Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওভারলোড বেড়েছে সেতু ও সড়ক-মহাসড়কগুলোর মারাত্মক ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিদ্ধিরগঞ্জ (নাঃগঞ্জ) সংবাদদাতা ঃ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী অতিরিক্ত ওজন বহনকারী ট্রাক ও লরির সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। গত জানুয়ারীর তুলনায় জুলাইতে বেড়েছে প্রায় ৪২৫ ভাগ। আর জুলাইতে মহাসড়কটিতে চলাচলকারী মোট ট্রাক ও লরির ২৩ দশমিক ৩৮ ভাগই অতিরিক্ত ওজন বহণ করেছে। আর প্রতিটি গাড়ীর অতিরিক্ত পণ্যবহনের পরিমান এখন আর কোন নির্দিষ্ট সীমায় নেই। ‘যত খুশি ওভারলোড কর’-এই নীতিতে পন্য পরিবহন করছে পণ্যবহনকারী যানগুলো। ওভারলোড বৃদ্ধির কারনে জাতীয় এই মহাসড়ক ও এর সেতু ও কালভার্টগুলোসহ সারাদেশের সড়কগুলোর-ই ক্ষতি দিন দিন বাড়ছেই। বিশেষ করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘প্রধান মৌলিক ক্ষতিগ্রস্ত সেতু’র তালিকায় থাকা কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুর ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের বহু স্থান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। এগুলো প্রতিদিনই জোড়া-তালি দিয়ে ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে । এতে অতিরিক্ত কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে । আইন অনুযায়ী প্রগ্রেসিভ হারে জরিমানা আদায় না করে সমহারে জরিমানা আদায়ের ফলে ওভারলোড ব্যাপক হারে বাড়ছে বলে মনে করছেন সওজ এর প্রকৌশলীরা । মনগড়া জরিমানা আদায়ের ফলে উৎসাহিত হচ্ছে অতিরিক্ত পন্য বহন।
সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজা ও ওয়ে-স্কেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, অতিরিক্ত মালামাল বহণকারী হেভী ট্রাক ও ট্রেইলর পারাপারের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত জানুয়ারীতে ১৬ হাজার ১৮৬টি, ফেব্রæয়ারীতে ২৪ হাজার ৮৪ টি, মার্চে প্রায় ২৬ হাজার টি, এপ্রিলে ৩১ হাজার ৬৫০টি, মে মাসে সাড়ে ৩৬ হাজারটি, জুনে ৩৪ হাজার ৭৯৪টি এবং জুলাইতে ৬৮হাজার ৭২১ টি ট্রাক ও ট্রেইলার থেকে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের দায়ে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এতে দেখা যায় গত জানুয়ারীর তুলনায় জুলাইতে ওভারলোডের হার বেড়েছে প্রায় ৪২৫ ভাগ। আর জুলাই মাসে সেতু দুটির উপর দিয়ে হেভী ট্রাক ও ট্রেইলর পারাপার হয়েছে মোট ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩৩ টি। এরমধ্যে ওভারলোডের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে ৬৮৭২১টি পণ্যবাহী গাড়ীকে। অর্থাৎ পারাপরকৃত ট্রাক,ট্রেইলরের প্রায় ২৩ দশমিক ৩৮ ভাগই ওভারলোড করছে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের তদারকির অধিন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের কোথাও না কোথাও প্রায়-ই জোড়া-তালির মেরামত করতে দেখা যাচ্ছে। মাত্র ৮ মাস আগে ওই তিন মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ২৯ কোটি টাকার বেশী খরচ করে ওভার-লে করা হয়েছিল। কিন্তু ওভারলোডের সাথে বৃষ্টির কারনে মহাসড়কটি বিধ্বস্তের পথে। এছাড়াও সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রধান মৌলিক ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর (সি-ক্যাটাগরি) তালিকায় কাঁচপুর,মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুর নাম রয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই তিনটি সেতু ।
সড়ক ও জনপথের তথ্যমতে, মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনে অতিরিক্ত ওজনবহনের প্রবনতা হ্রাস করার লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা এবং গোমতী সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় দুটি ওয়ে স্কেল স্থাপন করা হয়। অতিরিক্ত ওজনবাহী মোটরযানকে প্রগ্রেসিভ হারে জরিমানার বিধান করে ২০১৬ সালের ১৬ আগষ্ট রাষ্ট্রপতি ‘জরিমানার রেট অব সিডিউল’ এর প্রজ্ঞাপন জারি করেন। জরিমানার ৪ টি ধাপ নির্ধারন করে সর্ব নি¤œ ২ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত করা হয় । ওই প্রজ্ঞাপনের ক্রমিক ২-এ উল্লেখ রয়েছে, কোন মোটরযান কর্তৃক নির্ধারিত ওজন সীমার অতিরিক্তি ওজনের মালামাল একের অধিকবার বহন করলে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা জরিমানাসহ পূর্বের জরিমানার দ্বিগুন হারে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে।
সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিআরটিএ এর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকায় স্থাপিত ওয়ে-স্কেলে জরিমানা আদায় করেন। এরপর নানাহ অভিযোগে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আন্দোলনের মুখে ওয়ে স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৫ ও ১৩ অক্টোবরে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমহারে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় ওয়ে স্কেল দুটিতে জরিমানা আদায় শুরু করা হয়।
পরবর্তীতে মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা,২০১২ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির ১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত (২য় সভায়) সিদ্ধান্ত হয়, দুই এক্সেল বিশিষ্ট পন্যবাহী মোটরযানে ৩১ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখের পর কোনভাবেই মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১২ এর পরিশিষ্ট-ক তে বর্নিত ওজনসীমার অতিরিক্ত কোন ওজন বহন করা যাবে না। অর্থাৎ প্রগ্রেসিভ হারে জরিমানা আদায়সহ ওই নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
কিন্তু ওয়ে-স্কেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত না মেনে পূর্বের সিদ্ধান্তেই ‘সমহারে’ জরিমানা আদায় করছে। এতে প্রতিদিনের আয় বাড়ছে। আর এই আয় থেকে প্রতিষ্ঠানটি শতকরা হারে টাকা পাবে। তাই তাদের লক্ষ্য যত বেশী গাড়ী অতিরিক্ত পণ্য বহন করবে ততই তাদের লাভ। এব্যপারে ওয়ে-স্কেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস এর পরিচালক (প্রশাসন) মেজর (অবঃ) জিয়াউল আহসানের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এব্যাপারে সড়ক ও জনপথের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ করা । তবে ওভারলোড বেড়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, মন্ত্রী মহোদয়ও বলেছেন ঈদের পরে ওয়ে-স্কেল পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী তা পরিচালনায় কঠোর হবেন। সমহারে জরিমানা আদায়ের কারনে ওভারলোড করা গাড়ীর সংখ্যা বেড়েছে এই কথার সাথে তিনিও একমত বলে জানান। তিনি আরো বলেন, এব্যাপারে আমরা দ্রæতই পদক্ষেপ নেব। আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ