Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপকূলীয় অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনে কাঁকড়া

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অন্যতম খাত

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক্স উদ্যোগ, আধুনিক পদ্ধতি ও আহরণকারীদের নিরাপত্তা জরুরি
ক্স চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া চাষে ঝুঁকেছে চাষিরা
কাঁকড়া এখন হোয়াইট গোল্ড চিংড়ির পর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অন্যতম খাত। গোটা উপকুল আর সুন্দরবন জুড়ে এর ব্যাপক যোগান। প্রাকৃতিকভাবে আহরনের পাশাপাশি কাঁকড়া এখন আধুনিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। আর তাতেই বদলাচ্ছে কাকড়াচাষীর ভাগ্য আর দেশে আসছে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্ভাবনাময় এই জলজ সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এটাও হতে পারে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার। স্বল্প জায়গায় বিজ্ঞান সম্মতভাবে কাঁকড়া চাষ এখন খুলনাঞ্চলের মডেল। বিদেশের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা এখন চিংড়ির পাশাপাশি কাকড়া চাষে ঝুকেছে। উদ্যোক্তারা এখন অবহেলিত এই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
সূত্রমতে, এখন কাঁকড়া মৌসুম শুরু হয়েছে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের হাজার হাজার চিংড়ি ঘেরে প্রাকৃতিকভাবে কাকড়া চাষ করা হচ্ছে। সেই সাথে ঘেরের মাঝে নেট জাল দিয়ে এবং তার চারপাশে পানির ভিতর বাশের চটা দিয়ে পাটা তৈরী করে খাচার মধ্যে কাকড়া চাষ শুরু হয়েছে। গত ৫-৬ বছর লোকাল কাঁকড়ার হ্যাচারী নামে খ্যাত এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাকড়া চাষ প্রকল্প এ অঞ্চলের চাষীদের ব্যবসায় সফলতা নিয়ে এসেছে। বাণিজ্যিকভাবে খাঁচায় কাকড়া চাষ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। খুলনার বটিয়াঘাটার কাঁকড়া চাষী হরিদাস মন্ডল গত ৩ বছরে কাঁকড়া চাষ করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেছে। তিনি গাওঘারা গ্রামে আধা পাঁকা টিনের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার দারিদ্রের অভিশপ্ত জীবন। একইভাবে কাঁকড়া চাষ করে জীবনযুদ্ধে সফলতা অর্জন করেছে হালিয়া গ্রামের কমলেশ বালা, নোয়াইল তলার জাকির, সুরখালীর আসাফুর মাষ্টার, কয়রার কামাল শেখ, পাইকগাছার নরেশ মন্ডল প্রমুখ। এদিকে সুন্দরবনের শত শত নালা ও খালে এবং সমুদ্র পানিসীমা ও মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়া আহরণ চলছে। তবে গত বছর নৌদস্যুদের উৎপাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম কাঁকড়া আহরিত হয়। কিন্তু এ বছর এর ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলেছেন কাঁকড়া আহরণকারীরা, বনবিভাগ ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, আধুনিক পদ্ধতি ও আহরণকারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সরকার প্রতি বছর এখাত থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া আহরনের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘেরে ও পুকুরে কাঁকড়া উৎপাদন করে অনেকেই সফলতা পেয়েছে। তেমনি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করলে কাকড়া শিল্প থেকে দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হবে।
সংশ্লি­ষ্ট সুত্র জানায়, প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও বাড়ছে। কিন্তু হ্রাস পাচ্ছে এর উৎপাদন। কাঁকড়া আরোহণ মৌসুমে উপকুলীয় এলাকায় সহস্রাধিক জেলে সুন্দরবনের বিভিন্ন ষ্টেশন হতে পাশ সংগ্রহ করে গভীর বনে যায় কাঁকড়া আহরণের জন্য। রাজস্ব দিতে হয় জনপ্রতি নৌকাসহ ৩/৫ টাকা। গভীর সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টসহ সমুদ্র পর্যন্ত তারা কাঁকড়া আহরণ করে। কাঁকড়া আহরণকারীরা জানান, দস্যুদের উৎপাত না থাকায় এবার সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা জেলেদের আগমন বেশি হতে পারে। এছাড়া উপকুলীয় জেলা খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা চিংড়ি ঘেরগুলোতে প্রাকৃতিকভাবেই কাঁকড়া উৎপাদিত হচ্ছে। সংশ্লি­ষ্টদের মতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে কাঁকড়া রপ্তানি করে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি কাঁকড়ার দাম গ্রেড ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সিলা সেটরা (শিলা কাঁকড়া) কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এই কাঁকড়া সুন্দরবনে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত যে কাঁকড়া ধরা পড়ে তা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি এবং সরকারিভাবে ব্যাংক ঋণের সুবিধা দেয়া হলে উপকুলীয় জেলা ছাড়াও দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে কাঁকড়া রপ্তানি বিরাট সাফল্য বয়ে আনবে।
মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, আশির দশকের শুরুতে প্রথম অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি ব্যুরো (ইপিবি) সুত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। এরপর রপ্তানি বন্ধ থাকে প্রায় ৩ বছর। ১৯৮২-৮৩ অর্থ বছরে আবার বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এখাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আয়। ১৯৯০-৯১ সালে কাঁকড়া রপ্তানি করে আয় হয় ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এরপর ২০০১-০২ অর্থ বছরের এ খাত থেকে আয় হয় প্রায় ৫৩ মিলিয়ন টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই আয় গিয়ে দাঁড়ায় ২৫০ মিলিয়ন টাকায়।
কাকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভান্ডার সুন্দরবন। এখানে কাকড়া আহরণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার বন বিভাগ ব্যাপকভাবে টহল জোরদার করেছে। সিএফ আমির হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, কাঁকড়া আহরণের বিষয়ে ইতোমধ্যে বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে সর্তক করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া ও এর সাথে জড়িত তৃণমুল পর্যায়ের শত শত কাঁকড়া আহরণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোনরকম যেন হয়রানি না হয় সে বিষয়ে সজাগ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ