Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাধা দেয়ায় সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় যাওয়ার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় রিলিফ টিমকে সরকার কক্সবাজারের উখিয়ায় যেতে দিচ্ছেনা। ত্রাণের ২০টি ট্রাক ও নেতৃবৃন্দকে আটকে দিয়েছে প্রশাসন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে এই সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তারা যে বলছেন তারা এই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটা শুধু আইওয়াশ বলে প্রমাণিত হচ্ছে। যদি দাঁড়াতেন তাহলে তারা আজকে বিএনপির রিলিফ টিমকে উখিয়ায় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে বাধা দিতেন না। সেইসাথে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় নিয়ে সংসদে আলোচনার প্রস্তাব সংসদকে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ দাঁড় করানো হিসেবে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল। গতকাল (বুধবার) বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার মধ্যে এই খবর পেয়ে তা উপস্থিত সবাইকে এসব কথা বলেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে তারেক রহমানের দশম কারামুক্ত দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই মাত্র আমাদের কাছে খবর এসেছে কক্সবাজারে আমাদের যে কেন্দ্রীয় রিলিফ টিম ২০টি ট্রাক নিয়ে গিয়েছিল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে। তাদেরকে উখিয়াতে প্রশাসন যেতে দিচ্ছে না, পুলিশ ট্রাক আটকে দিয়েছে। সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ বিতরণের একদিন বাদেই বিএনপির প্রতিনিধি দল যাত্রা করে উখিয়ায়। ফখরুল বলেন, শুধু তাই নয়, কক্সবাজারে আমাদের বিএনপি অফিস পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আমাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অফিস ঘরে আটকা পড়ে আছেন। তিনি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দলকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে প্রশাসনের প্রতি আহŸান জানান। কয়েক মাস আগে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ নিতে যাওয়ার সময় বাধা পেয়েছিল মির্জা ফখরুল নেতৃত্বাধীন বিএনপি প্রতিনিধি দল।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে (বুধবার) সংসদে একটি প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এটা সুনির্দিষ্টভাবে পার্লামেন্টকে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো। আমরা এর ঘোরতর নিন্দা জানাচ্ছি। এভাবে বিচার বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করে, প্রধান বিচারপতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে, বিচারপতিদের হেয় প্রতিপন্ন করে আজকে রাষ্ট্রের মূলভিত্তিকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই রাষ্ট্রকে তারা সত্যিকারভাবে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্্র হিসেবে রাখতে চায় না। তারা চায় পুরোপুরিভাবে একটা পরনির্ভরশীল দূর্বল জাতি হিসেবে রাখতে। রোহিঙ্গাদের মাঝে বিএনপির ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে কেন্দ্রীয় রিলিফ টিমকে বাঁধা প্রদানের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আমাদের উচ্চ পর্যায়ের টিমকে আটকে দেয়া হয়েছে কক্সবাজারে। ধিক্কার দেই আপনাদেরকে, ঘৃণা প্রকাশ করি যে, আপনারা ত্রাণের মতো মহৎ কাজ পর্যন্ত করতে দেননা। আমার প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর কাছে, সরকারের কাছে। আপনি যে গতকাল (মঙ্গলবার) কক্সবাজারে উখিয়ায় গিয়ে ওই রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিলেন। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্নভাবে লেখা হলো প্রধানমন্ত্রী কাঁদলেন, কাঁদালেন। আজকে এই যে ২০-২২ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে আমাদের নেতারা গেলেন, তারা তো অন্তত ৪/৫ হাজার অসহায় ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গাদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে পারতেন। সেই খাওয়া থেকে ও খাদ্য থেকে তাদেরকে কেনো আপনি বঞ্চিত করলেন? আসলে উদ্দেশ্য একটাই আপনারা তো ত্রাণ দেয়া লোক দেখানো করছেন, আপনারা মানুষদের বাঁচানোর জন্য করছেন না।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) টেলিভিশনে দেখছি বেশিরভাগ রোহিঙ্গা অভুক্ত। একটামাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দেখছি তারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। সরকার চিকিৎসা কেন্দ্র খুলেছে কিনা আমি জানি না। এখন পর্যন্ত কোনো ছাউনি তৈরি হয়েছে কিনা তার নিচে তারা বাস করছে। আমরা দেখেছি উন্মুক্ত আকাশের নিচে তারা বৃষ্টি বাদলের মধ্যে দুঃস্থ-দূর্বল শিশুদের নিয়ে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় ত্রাণ টিমকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার দাবিও জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে আমাদের রিলিফ টিমকে যেতে দেয়া হলো না? কেনো এই বাঁধা। আজকে কারা রাজনীতি করছে? আওয়ামী লীগ রাজনীতি করছে, বর্তমান সরকার রাজনীতি করছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে আসলেন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক আকাশচুম্বি। তিনি যখন ভারতে গেলেন তখন বলেছিলেন ভারতের সাথে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক হিমালয় প্রমাণ উচ্চ। আজকে রোহিঙ্গার মতো মানবিক ইস্যুতে চীন ও ভারত বাংলাদেশের পাশে নেই। তারা মিয়ানমারের পাশে আছে, যারা খুন করছে, জেনোসাইড করছে তাদের পাশে আছে। তাই এতো প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন আজকে প্রমাণিত হয়েছে উনি দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে বিমানে কক্সবাজার রওনা হয় বিএনপির প্রতিনিধি দল। মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে এই দলে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, শফিউল বারী বাবু, নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ। দলের প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ