Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোগান্তির ঈদযাত্রা

সড়কপথে যানজট : শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারে অপেক্ষায় কয়েকশ’ গাড়ি : ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পরা ভিড়। এর মধ্যে ট্রেনে চাপ সবচেয়ে বেশি। সিডিউল বিপর্যয়ের পরেও ট্রেনের ছাদেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গতকাল দুপুরে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সড়কপথে যানজট আর ধীরগতির সীমাহীন ভোগান্তি। আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ৩/৪ ঘণ্টা। অন্যদিকে পদ্মায় তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের জন্য গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও অপেক্ষায় ছিল শত শত গাড়ি। সব মিলে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের আনন্দ মøান হয়ে গেছে ঈদযাত্রার সীমাহীন ভোগান্তিতে।
সকালে ঘরে ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে। বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনেই দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়। জায়গা পাওয়া নিশ্চিত করতে অনেকে আবার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উল্টোপথে ট্রেনে চেপে বসেছেন। সেই ট্রেন কমলাপুরে এসে যাত্রী নামিয়ে নতুন যাত্রী নিয়ে আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটছে। সকাল সাড়ে ৮টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন প্লাটফরমে আসতেই যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে সেই ট্রেনে উঠে পড়েন। ট্রেন পরিষ্কার করার জন্য ওয়াশফিটে নেওয়া হবে জানিয়ে মাইকের মাধ্যমে যাত্রীদের নেমে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে কান দেননি কেউ। পরে যাত্রী বোঝাই করেই ট্রেনটি ওয়াশফিটে নেওয়া হয়। ওয়াশফিট থেকে আবার প্লাটফরমে এনে দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে রংপুর এক্সপ্রেস। এসময় ট্রেনটির ছাদেও অনেক যাত্রী ওঠে। রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী প্রথমে ছাদে ওঠার জন্য যাত্রীদের নির্বৃত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে পরে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি পৌনে দুই ঘণ্টা দেরি করে আসে। এ সময় অনেকে জানালা দিয়ে ঢুকেও আসনে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। নীলসাগর ও রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়াও গতকাল বেশ কয়েকটি ট্রেন দেরি করে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা। কিন্তু সেটি দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ছাড়ে। খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৭টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে ছেড়েছে ৮টা ২০ মিনিটে। তবে একতা, অগ্নিবীণা, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়েছে সময়মত। অন্যদিকে, চট্টগ্রামগামী ট্রেনগুলোও সময়মতো ছেড়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর ছেড়ে গেছে ২৬টি ট্রেন। ট্রেনগুলো কমলাপুরে আসতে দেরি হওয়ায় সেগুলো ছাড়তেও বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, যাত্রীর অতিরিক্ত চাপও দেরি হওয়ার কারণ। প্রতিটি স্টেশনে যে সময় দেওয়া থাকে, যাত্রী ওঠানামায় তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। তবে দেরি যে খুব বেশি হচ্ছে তা নয়। অনেক চেষ্টা করেও যাত্রীদের ছাদে ওঠা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। অনেকের মতে, সড়কপথে খানাখন্দ ও যানজট এড়াতে এবার ঈদে ট্রেনযাত্রার প্রতি ঝুঁকেছে মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় ঘরে ফেরা মানুষের উপচে পরা ভিড় কমলাপুরে।
অন্যদিকে, সড়কপথে এবারও যানজটের ভোগান্তি ঘরমুখি মানুষকে বেশি যন্ত্রনা দিচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট থাকলেও তা সহনীয় বলে দাবি করেছেন হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা। গতকাল সারাদিন যানজট থাকলেও তা বেশি দীর্ঘ হয়নি বলে জানান তিনি। যাত্রীরাও অবশ্য সেরকম বলেছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুলতার কাছে যানজট থাকলেও তা বুধবারের তুলনায় কম বলে জানা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও আগের চেয়ে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথের যাত্রীরা। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে ঈদযাত্রীদের পাশাপাশি কোরবানির গরুর ট্রাকের চাপও আছে। এ অবস্থায় ফেরি স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় ঘাটে যানবাহনের লাইন ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ হচ্ছে। শিমুলিয়া ঘাট বিআইডবিøউটিসির এজিএম খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালেদ বলেন, বুধবার শিমুলিয়া ঘাট ঘিরে তিন শতাধিক যান পারাপারের অপেক্ষায় থাকলেও চাপ তুলনামূলকভাবে কম। তিনি জানান, পদ্মায় তীব্র ¯্রােত ও বাতাসের কারণে স্বাভাবিক এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে ফেরিগুলোর পদ্মা পাড়ি দিয়ে কাঁঠালবাড়ী পৌঁছাতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে তিনশর বেশি গাড়ি শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। একই কারনে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ঈদে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অপরদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার সেই ভয়াবহ যানজট আগের মতো নেই। সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় টঙ্গী, ভোগরা বাইপাসসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি।
এদিকে, বাসের অপেক্ষায় টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষার পালা শুরু হয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনালে অপেক্ষমাণ সাজ্জাদ হোসেন খান জানান, সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট সংগ্রহ করেছেন তিনি। বাস এখনও না আসায় অপেক্ষায় বসে আছেন। প্রতিটি বাস ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা দেরিতে টার্মিনালে ফিরছে জানিয়ে মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, গাড়ি না আসলে তো আর যাত্রীরা যেতে পারবে না। তবে ধীরে ধীরে যানজট কমিয়ে আসায় গাড়িগুলো দ্রæত ফিরছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গাবতলী টার্মিনালেও রাতে অনেক বাস সময়মতো না ফেরায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
অন্যদিকে, রেলপথের মতো উপচে পরা ভিড় না থাকলেও নৌপথে ভিড় একেবারে কম নয়। সকালে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের মোটামুটি ভিড় দেখা গেলেও অতীতের মতো উপচে পড়া চাপ ছিল না।
অবশ্য বিকালে সদরঘাটে যাত্রীর চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিকালের পর বেশিরভাগ লঞ্চ ছেড়েছে যাত্রী বোঝাই করে। কোনো কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীও তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিআইডবিøউটিএ-এর একজন কর্মকর্তা জানান, গত রোজার ঈদের তুলনায় এবার যাত্রীর চাপ কম। তিনি বলেন, নদীতে তীব্র ¯্রােত থাকায় অনেকে নৌপথে ভ্রমণ করছেন না। তারা বিকল্প পথে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ