পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতিসংঘসহ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে গোটা বিশ্ব যখন রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবীতে সোচ্চার; তখন একমাত্র ব্যাতিক্রম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মুসলিম বিদ্বেষী খ্যাত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ; স্বেত ভাল্লূকের দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আরাকানের হাজার হাজার বাড়িঘরে আগুন দেয়ায় প্রতিবাদে কোলকাতা যখন উত্তাল; তখন সুচির অতিথি হয়ে মোদী সফর করেন মিয়ানমার। লাল গালিচা সংবর্ধনা নেন। ইসরাইলে অস্ত্র দিয়ে বার্মিজ সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা হত্যা করলেও ইহুদি রাষ্ট্রটি ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের চিত্রসহ বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে পালানোর দৃশ্য যখন আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রচার করছে; তখন চনমনে মোদী রেঙ্গুনের আড়াই হাজার বছরের পুরনো শেওদাগন প্যাগোডা, অং সান জাদুঘর ও ইয়াঙ্গুনের শহীদ সমাধিকেন্দ্র দর্শন করে বিমুগ্ধ হন।
রোহিঙ্গারা যখন জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ছুটছে; তখন নরেন্দ্র মোদী জ্বালানী তেলের চালান নিয়েই মিয়ানমার পৌঁছান। এখন যৌথ বিনিয়োগে মিয়ানমারে মহাসড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। মিয়ানমারের কালেওয়া থেকে ইয়াগি ১২০ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে ১৭৬ মিলিয়ন ডলারের দরপত্র খুলেছে ভারত। অথচ মালদ্বীপ রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিবাদে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। একই কারণে কুয়েত মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অশান্তির রানী সুচিকে খুশি করতে মোদী ভারতের আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বাধার মুখে এখনো সেটা সম্ভব হয়নি। মমতার স্পষ্ট বক্তব্য ‘ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মুসলিম হওয়ায় তাদের বিজেপি ভারত ছাড়া করার চেষ্টা করছে। আমরা সেটা হতে দেব না’। প্রশ্ন হচ্ছে মোদী আসলে কি চায়? গোটা বিশ্ব যখন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের উপর জুলুমের প্রতিবাদ করছে; সুচির মুখে থু থু দিচ্ছে; তখন মোদীই কেবল মিয়ানমারের অং সান সুচির পক্ষ্যে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এটা কি নিছক মোদীর মুসলিম বিদ্বেষী মানসিকতা!
পুরো নাম নরেন্দ্র দমোদর মোদী। ভারতের এই প্রধানমন্ত্রীকে এক সময় বলা হতো গুজরাটের কসাই। ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের মেহসানা জেলার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া নরেন্দ্র মোদী চা-বিক্রেতা বাবার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। শৈশবে বাবাকে সাহায্য করতে বেদনগর রেলস্টেশনে হেঁটে হেঁটে চা বিক্রী করতেন। চাতুর্যই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। কম বয়সে বিয়ে করেন; অথচ হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ‘প্রচারক’ পদ পাওয়ার পর বিয়ে গোপন রাখেন। কারণ ওই পদ পেতে গেলে চিরকুমার থাকতে হয়। সুচতুর মোদী ১৯৭১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আরএসএসে যোগ দেন। তারপর তার জীবনের ইতিহাস ভারতে বসবাসরত মুসলিমদের বিরুদ্ধে শুধু হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানোর রাজনীতি।
আশির দশক থেকে ভারতের প্রতিটি সুমলিম বিদ্বেষী হত্যাকান্ড-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদির সঙ্গে মোদী কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। ১৯৯২ সালে অযোদ্ধ্যার বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার মূল হোতা লালকৃষ্ণ আদভানী ক্যারিশমা করে ২০০১ সালে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেলকে সরিয়ে মূখ্যমন্ত্রী করেন মুসলিম বিদ্বেষী মোদীকে। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। ২০০২ সালে গোধরা স্টেশনে ট্রেনে নিজেরাই আগুন দিয়ে দোষ মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে মুসলিম নিধন শুরু করেন। মোদীর নের্তৃত্বে ওই সময় মুসলমানদের আগুনে পুড়িয়ে মেরে কেটে হত্যা করে আরএসএস। গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খলনায়ক মোদি সম্পর্কে সেই সময় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সঞ্জিব ভাট ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে দেয়া হলফনামায় বলেছিল ‘২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় ট্রেনে অগ্নিকান্ডের পর নরেন্দ্র মোদি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয় মুসলমানদের প্রতি হিন্দুরা যেন তাদের ক্ষোভ মেটাতে পারে পুলিশকে সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে’। মোদী নিজেও দম্ভোক্তি করে বলেছিল ‘মুসলমানরা যাতে পুনরায় এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার এটা মোক্ষম সময়’। শুধু কি তাই! মোদী ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রয়টারে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০০২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য অনুতপ্ত নন ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, তাকে বহনকারী মোটরগাড়ি কোনো কুকুর ছানাকে চাপা দিলে দুঃখ অনুভব করলেও মুসলিমকে চাপা দিলে দুঃখ পান না। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ভারত জুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী চেতনার উন্মেষ ঘটান। প্রতিবেশি নেপাল সংবিধান সংশোধন করে হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেন। তবে নেপাল উল্টো মোদীকেই উচিত শিক্ষা দেয়। উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিজেপির নেতা মোদী ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের ইমেজে হিন্দুত্ববাদী উগ্রতার কালি লেপ্টে দিয়েছেন। ভারতকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে জুলুম নির্যাতন। ‘গরু মাতা’ শ্লোগান দিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে গরু জবাই এবং গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করেন। গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধে (!) একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভারতের কয়েক কোটি সংখ্যালঘু মানুষ। ভারতের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, লেখক-সাহিত্যিকরা গৃহ পালিত নিরীহ প্রাণী গরু নিয়ে মোদীর অতি বাড়াবাড়িতে ত্যাক্ত-বিরক্ত। গরুর গোশত খাওয়ার কারণে একের পর এক মুসলিম হত্যা, মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনার প্রতিবাদ করে অনেক বরেণ্য ব্যাক্তিত্ব রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। মুম্বাইয়ের বাল ঠাকরের সিবসেনা যে মুসলিম বিদ্বষী হিসেবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ঘৃর্ণা কুড়িয়েছে; মোদী ক্ষমতায় আসার পর উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবার (আরএসএস) রাজনৈতিক উইংয়ের হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের উগ্রতা সিবসেনার প্রতি ঘৃর্ণাকেও হার মানিয়েছে। বিজেপি’র তিনবারের সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদভানি একবার বলেছিলেন,‘বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে দেয়া হবে’। আর মোদীর দল চায় ‘ভারত থেকে মুসলমান পরিচয় মুছে দিতে’।
ভারতের প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রই মোদীর ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারছে না। নানামুখী আগ্রাসনে মোদী ভারতকে হাঙ্গরের দেশে পরিণত করেছে। তবে বর্তমানে মোদীর সবচেয়ে বন্ধু রাষ্ট্র হলো ইসরাইল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে মোদীর সেই বন্ধু ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল। নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হত্যা-নির্যাতন করার চিত্র তুলে ধরে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবিতে ইসরাইলের হাইকোর্টে আর্জি জানায় সে দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। হাইকোর্ট চলতি মাসের শেষের দিকে এ নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করে। কিন্তু ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী দাবি করেছেন, হাইকোর্টের অস্ত্র বিক্রী বন্ধের এখতিয়ার নেই। মিয়ানমারের কাছে ইসরাইল অস্ত্র বিক্রী অব্যাহত রাখবে। এর আগে ইহুদিবাদী ইসরাইল আর্জেন্টিনায় যুদ্ধ অপরাধের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। বসনিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে সার্বিয়ার বাহিনীকে অস্ত্র যুগিয়েছে। একই ভাবে মিয়ানমারকেও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলী সেনাবাহিনী যখন তখন নির্বিচারে ফিলিস্তিনীদের হত্যা করে মুসলিম বিশ্বে ঘাতকের জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু ভারত! হিন্দু রাষ্ট্র হলেও বিশ্ব দরবারে এতোদিন ভারতের পরিচিতি ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে। বহু ধর্ম বর্ণ ও গোত্রের মানুষ ভারতে বসবাস করেন। কিন্তু মুসলিম বিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশটি ধর্ম নিরপেক্ষতার ইমেজ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এখন গোটা বিশ্ব যখন রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির ব্যাপারে ঐক্যমত্য; তখন নরেন্দ্র মোদী উল্টো রোহিঙ্গা হন্তারক সুচির পক্ষ্যে নিয়েছেন শক্ত অবস্থান। মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সুচির পক্ষ্যে মোদীর এই অবস্থান কি ভারতের পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিষ্টারর্স নামক প্রদেশগুলোর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে? নাকি নিছক মুসলিম বিদ্বেষী এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী হওয়ায় মোদী মিয়ানমারের পক্ষ্যে অবস্থান নিচ্ছেন? মোদী আসলে কি চাচ্ছেন; দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা; নাকি বৌদ্ধ রাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে মুসলিম বিদ্বেষী জোট গড়তে? হিন্দুত্ববাদী মোদীর এই ‘হিংসাত্মক চেতনা’ কি দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি করবে না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।