পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। খানাখন্দে ভরা মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি। তারপরেও দুরপাল্লার বাসে উপচে পরা ভিড়। লঞ্চ ও ট্রেনে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছে মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল উপচে পরা ভিড়। আজ থেকে এই ভিড় আরও বাড়বে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট ছিল। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার মেঘনা ও দাউদকান্দি অংশে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা অংশে যানজট ছিল ভয়াবহ। এই তিনটি স্থানের মহাসড়কের ভাঙ্গাচোরা অংশ এখনও মেরামত করা হয়নি। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, যানজটের কারনে মহাসড়কের এসব অংশে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। যেখানে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। যদিও সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের কোথাও এখন আর যানজট নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ছয়টি বড় মহাসড়কের মধ্যে চারটির বিভিন্ন অংশ ছোট-বড় গর্তে ভরা। বন্যায় নিমজ্জিত হয়ে অনেক জেলা সড়কও বিধ্বস্ত। সাময়িক মেরামত করলেও তা বৃষ্টির পানিতে আবার নষ্ট হচ্ছে। এই ছয়টি মহাসড়কের সঙ্গে দেশের ৬৪ জেলারই কোনো না কোনোভাবে যোগসূত্র আছে। এ পরিস্থিতিতে ঘরমুখী মানুষ আর ঢাকামুখী কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের যাতায়াতে ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদকে সামনে রেখে ঢাকার বাইরে যেতে যেমন ভোগান্তি, তেমনি ভোগান্তি ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়েও। একজন ভুক্তভোগি বলেন, গাজীপুর থেকে মহাখালী বাস আসতে লেগে যায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে লাগছে ১০-১২ ঘণ্টা। এছাড়া ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল এই চারটি রুটে তিনগুণ বা তারও বেশি সময় লাগছে। এর কারণ মহাসড়ক খানাখন্দে ভরা। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঈদের আগে জরুরী ভিত্তিতে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের জন্য নির্দেশনা জারি করলেও এখনও বেশিরভাগ মহাসড়ক মেরামত সম্পন্ন হয়নি।
অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটির চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে গত বছর। এই চারলেনের মহাসড়ক দুটিতেই যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীদের মূল দুর্ভোগ ঢাকার যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী অংশের হাঁটুসমান গর্ত এবং মেঘনা গোমতী সেতুর দুইপাড়ের যানজট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী অংশ বেহাল। ময়মনসিংহের পর জামালপুর ও নেত্রকোনার পথের মহাসড়কের অবস্থাও ভালো নয়। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুর দুই পাড়ে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। ভুক্তভোগিদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই দুই সেতু ছাড়াও কুমিল্লা অংশে কমপক্ষে ১০টি স্থানে বাস ও বিভিন্ন যানবাহন থামার জায়গা স্থাপন করায় কোনো গাড়িই নির্ধারিত গতিবেগে চলতে পারে না। অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর অংশে গতকালও ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঘরমুখি যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে দেশের সড়ক-মহাসড়ককে নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে অন্তত ৩৪টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু সা¤প্রতিক বন্যা ও ভারি বর্ষণের কারণে সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে, ঈদ আসছে একথা জেনেও সওজের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার গাফিলতিতে মহাসড়ক সংস্কারের কাজ পিছিয়েছে। যে কারনে ঈদের আগে সেগুলো কোনোভাবেই মেরামত করা সম্ভব হবে না।
গত ৯ আগস্ট সিরাজগঞ্জে বেহাল সড়ক পরিদর্শন করতে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী করতে ১০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর সেই নির্দেশও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এতে করে ঘরমুখি মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, নিরাপদ যাত্রার আশায় এবার ট্রেনের দিকে মানুষ বেশি ঝুঁকেছে। গতকাল ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে ট্রেনগুলোতে ছিল উপচে পরা ভিড়। রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক গতকাল কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শন করে জানান, বেশিরভাগ ট্রেনই সিডিউল অনুযায়ী চলছে। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেনে ভিড়ের কারনে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও তারা খুশি।
অপরদিকে, টিকিট অব্যবস্থাপনা, কুলিদের হয়রানী, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, টিকিট কালোবাজারী, ইজারাদারদের দৌরাত্বে ঈদযাত্রায় নৌ-পথের যাত্রীরা পদে পদে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এবারের ঈদে সারাদেশের নৌ-পথের যাতায়াতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের ঈদুল আযহায় ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ দেশের বিভিন্ন নৌ-পথ ব্যবহার করছে। গত কয়েকদিন ধরে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা ঢাকার সদরঘাট, বরিশাল নদীবন্দর, চাঁদপুর নদীবন্দর, নারায়নগঞ্জ নদীবন্দর, মাওয়া ফেরী ঘাট, পাঠুরিয়া-দৌলদিয়া ফেরীঘাট, কুমিরা-গুপ্তছড়া, ভোলার মজুচৌধুরী ঘাট, কুতুদিয়ার মগনমা ঘাটসহ প্রায় ৫০টি ঘাট, নদীবন্দর ও নৌ-রুটে যাত্রী সেবা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে। এতে দেখা গেছে, এইসব ঘাটে কুলিরা যাত্রীদের লাগেজ- ব্যাগেজ নিয়ে টানাটানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়কে কেন্দ্র করে যাত্রী সাধারণের সাথে চরম দূর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।