Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদযাত্রার শঙ্কা কাটছে না

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদযাত্রা। পুরোদমে শুরু হতে আরও দুদিন সময় লাগবে। ইতিমধ্যে মহাসড়কগুলোতে যানজটে আটকে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গতকাল শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদেরকে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি মহাসড়কেও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় গতকাল। বন্যায় কোথাও কোথাও রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে সড়ক পথে। একদিকে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। তার উপর যাত্রী ও কোরবানির পশুবাহী গাড়ির চাপ। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়ে তা ক্রমে তীব্র আকার ধারণ করছে। ভয়াবহ যানজটের খবরে আতঙ্কিত ঈদে ঘরমুখি মানুষ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকালও দাবি করেছেন, এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। তিনি বলেন, জনগণের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। গতকাল দুপুরে নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভা চত্বরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
গত প্রায় এক মাস ধরেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল-ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি লেগেই আছে। ঈদ যতো সমাগত হচ্ছে মহাসড়কে যানজট ততোই বাড়ছে। গত শুক্রবার বিকেলের পর উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ঠেলে চলেছে সব ধরণের যানবাহন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে গতকালও ছিল ধীরগতি। ঢাকা-খুলনা মহসড়কের পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া এবং মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের সারি দীর্ঘ ছিল দেড় থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। গতকাল এ অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই দিন দুপুরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা পরিদর্শনে গিয়ে ঈদযাত্রায় আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। একই সাথে তিনি যানজট নিরসনে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর পরেও পরের দিন শুক্রবারে যানজট পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায় নি।
দুরপাল্লার বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার পথে গাজীপুরা, তারগাছ, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড ও ভোগড়া এলাকায় সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। ভোগড়া বাইপাসের কাছে সড়ক এখনও ভাঙা। ভোগড়া থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের ভাঙা অংশ ইটের গাঁথুনি দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। তবে এখনও সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোটবড় ভাঙন। সড়কের এ অংশ এবড়ো-থেবড়ো হওয়ায় যানবাহন চলে ধীরগতিতে। চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ী পর্যন্ত সড়ক মোটামুটি ভালো। কোনাবাড়ী বাজারের শুরুতে সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ। সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি জমে আছে। ভেঙে যাওয়া সড়কে ইট বিছিয়ে দেয়া অংশ আবার ভেঙেছে। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে এক লেইনে যানবাহন চলছে। এতে কোনাবাড়ি বাজারের আগে-পরে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। গতকালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ঈদের আগে আগে এ যানজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন চালকরা। হাশেম নামে এক বাস চালক বলেন, চন্দ্রা থেকে কোনাবাড়ী পার হতেই তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে। ঈদে তার দ্বিগুণ সময় লাগবে। আরেক চালক জানান, চন্দ্রা বাজার এলাকায় সড়কে ছোটবড় অসংখ্য খানাখন্দ। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে। এসব খানাখন্দ দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। তিনি জানান, সফিপুর বাজারেও সড়কে খানাখন্দ আছে। এ বাজারও পার হতে হয় ধীরে ধীরে। ঈদের আগে সড়কে একাধিক লেইনজুড়ে বাস রেখে যাত্রী তোলায় চন্দ্রায় যানজট লাগে বলে অভিযোগ করেন গাজীপুরের ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশ একটু দায়িত্বশীল হলে এ যানজট এড়ানো সম্ভব।
জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত সড়কে ছোটবড় অসংখ্য খানাখন্দ। এ সড়কের কালিয়াকৈর বাইপাস সড়কের হিজলতলী সেতুর ও লতিফপুর সেতু এবং কালিয়াকৈর রেলওভারপাসের দুপাশেসড়ক ভাঙাচোরা। মির্জাপুরের দেরুয়া রেলক্রংসিয়েও সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় যানবাহন চলে ধীর গতিতে। লতিফপুর সেতুর দুপাশের সড়ক অনেকটা দেবে গেছে। ভাঙা অংশে ইট বিছিয়ে মেরামত করা হয়েছে। তার উপর দেওয়া হচ্ছে বিটুমিনের প্রলেপ। জোড়াতালির এ মেরামত বৃষ্টি হলে ধুয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দুরপাল্লার বাস চালকরা। ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটের তাজ পরিবহনের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সবখানে একইভাবে জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এগুলো ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। একই অবস্থা, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। ঢাকা-চট্টগড়্রাম মহাসড়কে খানাখন্দ না থাকলেও অনেক স্থানেই চার লেনের এ মহাসড়ক বেদখল হয়ে গেছে। আর যানজট লেগে আছে মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতুর দুদিকেই। ভুক্তভোগিদের আশঙ্কা, এবারের ঈদযাত্রায় গতবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে। রংপুরের বাসিন্দা ঢাকার মতিঝিলের চাকরিজীবী বশির আহমেদ বলেন, ঈদের মুভমেন্ট এখনও শুরুই হয়নি। কিন্তু এখনই বিভিন্ন জায়গায় যানজট লাগছে। উত্তরবঙ্গ থেকে যে গাড়ি ৬ ঘণ্টায় আসার কথা সে গাড়ি আসতে এখনই ১৪ ঘণ্টা-১৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। ঈদে গাড়ির চাপ বাড়লে ২৪ ঘণ্টাও লাগতে পারে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদ এলে তড়িঘড়ি ভাঙা সড়ক মেরামত একটা অপচয়-লুটপাটের সুযোগ করে দেয়। একই তোড়জোড় ঈদুল ফিতরেও ছিল। কিন্তু তা দুই মাসও টেকেনি। এবারের ঈদে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে, ফেরিস্বল্পতা ও নদীতে প্রচন্ড স্রোতের কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে স্বাভাবিক যান পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। গত শুক্রবার এবং গতকাল শনিবার দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ বাজার পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তারা জানান, যানজটে আটকে পরা পরিবহনের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল পাটুরিয়া ঘাটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন দেড় থেকে তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আটকে ছিল। এই পথে ১৯টি ফেরির মধ্যে চালু আছে ১৪টি। বিআইডবিøউটিএ-এর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রবল স্রোতের কারণে ফেরি যাতায়াত কমে গেছে। অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এজন্য জটটা একটু বেশি হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদের সময় ঝড়-বৃষ্টি থাকুক না থাকুক সওজের প্রকৌশলীরা রাস্তায় থাকবে, পুলিশও রাস্তায় থাকবে। যেখানেই গর্ত হবে সেখানেই তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সড়কের ৭০ ভাগ সংস্কার করা হয়েছে। ঈদের আগে বাকি কাজ শেষ হবে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ