Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন জাতীয় সঙ্কটে রূপ নিয়েছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে তা নিয়ে বিএনপি কোন রাজনীতি করতে চায় না। আমরা চাই, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এ সঙ্কট মোকাবিলা করতে। গতকাল (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদেরকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে বলছি না। তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হোক। এরই মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে হবে তাদের ফিরিয়ে নিতে। এছাড়া বিএনপি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা বলে বিএনপির অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিশ্ব বিবেক রোহিঙ্গা ইস্যুতে যখন জাগ্রত তখন সরকার কোনো প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। রোহিঙ্গাদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে। তাদের ওপর নিপীড়ন শুরুর পরপরই আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়েছেন। গোটা বিশ্ব সোচ্চার। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার কোনো কথাও বললোনা। আজ মানুষ মরছে, শিশু মরছে। পথে সন্তান প্রসব করছে মা। আমরা যখন কথা বলতে শুরু করেছি। তখন তারা বলতে শুরু করেছে, আমরা নাকি রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি করছি। একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই- রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা কোনো রাজনীতি করতে চাই না। এই সঙ্কটের সমাধান আমরা জাতীয়ভাবে মোকাবিলা করতে চাই। যেমন ১৯৭৮ সালে প্রেসিন্ডেন্ট জিয়াউর রহমান টেকনাফে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিলেন।
তিনি আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, দেশের মানুষ যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি নির্বাচনের জন্য। সেই নির্বাচনী আওয়াজ শুনতে পেরে সরকার তাদের লোকেরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের বন্দি করে নির্বাচনী কৌশল এখন থেকেই গ্রহণ করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তা কখনো মেনে নিবে না। জনগণ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যারা বিষোদগার করছেন তারা নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখুন। বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী নেত্রী হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। এসময় তিনি দলের নেতাকর্মীদেরকে আরো বেশি সুসংহত এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানান।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাদেশেও গণতন্ত্রকামীদেরকে নির্মূল করা হচ্ছে। যারা গণতন্ত্র ও সত্যের পক্ষে কথা বলে এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদেরকে নির্মূল করে দিচ্ছে একের পর এক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে। এ নির্বাচন এত সহজে আদায় হবে না। কারণ জনগণ স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। তাই কঠোর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহŸান জানান।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তির মাধ্যমেই মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে হবে। যাতে রোহিঙ্গারা স্বসম্মানে ফিরে গিয়ে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব পান।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিস্কার করার আহŸান জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেরিতে হলেও সরকারের কয়েকজন রোহিঙ্গাদের দেখতে যাচ্ছেন। ভালো কথা, কিন্তু আমরা জানি না তারা সেখানে কী করবেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই- আগামী দিনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে দেশের জনগণ সেই নির্বাচন মেনে নেবেন না। হতে দেবে না।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটি জাতিগোষ্ঠিকে নিধন করা। এ বিষয়ে সমগ্র বিশ্ব জাগ্রত হলেও বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে চুপ করে আছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার বলছে তারা সন্ত্রাস দমন করছে। আওয়ামী লীগ সরকারও বলছে রোহিঙ্গারা অস্ত্র নিয়ে আসতে পারে। এদের মাধ্যমে জঙ্গি আসতে পারে। একটি কথা স্পষ্ট- মিয়ানমার সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কথা বলার সুর একই। কারণ বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গির কথা বলে রাজনীতিকে ঘোলা করে ফের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গোটা বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সোচ্চার হলেও সরকার নানাভাবে এই বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়ার টালবাহানা করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়ঙ্কর নারকীয় তান্ডব চলছে। মানুষের রক্তে নাফ নদীর রক্ত লাল হলেও সরকার নির্বিকার। তিনি বেগম জিয়া প্রসঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আজো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তাকে ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা। অনুষ্ঠানে প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আতাউর রহমান ঢালী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কামরুজ্জামান রতন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ