পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ যোগাতে নাভিশ্বাস উঠেছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের শুরুতে জনপ্রতি ৩৭ হাজার ৫শ’ টাকায় অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও একাধিক দালালদের হাত বদল হয়ে কর্মী প্রতি প্রায় তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় প্রথমে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা ৫শ’ টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ডাক-ঢোল পেটানো হলেও বর্তমানে কর্মীদের চড়া অভিবাসন ব্যয়ের টাকা জোগাড় করতে গলদঘর্ম পোহাতে হচ্ছে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এতথ্য জানিয়েছেন। জি টু জি প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণ চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ শুরু করা হয়। দশ সিন্ডিকেটের কবলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চলে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ মার্চ থেকে গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩০ হাজার ৮শ’ ৪৯জন কর্মী মালয়েশিয়ায় চাকুরি লাভ করেছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে গুটি কয়েক মেডিকেল সেন্টার। সিন্ডিকেটের আওতাধীন এসব মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ¯িøপ কাটার সাথে সাথেই জনপ্রতি ৫ হাজার তিন শত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পেতেও কর্মীদের গলদঘর্ম পোহাতে হচ্ছে। মেডিকেল সেন্টারগুলোতে মাসের পর মাস ধরর্ণা দিয়েও স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পাচ্ছে না কর্মীরা। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু একাধিক কর্মী এ অভিযোগ তুলেছেন। স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ঢাক-ডোল পেটানো হলেও এখন এ সব দেখার কেউ নেই। একাধিক দালালের হাত বদল হয়ে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে এসব কর্মীরা দু’বছরের মধ্যে তাদের খরচের টাকা তুলতে পারবে না তা’নিয়ে সংশয় রয়েছে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকার এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে দালাল চক্রসহ সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অনলাইন (এসপিপিএ) প্রক্রিয়ায় দালাল চক্রের হাত বদল হয়ে একজন কর্মীকে ভিটেমাটি বিক্রি ও ঋণ করে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়ায় যেতে হচ্ছে। বিএমই’িট’র সূত্র জানায়, গত ১০ মার্চ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজমের মাধ্যমে ১ হাজার ৭শ’ ২৯জন, আইএসএমটি হিউম্যান েিসার্স লি:-এর মাধ্যমে ৫ হাজার ৮শ’ ৫৪জন, রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ১ হাজার ৭শ’ ৭১জন, আল ইসলাম ওভারসীজের মাধ্যমে ২ হাজার ৫শ’ ৪৯জন, প্যাসেজ এসোসিয়েটসের মাধ্যমে ১ হাজার ৯০জন, আমিন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩শ’ ১জন, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৫ হাজার ৭শ’ ৪৪জন, সনজরী ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ২ হাজার ৫শ’২৩জন, ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা) লিমিটেডের মাধ্যমে ৪ হাজার ৬শ’৬৯জন এবং ক্যারিয়ার ওভারসীজ কনসালটেন্স লিমিটেডের মাধ্যমে ৬শ’ ১৯জন মালয়েশিয়া চাকুরি লাভ করেছে। এদিকে, বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের সাথে রাতে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
গতকাল রোববার ইস্কাটনস্থ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সভাপতিত্বে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর সংস্থার প্রধানগণসহ মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় বৈধভাবে গমনকারী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক সুযোগ সুবিধার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ এবং আর যেন কেউ অবৈধভাবে সেদেশে না যেতে পারে তার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ কর্মীদের বৈধকরণে জোরালো ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ, অবৈধভাবে মানব পাচার প্রতিরোধ এবং দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী প্রেরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণে ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং মানব পাচার রোধে পুলিশ, ইমিগ্রেশন, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নিদের্শনা প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম জোরদারকরণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অবৈধ অভিবাসীদের রিহায়ারিং এর আওতায় আনার জন্য মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইংয়ের মাধ্যমে ব্যপক প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখা ও মালয়েশিয়ায় দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী প্রেরণর বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়। বাংলাদেশের বিমান বন্দরসমূহে অবৈধভাবে কর্মী গমন রোধে মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট টাস্কফোর্সের কার্যক্রম জোরদার করণের উপর আলোচনা করা হয়। সভায় স্টুডেন্ট ভিসা, ভিজিট ভিসাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ভিসায় গমনকারীদের বিষয়ে ক‚টনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।
জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমূল ইসলাম বাবুল সহ-সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আবুল হোসেন গতকাল রোববার কুয়ালালামপুর থেকে ইনকিলাবকে বলেন, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মীরা তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়ায় আসছে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো’র জন্য উন্মুক্ত করা হলে একজন কর্মী মাত্র দেড় লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেতো। তারা বলেন, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরনের শুরুতে মাত্র ৩৭ হাজার টাকায় কর্মী পাঠানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন বায়রার নেতৃবৃন্দ । কিন্ত বর্তমানে শুধু দশ রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করায় কর্মীরা কোনো যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছে না। কর্মীরা দশ এজেন্সি’র কাছেই জিম্মি হয়ে চড়া অভিবাসন ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রবাসী শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্প্রসারন এবং নিরীহ কর্মীর স্বার্থ রক্ষা ও সরকারের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে জি টু জি প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। তারা মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিএনপি মালয়েশিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কাজী সালাহ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র দশটি এজেন্সি’র মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করায় একাধিক দালালের হাত বদল হয়ে জনপ্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকায় কর্মী আসছে মালয়েশিয়ায়। তিনি বলেন, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে জনশক্তি রফতানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে শুধু একটি সিন্ডিকেটের স্বার্থের জন্য। বি-বাড়িয়ার দাতো আমিন একক প্রভাব খাটিয়ে শুধু চিহ্নিত দশ এজেন্সিকে কর্মী আনার সুযোগ দিচ্ছে। কর্মী প্রেরণের কোনো প্রতিযোগিতা না থাকায় সিন্ডিকেট চক্র চড়া দামে কর্মী এনে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি চড়া অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনার পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হুমায়ূন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। বায়রার সভাপতি ও সাবেক এমপি বেনজির আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, দশটি রিক্রুটিং এজেন্সি’র পরিবর্তে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করতে পারে তার একটি সুনির্দিষ্ট পথ বের করার জন্য বায়রার পক্ষ থেকে ড. ফারুককে আহবায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছি। মালয়েশিয়ায় সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি গত ৫ আগষ্ট মালয়েশিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে সকল এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টির যথাযথ প্রস্তাবাবলি উত্থাপন করেছে। গঠিত কমিটি শিগগিরই বায়রায় রিপোর্ট পেশ করলেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় সকল এজেন্সির সুযোগ দেয়ার জোরালো প্রস্তাব পেশ করা হবে। বায়রার সভাপতি বলেন, সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি জি টু জি প্লাসে কর্মী প্রেরণের সুযোগ পেলে সম্ভাবনমায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হবে এবং স্বল্প অভিবাসন ব্যয়েই মালয়েশিয়ায় কর্মী যেতে পারবে। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, আমরা অত্যান্ত আশাবাদী সরকার দেশের স্বার্থেই সকল এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।