বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : সদিচ্ছা, আন্তরিকতা আর সমন্বয় থাকলে কোন ভাল কাজই কঠিন কিংবা অসম্ভব নয়। এটি প্রমাণ করে দেখালেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুবর্জ্য খুব দ্রæত অপসারণ করা হয়। ঈদের দিন (শনিবার) বিকেল ৫টার আগেই চট্টগ্রাম নগরী কোরবানির যাবতীয় পশুবর্জ্য মুক্ত হয়ে যাবে এমনটি কথা দিয়েছিলেন মেয়র। ঠিকই নির্ধারিত সময়ে সাফ-সুতরো ঝকঝকে হয়ে যায় পুরো মহানগরী। এমনকি অধিকাংশ জায়গায় বেলা ২টা থেকে ৩টার মধ্যেই সবকিছু পরিচ্ছন্ন করা হয়। যা চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নাছিরের সদিচ্ছা ও সাফল্যের নজির।
এখন আর কোথাও কোরবানি পশুবর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়েনা। নাকে রুমাল দিয়ে ঘুরতে হয় না। নেই কোথাও উৎকট দুর্গন্ধ। ঈদুল আযহায় এ যেন এক অন্যরকম চট্টগ্রাম বন্দরনগরী। আর সর্বত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা চোখে পড়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। বিভিন্ন স্থানে সর্বস্তরের লোকজনের আলাপচারিতায় গতকাল সোমবারও সবার মুখে মুখে উঠে আসে, বন্দরনগরীজুড়ে কোরবানির বর্জ্য খুব দ্রæত অপসারণ হওয়া এবং নাগরিক দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায় এখন পড়তে হচ্ছে না এসব কথা। কেউ কেউ বলছেন, খুব কম সময়ে কোরবানি পশুবর্জ্য অপসারণে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের প্রচেষ্টা ও সফলতার দিকটি দেশের অন্যসব শহর-নগরের জন্যও দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যেতে পারে।
১২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরী, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। কীভাবে এবারও কোরবানি পশুবর্জ্য ও আবর্জনা মুক্ত হবে এমনকি আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সবাই ছিলেন চিন্তিত। সেই সাথে গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এমনকি ঈদের দিনও ভাদ্রের বৃষ্টিপাতে কোরবানির বর্জ্য শহরময় ছড়িয়ে পড়লে নগরজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠার শঙ্কা ছিল অনেকেরই মনের কোণে।
তদুপরি মেয়র আ জ ম নাছির ঈদের মাত্র একদিন আগে বাসার মেঝে অকস্মাৎ পা পিছলে পড়ে যান। এতে তার কোমড়ে ও পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। কিন্তু এতে মোটেই দমে যাননি মেয়র। বরং তিনি আন্দরকিল্লাস্থ বাসায় হুইল চেয়ারে বসেই নিজের বাসাকে ‘কন্ট্রোল রুমে’ পরিণত করেন এবং ঈদের আনন্দ ও পারিবারিক সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে পুরো মহানগরীকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একরম হাতের মুঠোয় নিয়ে এসে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত বর্জ্য আবর্জনা অপসারণ কাজের অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজ-খবর ও সার্বক্ষণিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি দিক-নির্দেশনা দিতে থাকেন। বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের নিয়ে বাস্তব কাজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত টিম নিয়োজিত রাখেন।
এরআগে পশুবর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর সহযোগিতা চাওয়া হয়। নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দেয়া এবং বর্জ্য রাখার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঈদের আগে গত এক সপ্তাহ যাবত নগরবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা হয়। এতে আমরা আশানুরূপ সাড়া মিলে। আর এভাবেই চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ড ঈদের দিন বিকেল ৫টায় নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই কোরবানির বর্জ্যমুক্ত সুন্দর, পরিচ্ছন্ন নগরী হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম।
ঈদের দিন থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত মহানগরীর মেহেদিবাগ, জামাল খান, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, চন্দনপুরা, কাজীর দেউড়ি, ষোলশহর, মুরাদপুর, খুলশী, বাকলিয়া, এনায়েতবাজার, দেওয়ানবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে যাবতীয় কোরবানি পশুবর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত দেখা গেছে সর্বত্র। এ সময় এলাকাবাসীকে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এদিকে শনিবার নগরীর আন্দরকিল্লায় নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিকেল ৫টার মধ্যেই পুরো নগরীর কোরবানির পশুবর্জ্য অপসারণ করব। এরজন্য আমি আগেই কয়েকটি প্রস্তুতি ও সমন্বয় সভা করেছি। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা সব জায়গায় বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। নগরবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র বলেন, শুধুই একটি দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুক্রবার বাসায় পড়ে গিয়ে পায়ে কোমড়ে একটা ফ্র্যাকচার হয়েছে। যার কারণে একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও বাসা থেকে বের হতে পারিনি। সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে ২১ দিন। তাই পুরো মহানগরীটা প্রদক্ষিণ করার ইচ্ছে থাকলেও তা পারিনি। তবে আমি নিজেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় বজায় রেখেছি। কোরবানিদাতাদের সুবিধার জন্যও বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এরফলে নগরীকে দ্রæত বর্জ্যমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এতে আমিও সন্তুষ্ট, নগরবাসীও স্বস্তিতে আছেন। আগামী বছর এই উদ্যোগটাকে একশ’ ভাগ সফলতায় উন্নীত করব ইনশাআল্লাহ।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ভাঙাচোরা সড়ক, রাস্তাঘাট সংস্কার প্রসঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গভীয় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই মহানগরীর রাস্তাঘাট সড়কগুলোর সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে। তখন আর ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে রাস্তাঘাটের এ সমস্যা থাকবে না। তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর ঘন ঘন অতিবৃষ্টি ও সামুদ্রিক জোয়ারের কারণে নগরীর রাস্তাঘাট সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামবাসীর সমস্যা নিরসন ও উন্নয়নের ব্যাপারে সবসময়ই আন্তরিক। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজেই গ্রহণ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।