ছাত্র সংসদ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক রাজনীতিতে নেই সুবাতাস। কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চা না থাকায় ছাত্রনেতারা অবসর সময়ে ঠিকাদারি বা অন্য পেশায় ব্যয় করছে। অন্যদিকে ছাত্র সংসদ না থাকায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া এবং অধিকারের বিষয়টিও থাকছে উপেক্ষিত।
কুমিল্লাভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ১৯৯৭ সালের ২০ মে ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির নিয়ে গঠিত ছাত্রঐক্য পরিষদ থেকে ছাত্রদলের আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম ভিপি ও জিএস পদে ছাত্রশিবিরের সানাউল্লাহ মজুমদারসহ পরো প্যানেল জয়লাভ করেছিল। ১৯৯৮ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। কুমিল্লা সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ৩১ অক্টোবর। ওই নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে কামরুল হাসান শাহিন ভিপি ও আতিকুর রহমান খান পিন্টু জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত ছাত্র সংসদের এক বছর মেয়াদ শেষ হবার পর আর নির্বাচন হয়নি। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ১৯৯৬ সালে ছাত্রী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রদলের ঝংকার ও জিএস পদে কাজী নাজমা নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আর আগের ছাত্রীনেত্রীদের পথ ধরে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্র রাজনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় কোন নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা অজিতগুহ কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ৯৪ সালে। এক বছর মেয়াদ শেষে ৯৬ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন ঘিরে কলেজ ভবনে একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই নির্বাচন বন্ধসহ কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
কলেজগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে এবং ছাত্র রাজনীতিকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় কুমিল্লার সবকটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা। দীর্ঘ ২০বছর ধরে পর্যায়ক্রমে ছাত্র নেতারা ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজগুলোতে ছাত্রসংসদ না থাকায় সবাই নেতাগিরি দেখায়। মান্যতা উঠে গেছে, তাই মারামারি, সংঘর্ষ হচ্ছে। ছাত্রসংসদ থাকলে নেতৃত্বের জায়গা ঠিক থাকতো, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ হতো, শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেতো। কিন্তু ছাত্রসংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার প্লাটফর্ম হারিয়ে গেছে। কেবল তাই নয়, ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক গনতন্ত্রচর্চা, মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, একে অন্যের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শিক্ষা কার্যক্রমে মুক্ত আলোচনার জায়গাটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দলের ছাত্র নেতারা বলেন, ছাত্রসংসদ না থাকায় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক সুস্থধারার রাজনীতিতে চরম নেতৃত্বশুন্যতা দেখা দিয়েছে।
কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতার সঙ্গে এবিষয়ে কথা বললে তারা জানান, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবী আদায়ে ছাত্র সংসদের কোন বিকল্প নেই। ছাত্রদের অপরাজনীতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ছাত্র সংসদ না থাকা। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যে সুবাতাস বয়ে যাওয়ার কথা সেখানে দেখা মিলছে উল্টোচিত্রের। অধ্যয়নরত ছাত্রনেতাদের অনেকেই ঠিকাদারি বা লেজুড়ভিত্তিক পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তাই কলেজগুলোতে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। ছাত্র সংসদ চালু থাকলে ছাত্রনেতৃত্বে সঠিক ও মেধাবীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে এবং একসময় এসব নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।