বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আড়াইহাজারে মেঘনা নদী বেষ্ঠিত দুর্গম কালাপাহাড়িয়া গ্রামে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মাহমুদ সুমন(৩০)কে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসীরা। এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত রুবেলের পরিবারসহ আশপাশের ১৮জন মারাত্মক আহত হয়েছেন যাদের মধ্যে ১৭জনকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন বিকালে এই হত্যাকান্ডের পর পুরো এলাকায় কোন ঈদের জামাত(নামাজ) অনুষ্ঠিত হয়নি, এমনকি দেয়া হয়নি কোন কোরবানী। হত্যাকান্ডের জের ধরে ঈদের দিন থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০টি ঘর-বাড়ি। রোববার সরজমিনে ঐ এলাকায় গেলেও পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে সেখানে গণমাধ্যম কর্মীরা নিজেদের পরিচয় দিতে পারেননি। মেঘনায় বালু উত্তোলন নিয়ে গত কয়েক বছরে গ্রামবাসীর সাথে কমপক্ষে ২০বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলেও মামলা হয়নি থানায়। এদিকে রোববার নিহত পুলিশ সদস্য রুবেলের বড় ভাই কামাল হোসেন বাদী হয়ে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনকে প্রধান আসামী করে আরো ৩২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামী করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন ও ইউপি সদস্য রুপ মিয়ার মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। রুপ মিয়া কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি গ্রামবাসীর পক্ষে এই বালু উত্তোলনে বাধা দিয়ে আসছিলেন। স্থানীয়রা জানান, এর আগেও স্বপন চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে একাধিকবার রুপ মিয়ার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, রূপ মিয়ার হাত কেটে নিয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার(১ সেপ্টেম্বর) সকালে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মাহমুদ সুমন ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসে। ওই দিন দুপুর ২ টায় কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন বাহিনী রূপ মিয়া মেম্বারের বাড়ি ঘেরাও করে হামলা চালায়। এসময় রুপ মিয়াকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ছেলে পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মাহমুদ সুমনকে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে রুবেল মাটিতে লুটয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে এলাপাথারী কুপিয়ে ও টেটা বল্লম দিয়ে আঘাত করে। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও দা, টেটা, বল্লমসহ দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মূমূর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখে। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে কনস্টেবল রুবেলকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। রুবেলের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে স্বপন চেয়ারম্যানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ফরিদ,ওবায়দুল ইসলাম বাদল,মহিউদ্দিন ও লাল মিয়ার বাড়ির একাংশ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে থানার ওসি এম এ হক অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিরিস্থি শান্ত হয়। ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অপরদিকে এই ঘটনায় নিহত রুবেলের ভাই কামাল হোসেন আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বাদী কামাল হোসেন জানান, এর আগেও তার বাবা রূপ মিয়া মেম্বারকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে হাত কেটে নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। স্বপন চেয়ারম্যানে নেতৃত্বে একদল আগ্নেয়াস্ত্রধারী মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে ১৫/১৬টি ডেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। তাদের অস্ত্র ও ক্ষমতার ভয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে কেউ অবৈধ কাজের বাঁধা দিতে পারে না।
এব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি এমএ হক জানান, মামলা গ্রহন করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনের মুঠাফোনে গত ২দিন ধরে ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।