Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সৈয়দপুরে ২ ঘণ্টার কলার বাজার

| প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : সূর্যের প্রথম আলোর ছটা তখনো পড়েনি। আবছা আলো- আধারের খেলার মুহুর্তে সৈয়দপুরে ব্যস্ততম সড়কের দুই ধারে ভোরের ভ্রাম্যমান কলার বাজারটি জমে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মহামিলনের সামান্য ক্ষণের এ বাজারটি সকলের কাছে ভিন্ন গ্রহন যোগ্যতা পেয়েছে। তবে স্থায়ী বাজার না হওয়ায় বর্ষায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সমস্যা নিরসনে তাই স্থায়ী কলার বাজার নির্মাণের দাবি কলা ব্যাবসায়িসহ সচেতন মহলের। এতে সৈয়দপুরের ভোরের এ বাজারটি উত্তরের কলার ভান্ডারে পরিণত হবে।
জানা যায়, ১৯৮০ সালে এ শহরের প্রান কেন্দ্র পাঁচ মাথা মোড়ের রিক্সা ষ্টান্ডে দিনের প্রথম প্রহরে ব্যাবসায়িরা তাদের সংগৃহিত কলা নিয়ে এসে পাইকারি দরে বিক্রি করত। এভাবে দিনের বেলায় কলা ক্রেতা-বিক্রেতা, পথচারি,রিক্সাচালক একই জায়গায় অবস্থান করায় প্রচন্ড জানজট সৃষ্টি হত। পরে এটি নয়াবাজার সড়কটির দুই ধারে স্থানান্তরিত হয়। ২০০০ সাল থেকে এ বাজারটি চালু হয় ভিন্ন নিয়মে। কলা ব্যবসায়িরা স্ব-উদ্যগে এ বাজারটির সময় নির্ধারন করে অতি ভোরে তাদের কলা ক্রয়-বিক্রয় শুরু করে। এতেই এ বাজারটি উত্তরাঞ্চলে আলাদা বাজারের রুপে পরিচিতি লাভ করে।
গতকাল ভোরে সরেজমিন ওই পাইকারি কলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর শহরের গোয়ালপাড়া-নয়াবাজার দিনের ব্যস্ততম সড়কটিতে ১শত গজে ঊভয় দিকে সারিবদ্ধ ভাবে প্রায় দেড় শতাধিক কলা বিক্রেতা খোলা আকাশের নিচে তাদের টুকরি নিয়ে বসে আছে। সবুজ আর হলুদ বর্ণের কলায় ভাসছে বাজারটি। মেহের সাগর, হাইব্রিড সাগর, দেশি সাগর, চিনিচম্পা ,মালভোগসহ বিভিন্ন ধরনের কলায় টুকরি ভর্তি। অনেকের কাছে ক্রেতারা দর হাকাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে ৮০ গন্ডায় এক পোন হিসেবে দর বনি-বনায় হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়। মাত্র দুই ঘন্টার ব্যাবধানে এ বাজারের লেনদেনের সমাপ্তি টেনে ক্রেতা-বিক্রেতা একসাথে তৃপ্তির হাসি নিয়ে ফিরছে। আর সকাল ৮ টায় দেখা যায়, এখানে যে বাজার লেগেছিল তার কোথাও কোন চিহ্ন নেই।
এ বাজারের পাইকারি কলা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, দির্ঘ দুই যুগ ধরে এ বাজারে কলা নিয়ে আসছি। বর্ষায় খোলা আকাশের নিচে কিংবা এ বাজারের সামনে মোকামের ভিতর কলা বেচতে হয়। এতে বাজার ব্যবস্থাপনাগত সুযোগ সুবিধা না থাকায় ওই সময় দুরের ক্রেতারা আসে না। ওই মৌসুমে লোকসানে পুজি হারিয়ে যায়। তবে সড়কে দোকান হলেও ভোরে হওয়ায় যানজটের কোন ভয় নেই। এতে নির্বিঘেœই কলা বিক্রি করছি। তবে বিক্রি শেষে অবশিষ্ট কলা অন্যর দোকানে রেখে যাই। আর কলা পাকার ব্যবস্থাপনাগত সুবিধা না থাকায় প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়।
ইমদাদুল, খলিল, বাবু, বখতিয়ারসহ সকল ব্যবসায়িরা একই মত প্রকাশ করেন। তারা আরো জানান, এ বাজারের কলা সৈয়দপুর সেনা নিবাস, হাসপাতাল ও স্থানিয় চাহিদা পুরনের পর ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারীসহ উত্তরের প্রায় আট জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারের ব্যাবসায়িরা নিয়ে যায়। আর দর কম থাকায় দিন দিন বিভিন্ন এলাকার নতুন নতুন ক্রেতা বাড়ছে। তবে মাথার ওপর ছাউনিসহ একটি স্থায়ি বাজারের ব্যবস্থা হলে এর সরবরাহ আরো বাড়বে। আর কলা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ পেশায় বেশি ব্যাবসায়ি ঝুকবে।
ঠাকুরগাঁও সদর এলাকার ব্যবসায়ি মোঃ সফিকুল জানান, মোবাইলে যোগাযোগ করে কলা কেনা গেলেও। বাজারের চাহিদা বেশি থাকলে দাম বেড়ে যায়, আবার সরবরাহ বাড়লে দাম কমে। তবে অন্যন্য বাজারের চেয়ে এ মার্কেটে কলার বাজার মুল্য তুলনামুলক কম।
সাশ্রয় মুল্য আর বিক্রেতাদের আন্তরিকতাসহ তাই নানা কারনে এ বাজারটির এ ব্যবসায়িসহ উত্তরের বিভিন্ন জনপদের ব্যবসায়িরা এ বাজারের নিয়মিত ক্রেতা। তাদের দির্ঘদিনের আনাগোনায় বাড়ছে এ বাজারের কলার ব্যবসা। তবে ব্যবস্থাপনাগত সুবিধা অভাব ও খোলা আকাশের নিচে ভ্রাম্যমান এ ভোরের বাজারটির অস্তিত্ব অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানিয় ব্যবসায়িসহ বাইরের ক্রেতাদের দাবি আধুনিক না হোক অন্তত এর স্থায়ি রুপদানে স্থানিয় কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
কলা ব্যবসায়ীদের দাবী, স্থায়ী ভাবে সেট নির্মাণসহ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করলে অন্যন্য ব্যবসার পাশাপাশি কলা ব্যবসাতেও উত্তরের এ জনপদ নেতৃত্ব দেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ