Inqilab Logo

বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মেঘনার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বিমুখী নীতি

| প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বিমুখী নীতি নিয়ে নরসিংদীতে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। রায়পুরার ৩টি ইউনিয়নে ভয়াবহ ভাঙনের পরও সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে নরসিংদী সদর উপজেলা করিমপুরে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিকভাবে পাথর ফেলার প্রকল্প গ্রহণ করার ঘটনা নিয়ে এই সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। এলাকার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, নরসিংদী সদর উপজেলা যেমন নরসিংদী জেলার একটি উপজেলা। তেমনই রায়পুরা উপজেলাও নরসিংদীর একটি উপজেলা। দুটি উপজেলায়ই মেঘনার ভাঙনে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাঙন রোধে শুধু সদর উপজেলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কেন। কেন রায়পুরা উপজেলায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গৃহীত হবে না। নদী ভাঙন কোন রাজনৈতিক ঘটনা নয়, তা হলে রায়পুরা উপজেলার ভাঙন কে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করা হবে কেন?
জানা গেছে, নরসিংদীর মেঘনা অববাহিকায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে শত শত মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘরের ভিটি নেই, চালা নেই, ঠাঁই নেয়ার জায়গা নেই, খাবার, ওষুধ ও আশ্রয়ের অভাবে শত শত মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ বছর প্রথম ভাঙন শুরু হয় রায়পুরার মেঘনা তীরবর্তী চানপুর ইউনিয়নে সেখানে এক একটি গ্রাম প্রায় পরিপূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো কয়েকটি গ্রাম হুমকির সম্মুখীন। সেখানে আশ্রয়হীন কয়েকশত নারী পুরুষ ও শিশু অত্যন্ত দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিনাতি পাত করছে। সেখানে অদ্যাবধি কোন সরকারী সাহায্য পৌছেনি।
চানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোমেন সরকার জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তার ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার মানুষ সরকারীভাবে এক মুঠো সাহায্যও পায়নি। তিনি জানিয়েছেন, ভাঙনের খবর প্রচারিত হবার পর নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে সেখানে নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ভাঙ্গন এখনো অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ভাঙন শুরু হয় একই উপজেলার চরমধুয়া ইউনয়নে। সেখানে দুটি গ্রামের ২শত বাড়ী-ঘর, ২টি কবরস্থান ও একটি ঈদগাহ মাঠ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পতিত হয়েছে আরো ৬/৭শত পরিবার ও সরকারী স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোও এক মুঠো সরকারী সাহায্য পায়নি। কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি সেখানকার ভাঙন রোধে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রায়পুরার এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু সরকারী সাহায্যের ব্যাপারে লিখিত আবেদন জানালেও কোন সাহায্য বরাদ্দ পায়নি। অতি স¤প্রতি ভাঙন শুরু হয়েছে নরসিংদী সদর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী করিমপুর ইউনিয়নের শুটকিকান্দা গ্রামে। এখানেও শতাধিক পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখানে কোন সরকারী সাহায্য পৌছেছে বলে জানা যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে সেখানে ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাথর ফেলার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই খবর জানাজানি হবার পর রায়পুরার চরাঞ্চলের চরমধুয়া, চানপুর ও মির্জারচরের ভাঙন কবলিত লোকজনের পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে জরুরী ভিত্তিতে সেখানে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের। তারা বলেছে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দোষ করে থাকতে পারে। কিন্তু সেখানকার সাধারণ মানুষ কোন দোষ করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই দ্বিমুখী নীতি নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। সেখানকার মানুষের দাবী নরসিংদী সদর উপজেলার শুটকিকান্দা গ্রামের ভাঙন রোধে যেভাবে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ঠিক সেভাবে রায়পুরা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নেও জরুরী প্রকল্প গ্রহণ করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ