Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অপরাধ খোঁজাই দুদকের লক্ষ্য সেকেন্ড হোম তদন্তে দুদক

| প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক
সেকেন্ড হোম (দ্বিতীয় বাসস্থান) নামে খ্যাত মালয়েশিয়ার অবৈধভাবে অর্থ বিনিয়োগকারীদের তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিকভাবে ১০৫০ বাংলাদেশিকে চিহ্নিতও করেছে দুদক। এদের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রবাসীদের নাম রয়েছে। তাদের স্থায়ী অস্থায়ী ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ অনুসন্ধানে একজন উপ-পরিচালকের নেতেৃত্বে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যে সকল বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় আবাস গড়েছেন তাদের বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে গত ১২ আগস্ট চিঠি দিয়েছে দুদক। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করেই মালয়শিয়ায় মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করতে দেশের অর্থ পাচার করেছেন নাকি বৈধ পথে অর্থ বিদেশে নিয়ে গেছেন। অর্থ্যাৎ মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অপরাধ খোঁজাই দুদকের লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফীন ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি আরো বলেন, ১ হাজার জনের একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে বলেও আমি জেনেছি। পরবর্তীতে বিস্তারিতভাবে জানা যাবে। তিনি আরো বলেন, আডিম নতুন যোগদান করছি; এখন এর বেশি কিছু বলতে পারছি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত এক যুগে অন্তত ৩ হাজার ৩৪৫ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছে। এতে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। মালয়েশিয়া সরকার ২০০২ সালে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় সেকেন্ড হোম প্রকল্প শুরু করে। ২০০৩ থেকে গত বছর পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯১ জন সেকেন্ড হোম সুবিধা নেয় বলে জানা যায়। তালিকাভুক্ত বাংলাদেশিরা দেশ থেকে টাকা সরিয়ে সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন; যা সরাসরি মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধের শামিল। ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টের ৫(১) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউই দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাঠাতে পারেন না। দেশের বাইরে অর্থ পাচার ঠেকাতে তারা মডেল কেস হিসেবে মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এজন্য মালয়েশিয়ায় গিয়ে তদন্তের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে পাওয়া ১০৫০ জন বাংলাদেশি যারা মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আবাস গড়েছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে বিনিয়োগের প্রমাণ পাওয়ার পরই তাদের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা। গত ১২ আগস্ট ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বরাবর পাঠানো চিঠিতে ১০৫০ জন ব্যাক্তি ও পাসপোর্টধারীর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং পাসপোর্ট নম্বরের আদ্যক্ষরের ব্যাখ্যাসহ সংশ্লস্ট তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম ওই অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছেন। টিমের অপর সদস্য হলেন-সহকারী পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মঞ্জুরুল ইসলাম। এর আগে দুদক টিম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে। সেই তথ্যের পাশাপাশি সুনির্দিষ্টভাবে নামের তালিকাও নেয়। অর্থ পাচারে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সন্দেহভাজন কতজনের নাম আছে তাও চায় দুদক।
সেই সময় কারণ মালয়েশিয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তালিকা ধরে একসঙ্গে সকল ব্যাক্তির তথ্য দেয়া মালয় সরকারের নীতিবহির্ভূত। মালয়শিয়া থেকে তথ্য পেতে আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ এমএলআর পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে মালয়েশিয়া সরকার। ১৩ জন হাই প্রোফাইল ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেছিল দুদক। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সরকারের কাছে সেকেন্ড হোমধারীদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে এমএলএআর পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, এভাবে ঢালাও তথ্য চাইলে দেয়া সম্ভব নয়। কোনো ব্যক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য চাইলে তা দেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তালিকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এতে দেখা যায়, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে নতুন করে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৮৭ জন, বিএনপি-জামায়াতের ৯৬ জন এবং বাকি ২৬৫ জন সুবিধাভোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলা।
দুদকের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমাানে মালয়েশিয়া হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য। সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করতে তেমন কোনো বাধা নেই। যারা ওই দেশে বাড়ি-গাড়ি বা ব্যবসা করছেন, কোন পথে সেই টাকা নিয়ে যাচ্ছেন সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দুদক টিম এবার বেশ সক্রিয় কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, আগেও অনেব বার এই কাজ শুরু হয়েছিল। তবে বেশি দুর অগ্রগতি তেমন ছিল না। দেখা যাক এবার কি হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশে অর্থ পাচারে মনোযোগ দেন। এরপর বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে স্মারক সই করেন। যাতে করে পরসপরস সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা যায়। এরপর বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয় নতুন ভাবে উঠে আসে। চলতি বছর শুরুর দিকে এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তা ডেভিড জে. ইটন দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অর্থ পাচারসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি আলোচিত হয়। পরে এফবিআই থেকে দুদকের কাজে সহায়তা দেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়। এরপর দুদক ও ভুটার দুদকের সঙ্গে মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে আমেরিকাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে দুদক আরো সমঝোতা স্মারক করবে। যাতে করে বিদেশীদের অবৈধ উপায়ে বিনিয়িাগকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ