Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

সায়ীদ আবদুল মালিক: | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল সোমবার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল ঈদের উৎসবমুখর পরিবেশ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে নগরীর বাসিন্দারা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমান। ঈদ উপলক্ষে নতুনরূপে সজ্জিত বিনোদন কেন্দ্রে শিশু-কিশোরেরা নিজেদেরও আরো রঙিন করে তুলেছে।
গতকাল রাজধানীর শিশুপার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, ধানমন্ডি লেক, চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, শ্যামলী শিশু মেলা কিংবা ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক সবখানেই ছিলো উপচেপড়া ভিড়। নতুন পোশাকে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ এসব বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে সময় কাটিয়েছেন।
শরতের মেঘভাঙ্গা প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সকাল থেকেই শাহবাগের শিশুপার্কের রাইডগুলোতে চড়ার জন্য অভিভাবকসহ শিশুদের দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রখর রোদ থাকলেও শিশুদের মুখচ্ছবিতে ছিল না বিরক্তির ছাপ।
শাহবাগ শিশুপার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, প্রতি বছরই আমরা নিজেদের আনন্দ-বিনোদন ভুলে শিশুপার্ক পরিচালনা করি। এটা আমাদের প্রতি বছরের ঈদের সময়ের কাজ। শিশুপার্কে আসা শিশুরা যাতে আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকে।
প্রথম দিন প্রতিকুল আবহাওয়া এবং কোরবানির পশু জবাই ও গোশত প্রসেসিংয়ের কারণে নগরবাসীকে সারাদিন ঘরেই থাকতে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মত বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছুটেছে রাজধানীবাসী।
ঈদের তৃতীয় দিন বিকেলে রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র শহীদ জিয়া শিশু পার্কে ছিল উপচে পড়া ভিড়। পার্কটি শিশুদের জন্য হলেও সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ মোড় সংলগ্ন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘেঁষা শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। সোমবার বিকেলে পার্কে ঢুকে দেখা যায়, ভেতরে তিল ধারণের জায়গা নেই। বাবা-মায়ের হাত ধরে হাজার হাজার শিশু পার্কে এসেছে ঈদানন্দ উপভোগের জন্য। প্রতিটা রাইডের সামনেই ছিল দীর্ঘ লাইন। ফাঁকা জায়গাগুলোতে নরম ঘাসের উপর পরিবারসহ বসে অনেকেই সময় কাটিয়েছেন।
এ ছাড়া লম্ফ-ঝম্ফ রাইড, ঝিক ঝিক রেল গাড়ি, জেট প্লেন, নাগরদোলা, ঘূর্ণায়মান ঘোড়ায় চড়ে শিশুরা আনন্দ উপভোগ করেছে। কোনো কোনো রাইডে বয়স্ক মানুষকেও চড়তে দেখা গেছে।
কথা হয় ঝিকাতলা থেকে দুই বাচ্চাসহ শিশু পার্কে আসা মরিয়ম বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা নেই। আর যেগুলো আছে, সেগুলোতেও সব সময় আসা যায় না। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হলে যানজটে পড়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঈদের সময় যানজট কম থাকে। সব সময় চেষ্টা করি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় শহীদ জিয়া শিশু পার্কে রাইড ও জায়গার সংকুলান কম থাকার অভিযোগ আনেকেরই। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে যতো দর্শানার্থী শিশু পার্কটিতে আসে সে তুলনায় রাইড এখানে নেই। জায়গাটাও খুব বিস্তৃত পরিসরে নয়।
তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী তো বটেই, অনেক বয়স্ক মানুষদেরও দেখা গেছে ঈদের তৃতীয় দিন যানজটমুক্ত ফাঁকা রাস্তার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কে ঘুরতে এসেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কেউ কেউ পরিবারের সবাইকে নিয়ে মনের আনন্দে সময় কাটিয়েছেন নানা প্রজাতির বৃক্ষে সাজানো রমনা পার্ক ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
এদিকে ঈদের তৃতীয় দিন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে পুরো এলাকা ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কড়া নজরদারিতে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সামাল দিতে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকের পুলিশবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন সদা প্রস্তুত। শিশুপার্কের মতো একই অবস্থা শ্যামলীর শিশুমেলায়। এই পার্কেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে এই সব বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। লোকে লোকারণ্য ছিল ঢাকা চিড়িয়াখানাও। চিড়িয়াখানায় হাজার হাজার দর্শনার্থী এসেছেন পশুপাখি দেখার জন্য।
মিরপুর চিড়িয়াখানার কিউরেটর নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দর্শনার্থীদের আগমন শুরু হয়েছে। বাড়তি ভিড় সামলাতে ও দর্শনার্থীদের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু ঈদের দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। গতকাল দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখের বেশি। আজ আরও বেশি হবে বলে তিনি জানান।
বছরের অন্য সময়ে রাজধানীর প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দর্শক উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় থাকলেও ঈদের ছুটিতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনে কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের বøক বøাস্টার সিনেমাসহ রাজধানীর সব প্রেক্ষাগৃহে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনীতে হাউসফুল যাচ্ছে। শ্যামলীতে শিশুদের বিনোদনের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত শিশু মেলায়ও জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবেশমুখে দর্শনার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে টিকিট বিক্রেতাদের। অল্প পরিসরে সেখানে অনেক রাইডারের ব্যবস্থা থাকায় শিশুদের প্রিয় পার্কের তালিকায় রয়েছে এটি।
শ্যামলীর শিশু মেলা পার্কের ব্যবস্থাপক নূরুল হুদা মুকুল বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকায়, পার্কে দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যাও বেশি হয়েছে।
মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল দুপুরে চিড়িয়াখান গেইটে দেখা গেছে, দীর্ঘ লাইন দিয়ে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করছে। ঘুরতে আসা কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঙ্গে কথা হয় মিরপুর চিড়িয়াখানায়। তাদের একজন জিনিয় পারভির বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে চিড়িয়াখানা এসেছি। অনেকদিন ঢাকায় থাকলেও বহুদিন এখানে আসা হয়নি। পরিবারের সঙ্গে ছোট বেলায় আসেছি। কিন্তু তখন হই হুল্লুড় করতে পারিনি। এবার পরিকল্পনা করে আসেছি মজা করবো।
চিড়িয়াখানার ভেতরে হকারদের আনাগোনা এবং তাদের পণ্য কিনতে বাধ্য করার চিত্র চোখে পড়েছে। কোথাও যুগল দেখলে তাদের সামনে নানা ফন্দি করে কিনতে বাধ্য করে। দর্শনার্থীদের এই ভোগান্তি থেকে এবারও রক্ষা করতে পারেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানা দেখে বোটানিকাল গার্ডেনের প্রবেশ মুখেও ভিড় ছিল বিকেল পর্যন্ত। বোটানিক্যাল গার্ডেনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আহমদ কামাল চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, সময়ের অভাবে তেমন একটা ঘুরতে বের হওয়া সম্ভব হয় না। তাই ঈদ উপলক্ষে আজ পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি।
পুরনো ঢাকার লালবাগের কেল্লায়ও ছিল উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকেই আসতে থাকে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সরজমিন দেখা গেছে, প্রচন্ড ভিড় থাকায় যারা টিকিট বিক্রির দায়িত্বে আছেন তারা অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছেন। গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই পরী বিবির মাজার। দর্শনার্থীরা প্রথমেই মাজারের সামনে গিয়ে দেখছেন কবরটি। কেউ বসে সময় কাটাচ্ছেন। শিশুরা শুকনো ফোয়ারার নিচে নেমে উল্লাস করছে। তারপর ছুটছেন পাশের দক্ষিণ দিকের দুর্গে। নানা বয়সী দর্শনার্থী দুর্গে উঠছেন আর ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এরপর ছুটছেন কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানায়। দরবার ঘরের নিচতলায় হাম্মামখানায় প্রচন্ড ভিড় ছিল। মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনটি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করায় সেই আমলের বিভিন্ন হালকা-ভারি অস্ত্র, যুদ্ধের পোশাক, গোসলখানা ও ব্যবহার্য তৈজসপত্র ঘুরে-ফিরে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা। রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দনপার্ক এবং গাজীপুরের সাফারিপার্কেও উপচেপড়া ভিড় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ