বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থসহ একটি কন্টেইনার পাচারের নেপথ্যে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের হাত থাকার বিষয়টি নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছে। কন্টেইনারটি বন্দর দিয়ে বের হয়ে গেলে বহির্বিশ্বে দেশ তথা চট্টগ্রাম বন্দরের সুনামহানির শঙ্কা ছিল বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে প্রাথমিকভাবে কন্টেইনারটিতে সিজিয়াম-১৩৭ জাতীয় তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আরও উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে কন্টেইনারটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কন্টেইনারে পাওয়া সিজিয়াম-১৩৭ জাতীয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা পারমাণবিক উপাদান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। পক্ষান্তরে এ তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণ মানবদেহ, জীবন ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। সিটাডেল গেøাবাল কর্পোরেশন নামে একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘জিংক অক্সাইড কম্পাউন্ড’ ঘোষণা দিয়ে কন্টেনারটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে চীনে রফতানি করছিল। তার আগেই সেটি ধরা পড়ল চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে।
রফতানি পণ্যের আড়ালে আন্তর্জাতিক কোন মাফিয়া চক্র এ ধরনের চালান চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রেরণ করছিল কিনা তা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর বা দেশের সুনাম হানিতে কোন মাফিয়া চক্র তৎপর কিনা তাও খতিয়ে দেখা জরুরী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এর আগে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র চট্টগ্রাম বন্দর ব্যববহার করে তরল কোকেনের চালান পাচারেরও চেষ্টা করেছিল। পরে অবশ্য ভোজ্যতেলের আড়ালে আনা তরল কোকেনের চালানটি ধরা পড়ে।
অপরদিকে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা রক্ষাসহ কন্টেইনারটি এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকায় সেখান থেকে বিকিরণের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকের। তাছাড়া এ ধরনের উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা সম্পন্ন কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার মত তেমন পূর্ব অভিজ্ঞতাও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কিংবা বন্দরের নেই। প্রাথমিক পরীক্ষায় কন্টেইনারটিতে সিজিয়াম-১৩৭ জাতীয় উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি পাওয়া গেলেও স্থানীয় পরমাণু শক্তি কমিশন এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। এর তেজস্ক্রিয়তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাই এর নমুনা পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দরে এসে কন্টেইনার খুলে চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন বলে জানা গেছে। তবে কাস্টম হাউসের কমিশনার ও চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা দাবি করছেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে নিরাপদ স্থানেই কন্টেইনারটি আটক রাখা হয়েছে। সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার তেমন কোন আশঙ্কা নেই। দুই সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম বন্দরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আছে সন্দেহে এই কন্টেনার আটক করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান বলেন, আরডিএম মনিটরে স্ক্যানিং করার সময় কন্টেনারটিতে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরে কন্টেনারটি সিল করে দেয়া হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়। পরমাণু শক্তি কমিশনের বিশেষজ্ঞ দল বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কন্টেনারটি উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেন। ঢাকা থেকে আরেকটি বিশেষজ্ঞ টিম চট্টগ্রাম এসে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এরপর কন্টেইনারটির ব্যাপারে চূড়ান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি দাবি করেন, সিলগালা করে কন্টেইনারটি নিরাপদে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর কোন আশঙ্কা নেই। জানা গেছে, কন্টেনারটি বন্দরের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক নিরাপত্তা লে. কর্নেল আবদুল গাফফার বলেন, প্রাথমিকভাবে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তের পর থেকে আটক কন্টেনারটি সিলগালা করে মেগাপোর্টের আওতায় ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পরিচালক ড. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি কন্টেইনার স্ক্যানিংয়ে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি পেয়েছে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি পাঠিয়েছিলো। গত ২৬ আগস্ট কন্টেনারটি পরীক্ষা করার জন্য আমরা কাস্টমসে টিম পাঠাই। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আমাদের টিমের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন কন্টেনারটিতে সিজিয়াম-১৩৭ জাতীয় তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, জিংক অক্সাইড কম্পাউন্ড ঘোষণা দিয়ে কন্টেনারটি রপ্তানির চেষ্টা করা হচ্ছিলো। কিন্তু জিংক অক্সাইড কম্পাউন্ডে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি পাওয়া সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন অফিসকে জানিয়েছি। আপাতত কন্টেনার না খুলে পরীক্ষা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসলে তখন কন্টেনারটি খোলা হবে। বর্তমানে সেটি নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় সেখান থেকে বিকিরণ ছড়ানোর শঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।
কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, ‘জিংক অক্সাইড’ ঘোষণায় ছাই রঙের কেমিক্যাল পাউডার ভর্তি আটক কন্টেনারটি চীনে রপ্তানি করা হচ্ছিলো। চট্টগ্রামের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো কেডিএস লজেস্টিক থেকে গত ২২ আগস্ট কন্টেইনারটিতে জিংক অক্সাইড বোঝাই করা হয়। এরপর সেখান থেকে কন্টেইনারটি গাড়িতে করে বন্দরের ভেতরে নেয়ার পর আরডিএম মনিটরে স্ক্যানিংয়ের সময় রেডিয়েশন অ্যালার্ট অ্যালার্ম বাজে। তার কিছু সময় পরে কিছু ব্যাক্তি কন্টেনারটি জাহাজে তোলার চেষ্টা করে। তবে পরবর্তীতে কাস্টম কর্মকর্তারা সেটি আটক করে সিলগালা করে দেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের পারমানবিক উপাদানের মূল্য বিশ্ব বাজারে বাণিজ্য বিলিয়ন ডলারের। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে এটি অনেক মূল্যবান। তারা নানা উপায়ে এ ধরনের পারমাণবিক উপকরণ সংগ্রহের চেষ্টা করে। আর এ কারণেই এ ধরনের চালান যাতে যেতে না পারে সেজন্য বিশ্বের নামকরা প্রায় প্রতিটি বন্দরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরেও এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। আর এ কারণেই জিংক অক্সাইড জাতীয় পণ্যে রপ্তানি ঘোষণার আড়ালে চীনের উদ্দেশে যাওয়ার আগে কন্টেইনারটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা পড়ে। কোন কন্টেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ রয়েছে কিনা তা সনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ওই ফটকটি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ থেকে এই কন্টেইনারের প্রথম যাত্রা বিরতির কথা ছিলো কলম্বো বন্দরে। কন্টেইনারটি তড়িঘড়ি করে জাহাজে তুলে দেয়ারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমের মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়ে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় এই কন্টেইনার।
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব মনে করেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে সুনাম রয়েছে তাকে বিনষ্ট করতে কোন চক্র এ ধরনের কাজ করতে পারে। তাই এর নেপথ্যে কারা তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তার এই কন্টেইনারটি আটক করা না গেলে কলম্বো বা চীনে নিশ্চিতভাবেই তা ধরা পড়ত। তখন বিশ্বে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর অকার্যকর বলে নেতিবাচক খবর হতো। চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।