বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : কুমিল্লায় সীমান্ত পথে ভারত থেকে মাদকদ্রব্য, শাড়ী, থ্রিপিস, কসমেটিকস, শিশুখাদ্য ও অস্ত্র চোরাচালান মুড়িমুড়কির মতো আসছে। আর ওপেন সিক্রেট হয়ে উঠেছে কুমিল্লা থেকে ভারতমুখি স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টি। ভ্যাট আরোপের কারণে ভারতে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চোরাইপথে ও বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে বৈধপথেই কুমিল্লা থেকে স্বর্ণ যাচ্ছে ওপাড়ে। এপাড়-ওপাড়ের পাচারকারিরা স্বর্ণ, অস্ত্র, মাদক ও অন্যান্য পণ্য পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত।
কুমিল্লা অঞ্চলে বিজিবির ‘জিরো টলারেন্স’ দমাতে পারছে না সীমান্তের চোরাচালান। কুমিল্লায় দু’শতাধিক চোরাকারবারি সীমান্ত এলাকায় ২০টিরও বেশি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাচালান ব্যবসা। এসব চোরাকারবারিদের নামের তালিকা আইন প্রয়োগকারি সংস্থা বছর বছর সংযোজন, বিয়োজন করলেও আটকের খাতায় সিকিভাগের নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ এরা গডফাদার। তাই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকেই চোরাচালান ব্যবসার দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। জানা গেছে, বিজিবি ও পুলিশের তালিকায় চোরাচালান ব্যবসায়িদের মধ্যে যাদের নাম রয়েছে তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে কুমিল্লা সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকেই চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এমন তথ্য রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকদের ছোঁয়া যাচ্ছেনা। কুমিল্লার পাঁচ উপজেলার ৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিজিবির বর্ডার পোষ্ট বা বিওপি রয়েছে ১৫টি। এসব বর্ডার পোষ্টে বিজিবি সতর্কাবস্থানে থাকলেও তাদের ‘জিরো টলারেন্স’ ডিঙ্গিয়ে চোরাচালান থেমে নেই।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, আশাবাড়ি, নয়নপুর, বুড়িচং উপজেলার চড়ানল, বারেশ্বর, সংকুচাইল, রাজাপুর, আদর্শ সদর উপজেলার বিবির বাজার, বৌয়ারা, গোলাবাড়ি, শাহাপুর, শিবের বাজার, সদর দক্ষিন উপজেলার একবালিয়া, তালপট্টি, সুবর্ণপুর, চৌয়ারা, যশপুর, বৌয়ারা, শ্রীপুর, কনেশতলা, দড়িবটগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোমারবাড়ি, আমানগন্ডা, ছফুয়া, জগন্নাথদিঘি, গোলপাশা, বসন্তপুর, সাতবাড়িয়া, কাইচ্ছুটি ও পদুয়া সীমান্ত পথে ভারত থেকে মদ, ফেন্সিডিল, বিয়ার, গাঁজা, হেরোইন, পিস্তল, রিভলবার অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে কুমিল্লায় আসছে। এছাড়াও শাড়ি, থানকাপড়, থ্রীপিস, প্যান্ট, শার্ট, স্যুয়েটার, শাল, চাদর, মসলা, গুড়োদুধ, চকোলেট, বিস্কুট, আঁতশবাজি, কসমেটিকস, মটরসাইকেল পার্টস, গাড়ীর যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্তপথে চোরাচালান হয়ে এখানে আসছে। ভারত সীমান্ত থেকে চোরাচালান পণ্য এখানে আসার পর তা নির্বিঘেœ চোরাকারবারিদের হাতে পৌঁছানোর জন্য সীমান্তে লাইনম্যানও নিয়োজিত থাকে। আবার এসব চোরাকারবারিদের হাত ধরে অবৈধভাবে সীমান্ত পথে স্বর্ণসহ এখানকার অনেক পণ্য ভারতে চোরাচালান হয়ে থাকে। কেবল অবৈধভাবেই নয়, বৈধ পাসপোর্টধারি স্বর্ণ চোরাকারবারিরা কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়েও কৌশলে স্বর্ণের বার বা গলানো স্বর্ণ ভারতে নিয়ে যাচ্ছে।
সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় সীমান্ত এলাকার অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে স্বর্ণ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের কাজে। এদিকে পাচারকারিরা বিভিন্ন সময় রুট পরিবর্তন করে চোরাচালান পরিচালনা করায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের অনেক সময় বেগ পেতে হয়। প্রায় দিনেও টাস্কফোর্স, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, কাষ্টমসের মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমান মাদক, অস্ত্র, চোরাচালানি পণ্য জব্দ হচ্ছে। আবার গ্রেফতার হচ্ছে পাচারকারিসহ মাদক ও চোরাচালানি ব্যবসায়ি। তবে শত চেষ্টা করেও গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানের গডফাদারের নাম বের করতে পারেনা আইন শৃংখলা বাহিনী। অন্যদিকে কুমিল্লা থেকে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে কুমিল্লার স্বর্ণ ব্যবসায়িদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।