পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্ধারিত সময়ের আগেই এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আস্থায়ী কোরবানীর পশুর হাট প্রস্তুতি ও পশু তোলা হয়েছে। স্থায়ী হাট গাবতলীসহ দুয়েকটি হাটে টুক-টাক বেচা কেনাও চলছে।
ইজারা নিয়ম মতে ঈদের দিনসহ চারদিনের অনুমোদন দেয়া হলেও এবারের কোরবানীর হটে বেচা কেনা শুরু হয়ে গেছে তার ৩/৪ দিন আগে থেকেই। যদিও হাটগুলো এখও তেমন একটা জমে উঠেনি। ঈদুল আজহার আরও ৬দিনর বাকি। ঢাকা শহরের মানুষ এত আগে কোরবানির পশু না কিনলেও তারা পরিবারের ছোট-বড় সদস্যরা দলবেধে এ হাট ঐ হাট ঘুরে কোরবানীর পশু দেখে। দর দাম বুঝার চেষ্টা করে। রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে গরু, মহিষ, উট, ছাগল ও ভেড়াসহ পর্যাপ্ত কোরবানীর পশু ইতোমধ্যে উঠে গেলেও বেচা কেনা কম। হাটগুলোতে এখন ক্রেতার চেয়েও দর্শনার্থী বেশি।
বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখন যারা আসছে তারা শুধু দাম জেনেই চলে যাচ্ছে। কেউ কিনছে না। তবে দু’য়েক দিনের মধ্যে ক্রেতা পাওয়া যাবে। বেচা-কেনার সময় এখনও হয়নি। আগামী মঙ্গলবার থেকে হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯টি হাট ইজারা দিয়েছেন বৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আর ৬ হাট ইজারা দিয়েছেন টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই খাস আদায়ের জন্য। এছাড়া গোপবাগ ব্রাদার্স ক্লাব মাঠের হাট ও কমলাপুর মাঠের আশেপাশের খালি জায়গায় আরও দুইটি হাটের ব্যপারে এখনও ডিএসসিসি ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত না দেয়া হলেও এ হাট দুটিতে ইতোমধ্যে কেরবানির পশু বেচ-কেনা শুরু হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ইতোমধ্যে হাটদুটোর নির্ধারিত এলাকার অতিক্রম করে হাটের বাইরে চলে গেছে পশুর বহর।
ডিএসসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ সোমবার) মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাবো। তার পর এ হাট দুটোর ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুরান ঢাকার ধোলাইখাল সংলগ্ন সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে কাউয়ার টেক হাটের গরু নির্ধারিত এরিয়ার বাইরে চলে গেছে। ধোলাইখাল সড়কের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে প্রধান কাউন্টার মঞ্চ। সড়কে গর্ত করে স্থাপন করা হয়েছে বাঁশের খুটি। এসব খুটিতে পশু বাঁধা হয়েছে। অর্থাৎ নির্ধারিত সীমানা ছাড়িয়ে হাট স¤প্রসারিত হয়েছে সড়কজুড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেপরোয়া ইজারাদার কিছুতেই নির্ধারিত স্থানের মধ্যে তার হাটটি সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না। গতবারের মতো এবারও প্রধান সড়কের ওপর হাট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে যথারীতি ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
হাটের সীমানা ইতোমধ্যে রাজধানীর সবকটি বৈধ ও অবৈধ হাটই অতিক্রম করেছে। দনিয়া হাটটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসানো হলেও এটাকে মহাসড়কের ওপর নিয়ে আসার পাঁয়তারা চলছে। কমলাপুর বক্স কালভার্ট সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কমলাপুর থেকে মুগদা স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্রধান সড়কের দু’ধারে গরু বাঁধার আয়োজন চলছে। পোস্তগোলায় শ্মশানঘাট থেকে বুড়িগঙ্গার পাড় ধরে সদরঘাটের দিকে যাওয়া সড়কের বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। গরু রাস্তায় চলে এসে শ্যামপুর হাটেরও। অন্যদিকে উত্তরা আবাসিক এলাকার হাটটি সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড্ডা ও ভাটারার হাটও ঢুকে পড়েছে অলিগলিতে।
যোগাযোগ করা হলে পোস্তগোলা হাটের কর্মকর্তা মোহাম্মদ চিশতি বলেন, আমাদের হাট কখনও রাস্তা দখল করেনি। নির্ধারিত সীমানার মধ্যেই আছে। তবে গোলাপবাগ মাঠের এক প্রতিনিধি বলেন, এত গরু আসছে। এগুলো দাঁড়াবে কোথায়? বেপারিদের চাহিদার কারণেই কিছু গরু রাস্তায় রাখা হয়েছে।
রাজধানীতে এবার ১৭টি অস্থায়ী, ৬টি অবৈধ ও ২টি বৈধ অবৈধের মাঝখানে মিলে মোট ২৫টি হাট বসানো হচ্ছে দুই কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ১৭টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৯টি। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে রয়েছে একটি করে দুটি স্থায়ী হাট। এগুলোতে এখনও কেনা-বেচা জমে উঠেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উত্তর সিটির স্থায়ী ও দেশের সবচেয়ে বড় পশুহাট গাবতলিতে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক-পিকআপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-মহিষ, উট, ছাগল ও ভেড়া আসছে। তবে হাট এখানো জমে ওঠেনি। ক্রেতার উপস্থিতিও খুবই কম। গোশত ব্যবসায়ীরাই কেবল গরু-ছাগল কিনছেন। এছাড়া কুমিল্লা, সিলেটসহ বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরাও এ হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
রাজশাহী থেকে আগত বেপারি আবদুল মজিদ ৫০টি গরু নিয়ে শনিবার হাটে এসেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি জানান, দু-তিনজন ক্রেতা গরু দেখেছে। তবে দামে না মেলায় অপেক্ষা করছি। তার প্রত্যাশা মঙ্গলবার থেকে হাট পুরোদমে জমবে। তিনদিন আগে হাটে আসা বেপারি কাশেম মিয়া এনেছেন ২০টি গরু। তবে ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন বলে জানান তিনি। পুরো হাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ গরুর দাম ৮০-৯০ হাজার টাকা হাঁকানো হচ্ছে। তবে হাটের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে নজরকারা ১০টি গরু। দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। গরুগুলো এসেছে মানিকগঞ্জ, পাবনা ও ময়নমসিংহ থেকে।
হাটে নিয়ে আসা বড় গরুর এক বিক্রেতা জানান, তিনদিন আগে গরুগুলো এনেছি। তবে এখন পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি। তার বিশ্বাস, দু’একদিনের মধ্যে গরু বিক্রি শুরু হবে।
মানিকগঞ্জ থেকে কৃষক ইসলাম শেখ দুটি দেশি গরু এনেছেন। তার সঙ্গে দেখা হাটের পশ্চিম পাশে। তিনি বলেন, নিজে পালন করা দুটি বলদ নিয়ে গতকাল রোববার সকালে এসেছি। একটির দাম ১ লাখ ৩০ হাজার ও অপরটির দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম উঠলে গরু দুটি বিক্রি করবেন।
গরু নিয়ে আসতে রাস্তায় ঝামেলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় কোনো ঝামেলা হয়নি। তবে ট্রাক চালকের সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি করে মানিকগঞ্জ থেকে এসেছি।
গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী হাট ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি গরু-ছাগল নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন বিক্রেতারা। হাটে নিয়ে আসা পশুকে খাওয়ানো ও দেখভালের মধ্যদিয়েই সময় কাটছে তাদের। কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেগের চাইতে এই গরুর যত্ম বেশি নেই।
মেহেরপুরের খামারি সাইরাজ উদ্দিন ও আলমগীর হোসেন জানান, দেশী গরুর কোন সঙ্কট নেই। দেশে যে গরু আছে তা দিয়েই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। দেশী গরুর দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা বলেন, এখন গরু লালন-পালনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকায় আনতে গরু প্রতি ট্রাক ভাড়া দিতে হয় ২/৩ হাজার টাকা। তাছাড়া গত তিন বছর ধরে খামারিরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ কারণে এবার পুষিয়ে নিতে দাম একটু বেশি চাওয়া হচ্ছে। তবে ভারতীয় গরু আসা নিয়ে শংকার কথা জানান তারা। বর্তমানে ভারতীয় গরু কম আসছে জানিয়ে তারা বলেন, গত কয়েক বছর দেখা গেছে, ঈদের দুই-একদিন আগে হঠাৎ করেই ভারত সীমান্ত খুলে দেয়। তখন দেশী গরুর দাম পড়ে যায়। এতে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন খামারিরা।
হাটে উট, মহিষ ও ছাগলের সরবরাহও আছে। তবে বিক্রি তেমন হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ী খবির হোসেন। যা দুই একটি বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশই কিনছেন গোশত ব্যবসায়ীরা বলে তিনি জানান।
হাট হাটঘুরে দেখা যায়, এবার ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার মধ্যে বিভিন্ন রকম দেশি গরু পাওয়া যাচ্ছে। আর বিদেশি গরুর মধ্যে ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান ও ফিজিয়ান গরুর উঠেছে বেশি। এ গরুগুলোর দাম সাধারণত আড়াই লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন এসব গরু বিদেশি হলেও তা বাংলাদেশেই পালিত। বিদেশি গরুর বীজে স্থানীয়ভাবেই এ গরু জন্মানো হয়েছে।
দেশি-বিদেশি গরুর মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ বিক্রেতার বাড়ি কুষ্টিয়ায়।
গাবতলী হাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন জানান, স্থানীয়রা সম্পৃক্ত থাকায় হাটের ভেতরে-বাইরে কোনো চাঁদাবাজি নেই। তাই সুষ্ঠুভাবে গাবতলী হাট পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শনিবার রাত থেকে পশু আসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশুর হাট শুরু হবে। এবার প্রতি গরুর দামের ওপর শতকরা ৫ টাকা হাসিল ধার্য করা হয়েছে। ইজারাদার কমিটির আরেক সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, বছরজুড়েই গাবতলী পশুর হাটে গরু পাওয়া যায়। তবে ঈদকে ঘিরে চলে ভিন্ন আয়োজন। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে ক্রেতা ততই বাড়বে। বিষয়টি চিন্তা করেই হাটের সার্বিক সৌন্দর্য রক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখছি।
এদিকে গাবতলী পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। হাটের বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। জাল টাকা রোধে হাটের মোড়ে মোড়ে নোট পরীক্ষণ যন্ত্র বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।