বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বিজিপি, পুলিশ ও মগদস্যুদের বর্বর কায়দায় দমনাভিযান এবং গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। একে একে মুসলমানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বোমা ও গুলিবর্ষণ করে খুন, কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মহিলাদের গণধর্ষণ, বাড়িঘরে লুটতরাজ, ধরপাকড় চলছেই। পৈশাচিক কায়দায় দলন-পীড়ন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙ্গালী’ আখ্যায়িত করে খেদানোর নামে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে তাদেরকে জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। জাতিসংঘ সূত্রের হিসাবে এ যাবত প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে এবং মুসলিম রোহিঙ্গা মহিলারা তাদের ইজ্জত-আব্র“ রক্ষায় বাধ্য হয়ে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছে। আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধ কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের জিরো লাইনে বা নো ম্যানস ল্যান্ড বরাবর ভিড় করেছে। এ পর্যন্ত আরাকানের বিভিন্ন গ্রামে গণহত্যার শিকার হয়েছে শত শত রোহিঙ্গা। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত এক হাজার।
আজ শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহার দিনটি লাখো নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গার জন্য ছিল স্বজন হারানোর শোক-বিলাপ আর নিজেদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি পেছনে ফেলে আসার দুঃখ বেদনা আহাজারিতে সকরুণ একটি দিন। যে দিনটিতে আনন্দের বদলে ছিল ক্ষুধা-পিপাসা, চিকিৎসা ও মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুর অভাব। যাদের একসময় ছিল স্বচ্ছল সুন্দর সংসার তা এখন ছারখার হয়ে গেছে। লতা-পাতা, খড়-খুটো, চাটাই বা পলিথিন দিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে এবং টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাছে ঝুপড়ি তৈরি করে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের মাঝেই পশুপাখির চেয়েও আরো অধম ও দুঃসহ অবস্থায় দিনগুজরান করছে ভাগ্যহত রোহিঙ্গা হাজার হাজার উদ্বাস্তু। তাছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যৌথ নির্মম দমনাভিযান থেকে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা আরাকানের পাহাড়-জঙ্গল, নদীতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
গত ২৪ আগস্ট আরাকানে (রাখাইন) ২০টি নিরাপত্তা চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার সাথে সাথেই রাজ্যজুড়ে সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়নসহ সবরকম অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি করেছে। এখনও সীমান্ত থেকে গুলিবর্ষণ ও বোমার আওয়াজের সাথে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের করুণ আহাজারি ভেসে আসছে। রোহিঙ্গাদের বসতিগুলোর উপর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে ভেসে আসা আরও একজন রোহিঙ্গা মুসলমান মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে শাহপরীর দ্বীপের কাছে লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে বার্মিজ থামি ও ব্লাউজ পরিহিত প্রায় ২৫ বছর বয়সী মহিলার এ লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত ৪ দিনে নাফ নদী থেকে ভাসমান ৫০ জন রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হলো। এর আগে গত বুধবার ৪ জন, বৃহস্পতিবার ১৯ জন ও গতকাল শুক্রবার ২৬ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরাকানে বর্বর দমনাভিযান থেকে রেহাই পাচ্ছে না সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারাও। নির্মম অত্যাচার, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বেশক’টি হিন্দু পরিবারও। এ অবস্থায় আরাকান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সেখানকার ৪৯৫ জন বর্মী আরাকানী হিন্দু। তারা বর্তমানে উখিয়ায় একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে ঠাঁই নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আরাকানের কয়েকটি হিন্দুপাড়ায় অন্তত ১৫ জন হিন্দুকে গুলি ও বোমা মেরে হত্যা এবং নারী ধর্ষণের ঘটনায় তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
এদিকে আরাকানের বিভিন্ন গ্রামে ও রাস্তাঘাটে মিয়ানমার বাহিনীর অব্যাহত দমনাভিযানে গুলিবিদ্ধ আরও ৮ রোহিঙ্গা চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে তারা ভর্তি হন বলে চমেক পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে। আরাকানে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযানে এ নিয়ে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় পুড়ে যাওয়া মোট ৪১ জন রোহিঙ্গা চমেকে ভর্তি হলেন। তাদের মধ্যে একজন গত ২৬ আগস্ট এবং আরও একজন ৩০ আগস্ট মারা যান। সর্বশেষ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ভর্তিকৃতরা আরাকানের মংডু এলাকার বাঘঘোনা ও মেরুল্লা এলাকার বাসিন্দা। তারা হলেন নাজিম উল্লাহ (২৫), মো. হাসান (২৪), আবদুল মোতালেব (২৬), ওসমান গণি (২০), সাদ্দাম হোসেন (২২), নুর হুদা (২৮), আসমত উল্লাহ (২৩) ও আবু বক্কর সিদ্দিক (২৪)।
আহতরা জানান, আরাকানে সেনাবাহিনী নির্বিচারে খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর একের পর এক জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার বাহিনীর পাশবিক অত্যাচারে সেখানে টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই। রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানান, গত ২৪ আগস্ট থেকে ভয়াবহ মাত্রায় দমন-পীড়ন শুরু হলেও বিগত ১১ আগস্ট আরাকানের মুসলমান জনসংখ্যা-বহুল বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন ও টহলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এতে রোহিঙ্গারা অভাব-অনটনে ও সীমাহীন আতঙ্কে পড়েন। এরপর শুরু হয় চরম ও বর্বর অত্যাচার-নিপীড়ন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়ন। দমনাভিযানে আটক ও গুম হওয়া শত শত রোহিঙ্গার ভাগ্যে কি ঘটেছে কেউই তা বলতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।