Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনোয়ারায় পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি গ্রাহক

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দালালরাই এখন পল্লী বিদ্যুতের হর্তাকর্তা। সারা অফিসে দালালদের দৌঁড়াদৌড়ি প্রতিদিনের দৃশ্য। সাধারণ মানুষ গেলে কাজ হয় না। দালাল ধরলে হয়ে যায় দ্রæত। এসব দেখে দালালের কাছেই ধরনা দেন সবাই। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিস শতাধিক দালাল নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,পল্লী বিদ্যুতের আনোয়ারা জোনাল অফিসে সেবা নিতে এলে সাধারণ মানুষকে দালালের শরণাপন্ন হতে হয়। তা নাহলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর। একদিকে দালালচক্রের অর্থ-বাণিজ্য অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অনিয়মের কারণে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। সরকারি নিয়মে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ পেতে মিটারপ্রতি আবেদন ফি একশ’, জামানত ফি ছয়শ’ ও সদস্য হতে বিশ টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু দালালদের দৌরাত্ম্যে নতুন গ্রাহকদের মিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। নচেৎ মিটারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বছরের পর বছর ঘুরানো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অফিস থেকে আবেদনের ফাইল হারিয়ে গেছে জানিয়ে আবার নতুন করে আবেদন করার জন্যও বলে থাকেন ওই অফিসের কর্তাব্যক্তিরা। উপজেলার জুঁইদন্ডী গ্রামের সাকের উল্লাহ (২৭) জানান,ওই এলাকায় বিদ্যুতের আলোর ছোঁয়া লাগেনি এমন ১১টি পরিবারের জন্য খুঁটি স্থাপন ও মিটার সংযোগ বাবদ প্রতিটি পরিবার ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। পল্লী বিদ্যুতের বিল বিতরণকারী আবদুল গফুর ও মোস্তাক আহমদ নামের দুজন লোক এসব টাকা তুলছেন। তবে এখনো বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা হয়নি। এমন চিত্র শুধু জুঁইদন্ডীরই নয়,পুরো উপজেলাজুড়ে। নতুন সংযোগ থেকে শুরু করে মিটার স্থাপন,বিদ্যুতের খুঁটি সরানো, ট্রান্সফরমার পরিবর্তনসহ প্রতিটি সেবার জন্য গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, লাইনম্যান, মিটার রিডার সবাই ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত। আর তাদের কাজ সহজ করে দিচ্ছেন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় দালালরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইলেকট্রিশিয়ান জানান, প্রতিটি আবেদনের সমীক্ষা রিপোর্ট, মিটার ফি জমা, মিটারের ব্যবস্থাসহ সংযোগ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে অন্তত ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। না হলে বছরের পর বছর আবেদন পড়ে থাকবে কিছুই করার নেই। সম্প্রতি স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানীতেও পল্লী বিদ্যুতের হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। এছাড়া গ্রাহকদের হাজারও অভিযোগ প্রতিনিয়ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে জমা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নের অন্যতম কান্ডারী আরইবি। এ জন্য সংস্থাটি হাজার হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু জনগণ সেবা পেতে পদে পদে যেভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ আনোয়ারা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো.আকতার হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে ইনকিলাবকে জানান, তাদের অফিসে দালালের অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন,কেউ যদি দালাল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সে বিষয়ে অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ