পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাফর আলম। ৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মুসলিম এই যুবক যেন এ যুগের বায়জিত বোস্তামী। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে কাঁধে নিয়ে ৬৫ কিলোমিটার হেঁটে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসেন এই জাফর আলম। পাহাড় আর জঙ্গলের উঁচুনীচু এই পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে প্রায় ৫দিন। রোহিঙ্গা মুসলিম এই তরুণের মার্তৃভক্তির সচিত্র প্রতিবেদন পড়ে চোখের পানি ফেলেছেন অনেককেই।
জ্বালিয়ে দেয়া গ্রাম থেকে জীবন বাঁচাতে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে পালানো জাফর আলম ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে; চারপাশে শুধুই গোলাগুলি আর ভারী অস্ত্রের ঝনঝনানি। যত দূর চোখ যায় তত দূর কেবল আগুন আর আগুন। আগুনের লেলিহান শিখা আর আকাশ অন্ধকার করা কালো ধোঁয়া। মিয়ারমারের সরকারি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ আর নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে যেদিকে পারছে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার গ্রাম আমার বাড়ি। ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধা মা। কী করবো কোথায় যাব, সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। কোনও উপায় না দেখে সব সহায় সম্পদ ফেলে মা আছিয়া খাতুনকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ি ছাড়ি। প্রাণের ভয়ে কয়েকদিন রাখাইন রাজ্যের এদিকে ওদিক ছুটে এক পর্যায়ে অন্যান্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পাই। এরপর মাকে কাঁধে নিয়ে ৬৫ কিলোমিটার বন্ধুর পথ হেঁটে বাংলাদেশে আসি। নিজের মাকে বহন করে জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে আসার দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা ৬ সেপ্টেম্বর এ ভাবে তুলে ধরেন জাফর আলম।
জাফর আলমের বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। গত বুধবার বিকালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় তার। জাফর আলম জানান, তার মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। বয়স ৮০ পেরিয়ে গেছে। অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারেন না খুব একটা। বৃদ্ধার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে জাফরই সবার ছোট। মাকে কাঁধে নিয়ে মিয়ানমার থেকে ৫ সেপ্টেম্বর সে বাংলাদেশে পৌঁছে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে জাফর বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত তার গ্রামের বাড়ি বলিবাজারের সঠিক দূরত্ব আমার জানা নেই। তবে লোকে মুখে শুনেছি সীমান্ত থেকে বলিবাজারের দূরত্ব ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার হবে। পায়ে হেঁটে গেলে দু’দিন লাগে। আঁকা-বাঁকা পথ, বেশির ভাগ এলাকায় যানবাহন নেই। যতটুকু রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতো, তাও এখন বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এছাড়াও রোহিঙ্গা তরুণ-যুবকদের ধরতে পথে পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ কারণে বিকল্প পথ হিসেবে পাহাড়-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। এজন্য সময় লেগেছে পাঁচ দিন। এতো দিনের এই দৌড়ঝাঁপের কারণে আমার মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনাহারে অর্ধাহারে সঙ্গে থাকা অন্যান্যদের সহযোগিতায় কোনও মতে নো-ম্যানস ল্যান্ডে পৌঁছেছি। সেখানে একদিন অবস্থান নেওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের বস্তিতে উঠি। তবে মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে আবারও কাঁধে নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পের ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে আসি। এতো মানুষের ভিড়ে কবে ডাক্তারের দেখা পাবো জানি না।
উল্লেখ্য গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলায় ১২ পুলিশ সদস্যসহ অনেক রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানের নামে সাধারণ মানুষ ওপর হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ নানা ধরণের নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। তাদের নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রতিদিন পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নারীপুরুষ।
জাতিসংঘের তথ্যমতে এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার কথা বলা হলেও স্থানীয়দের দাবি এই সংখ্যা দুই লাখের ওপরে। এছাড়াও নাফ নদীর পানির সীমানা থেকে শুরু করে স্থল সীমানা পার হয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছে আরও হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একই ধরণের বর্বরোচিত রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। সেসময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর। কিন্তু তার কোনও তোয়াক্কা না করে রাখাইন রাজ্যে ফের সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।