বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে ঃ ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মহাস্থানে করতোয়া নদীর উপর ঝুঁকিপুর্ণ সেতুটির ফাটল এক মাসেও মেরামত সম্ভব না হওয়ায় প্রতিদিন সেতুর দুই পাশে দুই থেকে চার কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বাস, ট্রাক ,প্রাইভেট কারের যানজট লেগেই থাকে। সেতুটি পার হতেই গড়ে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে শত শত যানবাহনের চালক, হেলপার ও যাত্রী সাধারণকে। ঘটনাস্থলে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ অস্থায়ী ছাউনি তৈরী করে দিন রাত ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে তাদেরও রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে উত্তরবঙ্গের উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা।
ঈদের অনেক আগেই সৃষ্ট এই সমস্যা নিরসনে সড়ক বিভাগ আশ্বস্ত করলেও বাস্তবে সেই আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেছে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সৃষ্ট পরিস্থিতি দেখতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৭ সালে তৈরী বয়সের ভারে জরাজীর্ণ বগুড়ার মহাস্থানে করতোয়া নদীর উপর সেতুটিতে গত ৯ আগস্ট বিপজ্জনক ফাটল দৃশ্যমান হয়। এতে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগতো সেতুর আগে পিছের ৭/৮ কিলোমিটার রাস্তা পাড়িদিতে। সৃষ্ট পরিস্থিতির আলোকে সেতুটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কারের জন্য ২১ আগষ্ট থেকে কাজ শুরু করলেও এক মাসেও এর পুরোপুরি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ফাটলের জায়গায় বেইলী সেতু করে ওয়ানওয়ে পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কারণে সেতুর দু’পাশে প্রতিদিনই ৭/৮ কিলোমিটার পর্যন্ত যানবাহন পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। গতকাল শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ,সেতু পারাপার হতে কখনও আধা ঘন্টা কখনও বা একঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রী চালক ও হেলপারদের । তাই সেতুর পাশেই ভ্রাম্যমান গণসৌচাগারের ব্যবস্থা করেছে ট্রাফিক পুলিশ। যানজট নিরসনে সেখানে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পও বসানো হয়েছে।
ঢাকার আব্দুল্লাপুর থেকে আসা ডি কে এন্টারপ্রাইজের চালক দিলচাঁন জানালেন, তিনি গতকাল রাত ১২টায় রওনা হন রংপুরের উদ্দেশ্যে। মহাস্থানে এসে পৌছেন দুপুর আড়াইটায়। সেতটিু পার হতে আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছেন। আসমানী পরিবহনের হেলপার মাসুম জানান, তিনি ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। ঢাকার চন্দ্রা থেকে শুরু করে পথে পথে যানজটের কারণে বগুড়ার মহাস্থানে আসতেই স্বাভাবিক সময়ের ৫ঘন্টার স্থলে সময় লেগেছে ১৫ ঘন্টা। একইভাবে সেতুর দু’পাশে শত শত যানবাহনকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সাংবাদিক জেনে এগিয়ে এসে বাসযাত্রী মাহমুদা জানান, ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত আসতে পথে পথে দুর্ভোগের যানজট। এত কিছুর পরে আবার মহাস্থান সেতুতে অপেক্ষা। দুই ছোট সন্তান কে নিয়ে আর পারছিনা। সেতুর পাশে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন আনোয়ার হোসেন জানান, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এক পাশের গাড়ি বন্ধ রেখে অন্য পাশের গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণেই সেতু পার হতে বিলম্ব হচ্ছে। তাই সেতুর দু’পাশের দীর্ঘ যানবাহনের লাইন। তিনি আরো জানান, তবে আগের চেয়ে যানজট অনেকটা কম। ব্রীজের সংষ্কার কাজে নিয়োজিত বগুড়ার সড়ক ও জনপথের সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, প্রায় ৬০ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বয়সের কারণে সেতুটি ভারী যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেতুতে ফাটল ধরলে ঢাকা থেকে ডিজাইন ডিভিশনের কর্মকর্তারা এসে সংষ্কার কাজ করার জন্য গাইড লাইন দিয়ে গেছে। সেই অনুযায়ী গত মাসের ২১ আগষ্ট থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। মাঝ খানে করতোয়ার পানি বৃদ্ধির ফলে কাজের গতি শ্লথ হয়েছে। তিনি আরো জানান, নদীর পানি কমে আসায় শনিবার থেকে কাজের গতি বেড়েছে। আশাকরছি, ১০ দিনের মধ্যেই সংষ্কার কাজ শেষ হলে আবার আগের মতই স্বাভাবিক ভাবে যানবাহন চলবে।
এদিকে দীর্ঘ যানজটের কারণে , বগুড়ার মহাস্থান গড়, মোকামতলা , গাইবান্ধার ফাঁসিতলা, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ির কাঁচামালের আড়তে জমে উঠেছে ল্উা , কুমড়ো, সহ মওশুমি কাঁচামালের স্তুপ !
মহাস্থান হাটের কাঁচামালের আড়তদার বাদশা মিয়া ও আজগর আলী জানালেন , মহাস্থান থেকে শুক্রবার মাঝরাতে ঢাকায় রওয়ানা হওয়া সব্জী বোঝাই ১০ / ১২টি ট্রাক দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চন্দ্রা (চান্দুরা) পৌছুতে পারেনি। মোবাইল ফোনে এই তথ্য জানার পর ঢাকা, খুলনা, সিলেটের আড়তদাররা কাঁচামাল বুকিং বন্ধ রেখেছে। এই দীর্ঘ যানজট কৃষি অর্থনীতির সাথে জড়িত উৎপাদক চাষী , ফড়িয়া , আড়তদার ও বড় বড় মার্কেটের মহাজনদের কাছে হরতাল অবরোধের মতই মনে হচ্ছে । তাদের ভাষায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রীতিমত বিপর্যস্ত ও বেহাল দশায় পড়েছে উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।