Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চলচ্চিত্রের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে সোনাবন্ধু

বিনোদন ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবারের ঈদে তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম সুমন পরিচালিত সোনাবন্ধু সিনেমাটি রয়েছে। মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে এখন। ঈদে সাধারণত অন্য সময়ের তুলনায় সিনেমা ব্যবসা করে বেশি। এ সময় বিনোদনের জন্য দর্শক হলমুখী হয়। নির্মাতারাও চেষ্টা করেন দর্শকের মন মতো সিনেমা উপহার দিতে। এসব সিনেমা কতটা মনমতো হয়, তা মুক্তির পর ব্যবসায়িক ফলাফল থেকে বোঝা যায়। এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে সোনাবন্ধুর কথা যদি ধরা হয়, তবে বলতে হবে সিনেমাটি ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সিনেমাটির ধরন অনেকটা আশির দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত বেদের মেয়ে জোছনা এবং প্রায় এক দশক আগে মুক্তিপ্রাপ্ত খায়রুন সুন্দরী সিনেমাটির মতো। এ সিনেমা দুটি নির্মাণের পর নির্মাতা রাজধানীর সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি দিতে সাহস পাননি। এর কারণ যদি দর্শক না দেখেন! এ ধারণা থেকে মুক্তি দেন জেলা ও মফস্বলের সিনেমা হলগুলোতে। সেখান থেকে সিনেমা দুটি নিয়ে দর্শকের যে মাতামাতি শুরু হয়, তার ঢেউ রাজধানীতেও এসে লাগে। রাজধানীর নাগরিক শ্রেণীর দর্শক, যারা কদাচ সিনেমা হলে যান, তারাও সিনেমাটি নিয়ে মানুষের উচ্ছ¡াস দেখে চিন্তা করেন, এতে কী এমন আছে, একটু দেখা দরকার। এ চিন্তা করে বহু বছর পর সিনেমা হলে যান। সিনেমাটি দেখে তারা বলতে বাধ্য হন, সিনেমাটি আসলেই উপভোগ্য। খায়রুন সুন্দরীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যবসা সফল সিনেমা হিসেবে বেদের মেয়ে জোছনা এখনো শীর্ষে রয়েছে। অশ্লীল সিনেমার যুগে খায়রুন সুন্দরীও অসাধারণ ব্যবসা ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ প্রসঙ্গ আনার কারণ হচ্ছে, সোনাবন্ধু সিনেমাটিও অনেকটা এরকম। ঈদে ৪০টি সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে এটি চলছে ৬০টি সিনেমা হলে। অর্থাৎ সিনেমাটির চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে রাজধানীর বলাকা ও মধুমিতার মতো অভিজাত সিনেমা হলসহ অন্যান্য সিনেমা হলে চলবে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে সিনেমাটির দর্শক চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ কি? মূলত এ সময়ে এসে আমাদের দেশীয় সিনেমায় লোকজ ও মাটির কাছাকাছি গল্পের সিনেমা তথা আমাদের চিরচেনা সংস্কৃতি নির্ভর সিনেমা হচ্ছে না। মানুষ সাধারণত ব্যতিক্রম পছন্দ করে, তবে এমন ব্যতিক্রম নয় যা আমাদের সংস্কৃতির পুরোপুরি বাইরে। সংস্কৃতির মধ্য থেকেই তারা ব্যতিক্রম খোঁজে। তারা সিনেমার গল্পে নিজের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, চেনা মানুষ খোঁজে। এর সাথে নিজেদের মেলায়। যে নির্মাতা দর্শকের এই মনের মিল সিনেমায় মিলাতে পারেন, তার সিনেমাই সফল হয়। সোনাবন্ধু আমাদের চিরন্তন সংস্কৃতির গল্পে আবর্তিত হয়েছে। এ গল্পের সাথে দর্শক নিজেদের মিলাতে পারছেন। নির্মাতা জাহাঙ্গীর আলম সুমন গল্পের মাধ্যমে এর চরিত্রগুলোকে দর্শকের কাছে আপন করে তুলতে পেরেছেন। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে তরুণ-তরুণীদের প্রেম-বিরহ, সামাজিক দ্ব›েদ্বর মাধ্যমে একটি সুবিন্যাস্ত গল্প দাঁড় করিয়েছেন। জনপ্রিয় অভিনেতা ডি এ তায়েব, পপি, পরিমণিকে দর্শকের চাহিদার চরিত্রের ছাঁচে ফেলে উপস্থাপন করেছেন। ডি এ তায়েবের এটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমা। এতে তিনি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনে তাকে আমরা অনেক নাটক ও টেলিফিল্মে জীবন ঘনিষ্ট চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করতে দেখেছি। তার সরল অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। মনে আছে হতাই নামে একটি টেলিফিল্ম বা নাটকে তার অভিনয় হৃদয়ে দাগ কেটেছিল। তার অসাধারণ অভিনয় মন বিগলিত হয়ে উঠেছিল। সোনাবন্ধু সিনেমাটিতে ডি এ তায়েবের সেই অভিনয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বলা যায়, সরল অথচ নিখুঁত অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রটিকে বহুমাত্রিকতা দান করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি প্রথাগত কোনো নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেননি। তিনি অভিনয় করেছেন একটি বিশেষ ধরনের চরিত্রে যা নায়ক হয়ে উঠেছে। তাকে ঘিরে দুই তরুণীর যে আঁকুতির প্রয়োজন ছিল, পপি ও পরিমণি তা সার্থক করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে পরিচালকের গভীর ও তীক্ষè মনোযোগ ছিল। কারণ মূল বৃক্ষের সাথে যদি তার শাখা-প্রশাখা দৃঢ় না হয়, তবে বৃক্ষের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। ডি এ তায়েব যদি বৃক্ষ হয়, তবে বলতে হবে দুই শাখা পপি ও পরিমণিকে পরিচালক যথাযথভাবে বৃক্ষের সাথে জুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। সিনেমাটি নিয়ে ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রাঙ্গণে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশিষ্টজনদের মুখ থেকে প্রশংসা বাক্য ঝরছে। একটি কথা বলা যায়, সিনেমাটি ধীরে চললেও অন্যান্য সিনেমার মতো থেমে যাচ্ছে না। বরং এর গতি বাড়ছে। এ গতির মাধ্যমেই এটি রেসে জয়লাভ করবে, তাতে সন্দেহ নেই। তার ইঙ্গিত এখন পাওয়া যাচ্ছে। মূল কথা হচ্ছে, এ ধরনের সিনেমা চলচ্চিত্রে অনেক দিন ধরেই অনুপস্থিত। পরিচালক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনেকটা ঝুঁকি ও সাহস নিয়েই চরম মন্দাবস্থার মধ্যে সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছেন। তাদের এ প্রচেষ্টা বিফল হচ্ছে না। দর্শক গ্রহণ করছে। আসলে সিনেমা যতই রংচটা হোক না কেন, শেষ বিচারে দর্শক কিন্তু আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সিনেমাই গ্রহণ করে। সোনাবন্ধু তার প্রমাণ দিয়েছে। আমাদের সিনেমার বাজার যদি ফেরাতে হয়, তবে এ ধরনের সিনেমা আরও বেশি বেশি নির্মিত হওয়া উচিত। এজন্য নির্মাতাদের প্রথাগত এবং তথাকথিত আধুনিক প্রযুক্তির সিনেমার চিন্তা-ভাবনা থেকে সরে এসে নিজস্ব সংস্কৃতির সিনেমার দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। যেহেতু প্রযুক্তির নামে আমরা তার কিছুই করতে পারিনি, তাই গল্প নির্ভর আমাদের পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির সিনেমার দিকেই নির্মাতাদের ঝোঁকা উচিত। সোনাবন্ধু দর্শকের মন জয় করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা আমাদের চলচ্চিত্রের দিকনির্দেশক হতে পারে।



 

Show all comments
  • মনির ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:৫৩ এএম says : 1
    অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:৫৪ এএম says : 0
    সেরকমই হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ