পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বার্মিজ সেনাবাহিনীর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সারাবিশ্ব যখন তোলপাড়; তখন স্ত্রীকে নিয়ে মিয়ানমারে চাল কিনতে যান খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। চাল ক্রয়ের চুক্তিও করেন। সংসদে জানান মিয়ানমার থেকে চাল বাংলাদেশে পৌঁছাতে মাত্র ৩ দিন সময় লাগে। তারপরও চালের দাম কমা দূরের কথা স্থিতিশীল হচ্ছে না।
খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করা হলেও চালের মূল্য ক্রমান্বয়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। চালের দাম কমানোর লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে বিদেশ থেকে আমদানীর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানীর জন্য শুল্ক কমানো হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল শুল্ক কমানোয় চালের দাম কমবে; কিন্তু হয়েছে উল্টো। মোটা-চিকনসহ সব ধরনের চালের দাম এ সাপ্তাহে আরো এক ধাপ বেড়েছে। প্রতি কেজি মোটা ও চিকন চালে মানভেদে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
শুল্ক কমলে চালের দাম কমবে- ব্যবসায়ীদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আমদানি বাড়াতে গত ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। আবার ১৭ আগস্ট আমদানি শুল্ক আবার কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। ২৬ শতাংশ শুল্ক কমানোয় কেজিতে চালের দাম কমে যাওয়ার কথা প্রায় ৬ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ক্রেতারা এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না। শুল্ক কমানোয় চালের আমদানি বেড়েছে। কিন্তু তা মূলত আতপ ও ভারতীয় মোটা চাল। সরু ও মাঝারি চাল আমদানি হচ্ছে কম। এর সুযোগ নিচ্ছে দেশের মুনাফাখোর মিল মালিকেরা। পাশাপাশি একটি আমদানিকারক চক্রের কারসাজিতে চালের বাজার দর হয়েছে ঊর্ধ্বমুখি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঈদের পনের দিন আগে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা চালের কেজি (ইরি/স্বর্ণা) ৩৯ টাকা হলেও বর্তমানে তা ৪২ টাকা, বি আর-আটাশ চালের কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৪৮ টাকা, মিনিকেট চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকায়। বর্তমানে রাজধানীর খুচরাবাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, বি আর-আটাশ ৫০ থেকে ৫৪ টাকায়, মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদুল আজহার পর রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের মধ্যেই চাল আমদানি করতে মিয়ানমার সফরে যান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতে জিটুজি পর্যায়ে চাল-গম কেনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশে যেতেন। এখন খোদ খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে টিমগুলো বিদেশে যাচ্ছে চাল কিনতে। খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চাল-গম কেনার নেগোসিয়েশন মিটিং-এ মন্ত্রী চাইলেও উপস্থিত থাকতে পারেন না। কারণ কোনো দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী ওই সব মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না। এ অবস্থায় মন্ত্রী চাল-গম কিনতে বিদেশ সফরে গেলেও তাদের কিছু করার থাকে না। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমার সফর করে এসেছেন। খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ সফরে এই দলে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক তোফাজ্জেল হোসেন, মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও মন্ত্রীর স্ত্রী। কথা ছিল মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হবে। তবে লক্ষ্য অর্জন হয়নি। মন্ত্রী নিজেই রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ৩ লাখ টন চালের চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১ লাখ ২০ হাজার টন চাল পাবো। মিয়ানমার থেকে চাল আসতে মাত্র তিন দিন সময় লাগে বলেও সংসদে জানান খাদ্যমন্ত্রী। সংসদকে মন্ত্রী জানান, দেশে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই আছে। কোনো রকম বাড়তি দাম নেই।
সূত্রমতে, দেশে বছরে চালের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন। এরমধ্যে বোরো মৌসুমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরোর উৎপাদন কম হয়েছে। সরকারি গুদামে চালের মজুত গত ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। সরকারি গুদামে বর্তমানে চাল রয়েছে প্রায় দুই লাখ টন। গত বছর একই সময়ে মজুদ খাদ্য ছিল ৯ লাখ ৭ হাজার ১২ টন। অথচ ২০১১ সালের এই দিনে চালের মজুত ছিল প্রায় দশ লাখ টন। ২০১২ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩ সালে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৪ সালে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির যে সিদ্ধান্ত নেয় তার বেশির ভাগই চলে এসেছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন চাল আসবে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি অর্থ বছরে মোট ১৫ লাখ টন চাল আসবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তিনটি দেশ থেকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় বলা হয়, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড প্রতিটি দেশ থেকে বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এখনো পর্যন্ত থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া থেকে এক টন চালও জিটুজিতে আমদানি হয়নি। বরং খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাল ও গম কেনা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এরই মধ্যে চাল ও গম কিনতে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করার পর ভারত থেকে কম শুল্কে চাল আমদানি হয়েছে; অথচ বাজারে চালের দাম বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় চাল কার্যত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।