Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোকসানে থাকায় কমছে আইএসপি লাইসেন্স ফি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের (আইএসপি) লাইসেন্স ও নবায়ন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনায় প্রথমে এই ফি ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে থাকায় তা কমিয়ে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ন্যাশনওয়াইড আইএসপি’র অধিকাংশ লোকসানের মধ্যে থাকায় লাইসেন্স একুইজিশন ফি ১০ লাখ টাকা এবং জোনাল আইএসপিগুলোর ফি ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। অন্যদিকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠন আইএসপিএবি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফি বাড়ানোর নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এ খাতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাবে এবং তথ্য ও প্রযুক্তির সুষ্ঠ সেবা ব্যহত হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রæয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আইএসপি লাইসেন্সের ফি বৃদ্ধি এবং প্রতিশ্রæত সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, অনতিবিলম্বে আইএসপি লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট ফি সমূহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইএসপি লাইসেন্স নবায়নের সময় লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী সেবা প্রদান করছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নবায়ন করতে হবে। অধিক সংখ্যক লাইসেন্স প্রদান না করে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। একইসাথে যেসকল আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী কার্যক্রম চালু করেনি তাদের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
এই সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২৯ মে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, আইএসপি এর জন্য নতুন কোন গাইডলাইন প্রণয়ন না করে বিটিআরসি’র বর্তমান গাইডলাইনেই লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করবে। ১৫ ফেব্রæয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনার বিষয়ে বিটিআরসিতে ২৯ জুন অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম পরিচালনাকারী এবং লাইসেন্সধারীসহ নতুন করে লাইসেন্সের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়। ন্যাশনওয়াইড আইএসপি লাইসেন্সের ফি পূর্বের এক লাখ টাকার পরিবর্তে নতুন করে নির্ধারণ করা হয় ২৫ লাখ টাকা। বার্ষিক নবায়ন ফি’ও এক লাখ টাকার স্থলে ৫ লাখ টাকা। আরবান আইএসপি’র লাইসেন্স ফি এক লাখের বিপরীতে ১৫ লাখ, নবায়ন ফি ৩ লাখ এবং রুরাল আইএসপি’র লাইসেন্স ফি ১ লাখ টাকা, বার্ষিক নবায়ন ফি ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া সকল আইএসপি’র জন্য ১ শতাংশ করে রেভিনিউ শেয়ারিং ও সামাজিক দায়বাদ্ধতা ফান্ডে দিতে হবে। একইভাবে ১৮ জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার উপস্থিতিতে পর্যালোচনা সভায় হয়। ওই সভায় বিটিআরসির প্রস্তাবনা অনুযায়ি ন্যাশনওয়াইড ও আরবান আইএসপি’র লাইসেন্স ফি ২৫ ও ১৫ লাখ নির্ধারণ করা হয় এবং রুরাল ফি আগের মতোই রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি’র এই সিদ্ধান্তের পর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠন আইএসপিএবি আপত্তি জানায়। গত ৭ আগস্ট তারা লিখিতভাবে বিটিআরসিকে জানায় নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এ খাতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাবে এবং তথ্য ও প্রযুক্তির সুষ্ঠ সেবা ব্যহত হবে। তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিটিআরসি’র অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব শাখা আইএসপি’র ফি ও ক্যাটাগরি নির্ধারণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। কমিশন গত ২৪ জুলাই ১২৯টি ন্যাশনওয়াইড আইএসপি’র মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বলা হয়- ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানই লোকসানের মধ্যে আছে। এছাড়া ২টি প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমান ১ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে। ২টি প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমান ১ কোটি টাকার মধ্যে এবং ৪টি প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমান ১০ কোটি টাকা। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে পূর্বের ফি কমিয়ে পুনঃনির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়। ন্যাশনওয়াইড আইএসপি’র জন্য নতুন করে লাইসেন্স ফি প্রস্তাব করা হয় ১০ লাখ, বার্ষিক এন্ডোর্সমেন্ট ফি ৫ লাখ, জোনাল আইএসপি’র (সেন্ট্রাল জোন) লাইসেন্স ফি ৫ লাখ (পূর্বে ১০ লাখ প্রস্তাব করা হয়) এবং বার্ষিক এন্ডোর্সমেন্ট ফি আড়াই লাখ টাকা, জোনাল আইএসপি (সাউথ-ইস্ট, নর্থ-ইস্ট, সাউথ-ওয়েস্ট, নর্থ-ওয়েস্ট জোন) এর লাইসেন্স ফি এক লাখ এবং নবায়ন ফি ৫০ হাজার প্রস্তাব করা হয়। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেভিনিউ শেয়ারিং ৫ শতাংশ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ডের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
বিটিআরসি’র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এ খাত হুমকীর মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আইএসপিএবি’র সভাপতি আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, নতুন করে কেউ লাইসেন্স নিলে তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি আদায় করা যায়। কিন্তু যারা ইতোমধ্যে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের কাছ থেকে আবার কেন ফি আদায় করতে হবে? এটি করলে প্রকারান্তেই গ্রাহকদের উপরই চাপ পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, আগে যেখানে এক লাখ টাকা ফি নেয়া হতে সেখানে ১০ লাখ টাকা নেয়া অযৌক্তিক। যারা অলরেডি লাইসেন্স নিয়েছে তারা কেন আবার রেজিস্ট্রেশন করবে। এই সিদ্ধান্ত ইন্টারনেট ব্যবসা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার এক দিকে বলছে সবার কাছে সব এলাকায় কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিতে হবে। অন্যদিকে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, তাহলে কিভাবে সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ