রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
৫ সেপ্টেম্বর শহরের রামঘাটস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) সভাপতিত্বে কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা যেসব উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল, দ্ব›দ্ব রয়েছে তা নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা উত্তর ও দক্ষিণে নেতৃত্বের আধিপত্য নিয়ে মুরাদনগর ও দাউদকান্দি এবং সদর ও বরুড়া উপজেলায় চলছে সাংগঠনিক বিরোধ। দীর্ঘদিনেও ব্যক্তি দ্ব›দ্ব দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের আধিপত্য নিয়ে চলমান সাংগঠনিক বিরোধের অবসান ঘটছে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে এসব বিরোধ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে মনে করছেন দলের তৃণমুল নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট চিন্তা করে দলে ব্যক্তি দ্ব›দ্ব, সাংগঠনিক কোন্দল নিরসনের তাগিদ অনুভব করেছেন।
কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সূতিকাগারই হচ্ছে সদর উপজেলা। মহানগর কেন্দ্রিক এ উপজেলায় আওয়ামী লীগে রয়েছে ত্রিমুখি বিরোধ। তারমধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক অ্যাডভোকেট আফজল খানের সঙ্গে সদরের এমপি ও বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ওই দুই নেতার বিরোধীয় সম্পর্কের বরফ গললেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অন্যদিকে কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চৌদ্দগ্রাম আসনের এমপি রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের সঙ্গেও সদরের এমপি হাজী বাহারের বিরোধ চলছে। এদিকে দক্ষিণের সাংগঠনিক উপজেলা বরুড়ায় দলের ভেতরেও ত্রিমুখি নেতৃত্বের কোন্দল ও সাংগঠনিক বিরোধ চলছে। প্রায় ৯বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক এমপি আবদুল হাকিম গ্রæপের সঙ্গে বরুড়া আসনের ওই সময়ের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী ওরফে নজরুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। আবদুল হাকিমের মৃত্যুর পর বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান এডহক কমিটির আহŸায়ক সাবেক এমপি নজরুলের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত আবদুল হাকিমের পুত্র অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের। দ্বিমুখি এ বিরোধের সঙ্গে যুক্ত হয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক মিয়াজির গ্রæপিং। ফলে ত্রিমুখি হয়ে পড়ে বরুড়া আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক বিরোধ। বর্তমানে এনামুল হক মিয়াজির গ্রæপ বিরোধীতার জায়গায় কিছুটা নিশ্চুপ হয়ে থাকলেও সাংগঠনিক দ্ব›দ্ব তুঙ্গে রয়েছে সাবেক এমপি নজরুল ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের মধ্যে। বিরোধ বিষয়ে কামরুল ইসলাম গ্রæপের সাফ কথা- নজরুল আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান নন। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার থেকে ওঠা আসা হাইব্রিড আওয়ামীলীগার। তাঁর হাতে বরুড়া আওয়ামী নিরাপদ নয়। অন্যদিকে নজরুল গ্রæপের মন্তব্য- সাংগঠনিকভাবে দল শক্তিশালী করতে হলে সাবেক এমপি নজরুলের বিকল্প নেই।
কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক উপজেলা মুরাদনগরে নেতৃত্বের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দুই নেতার মধ্যে বিরোধ চলছে। আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং মুরাদনগর আসনের স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের সঙ্গে কুমিলা (উত্তর) জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের এ বিরোধ কোনভাবেই মেটানো যাচ্ছে না। গত সংসদ নির্বাচনে মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের টিকেট পায় জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ড. কিশোর আলম সরকার। নির্বাচনে ইউসুফ হারুন স্বতন্ত্র থেকে এমপি নির্বাচিত হোন। ফলে বিরোধ আরও জোরালো হয়ে উঠে। মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের মাঠ নিজেদের আয়ত্বে রাখতে মরিয়া ইউসুফ হারুন ও জাহাঙ্গীর সরকার। আর নিয়ে সাংগঠনিক দ্ব›দ্ব নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তৃণমুল রাজনীতিতে। এদিকে উত্তরের দাউদকান্দি আওয়ামী লীগেও চলছে নেতৃত্বের বিরোধ। দাউদকান্দি আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদবী নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজনকেই রাখা হয়েছে। তারা হলেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালাম ও মহিউদ্দিন সিকদার। দুইজনই স্থানীয় এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়ার অনুসারি। সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজনকে রাখা নিয়ে দলের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন একই পদ দুইজনকে দিয়ে খুশি রাখার বিষয়টি হাস্যকর। এতে করে দলের ভেতরই নিরব দ্ব›দ্ব তৈরি হচ্ছে। যা আগামী নির্বাচনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
এদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও দলের ভেতর কোন্দল, ব্যক্তি দ্ব›দ্ব নিরসন করার কথা বললেন কুমিল্লার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। গত ৫ সেপ্টেম্বর শহরের রামঘাটস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) সভাপতিত্বে কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা যেসব উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল, দ্ব›দ্ব রয়েছে তা নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নেতারা বলেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দল, দ্ব›দ্ব যাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে তার জন্যে নিজেদের মধ্যে আর কোন দ্বিধাবিভক্তি রাখা যাবে না। দলকে কোন অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। সব ভুল বুঝাবুঝি মিটমাট করতে পারলে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তির সামনে অন্য কোন শক্তি দাঁড়াতে পারবে না। তাই সব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে দলকে। তাহলেই আসবে কাঙ্গিত সাফল্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।