Inqilab Logo

সোমবার ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপগঞ্জে এখনো সোনালী আঁশের কদর

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নদী মাতৃক এই বাংলার পলিমাটিতে পাট কৃষকের প্রধান ফসল হিসেবে গন্য হতো। এই পাটকে ঘিরে দেশে সহ¯্রাধিক পাটকল তৈরী হয়েছিল। এতে লক্ষ লক্ষ লোকজন তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। কেউ পাটকল মিলস স্থাপন করে লাভবান হয়েছেন কেউ পাট চাষ করে হাসির মুখ দেখাতেন। তাই সেই সময় পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। কারণ হিসেবে বলা হতো এই পাট রপ্তানি করে তৎকালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। গত দুই দশকে এ সোনালী আঁশের কদর কিছুটা কমতে থাকে। সরকারের নানা উদ্যোগ থাকা স্বত্তে¡ও প্রান্তিক কৃষকের চাষ করা পাটের মূল্য না পাওয়াতে অনাগ্রহ হয়ে পড়ে পাটচাষিরা। তবে প্রাচ্যের ডান্তিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রামে এখনো শতাধিক কৃষক সেই সময়ের সোনালী আঁশ পাট চাষ করে যাচ্ছেন। দাম পাচ্ছেন আকাশ ছোঁয়া। তাই তাদের মুখে হাসির চিহ্ন দেখা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক, বাসুন্দা, পাইসকা, পুবের গাও, সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ, কায়েতপাড়ার দক্ষিনপাড়া, কামসাইর, দাউদপুরের বেলদী, দেবই, কাজিরবাগ, শিমুলিয়া, দিঘলিয়ার টেক, গোবিন্দ্রপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা এখনো আগের মতই পাট চাষ করছেন। এসব এলাকার কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আগের তুলনায় এখন পাট চাষ করে ভাল দাম পাচ্ছেন। পাটখড়ির একেকটি আঁটি বিক্রি করছেন ১শ’ থেকে ২শ’ টাকায়। প্রতি মণ পাট পাইকারদের কাছে বিক্রি করে পাচ্ছেন ১হাজার ৪শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে তাদের জমিতে চাষ করা পাটের সকল খরচ ওঠে লাভ হচ্ছে ৩ গুন বেশি। কৃষকদের দাবী এসব পাটগুলো সরাসরি জুটমিলে নিয়ে বিক্রি করতে পারলে আরো ভাল দাম পেতে পারতেন।
স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া বলেন, অধিক চাষী না থাকায় পাটখড়ির আঁটিগুলো পাইকারীভাবে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেলার পার্শ্ববর্তি জেলা নরসিংদীর পলাশের জনতা জুট মিল ও মাশরিকী জুট মিলের ডিলাররা পাট কিনে নিলেও তারা পাটখড়ি নিচ্ছেন না। এতে কিছুটা লাভ কম হচ্ছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, এসব পাটখড়ি সাধারনত কাগজের কলে নেয়ার কথা থাকলেও প্রচারের অভাবে এসব পাটখড়ি স্থানীয়রা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছেন। শিমুলিয়ার কৃষক রোমান মিয়া জানান, নবাব আশকারী, ছাত্তার, উত্তরা, নবারুন জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উত্তর ব্রাহ্মণখালী, শিমুলিয়ার চরে পাট চাষ কমে গেছে। এখন তিনি কিছু বর্গা জমিতে পাট চাষ করে যাচ্ছেন। তিনি দাবী করেন সময়মত পাইকার না আসাতে পাট বিক্রি করতে পারছেন না। আবার কোন সময় পাটের দাম বেশি আবার কম থাকায় অি ননশ্চয়তার মুখে পাট চাষ ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। সূত্র জানায়, স্থানীয় কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ থাকলেও কোন কোন স্থানে আবাসন কোম্পানীর নামে সাইনবোর্ড ও বালি ফেলায় বিপাকে পড়েছেন তারা। জমি না কিনেই এসব দৌড়াত্ম বন্ধ না হলে যারা পাট চাষ করছেন তাদের ভাগ্যেও নেমে আসবে সেসব আবাসন কোম্পানীর বালির স্তুপ।তাই তারা প্রশাসনের নজরদারী দাবি করছেন।
অপর এক সূত্র জানায়, স্থানীয় ৯টি জুটমিল বিগত ১৫ বছর যাবৎ বন্ধ থাকায় এখানকার পাটচাষীর সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়াও রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভায় একটি পাট গবেষণা কেন্দ্র থাকলেও এসব কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে পাট চাষীদের পরিচয় নেই বলে জানায় কৃষকরা। তবে রাজধানী ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিল, রূপগঞ্জের মাশরিকী জুট মিল ও পলাশের জনতা জুট মিলস চালু থাকায় এখনো কৃষরা পাট চাষ ধরে রাখতে পারছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, পাট চাষে কৃষকদের সফলার এখনই সময়। তবে রূপগঞ্জে পাটাষীর সংখ্যা খুবই কম। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পারের জমিগুলো পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই এসব এলাকার কৃষকদের পাট চাষের পরামর্শ দেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রূপগঞ্জ

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ