জাহেদুল হক,আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের লামার বাজার এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি, অর্ধ শতাধিক দোকানপাট একটি সড়কসহ প্রায় ৫‘শ মিটার এলাকা ইতিমধ্যে শঙ্খে বিলিন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও তা কাজে আসছে না। তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
ভাঙনের তীব্রতা দেখে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। আবার কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙন কবলিত এলাকার ছবি তুলতে গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে লামার বাজার এলাকার বাসিন্দারা বলেন,ছবি তুলে কি লাভ,ভাঙন ঠেকালে আমরা আশ্রয় নিতে পারতাম। আমাদের সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের বাঁচান। এলাকাবাসী জানায়,শঙ্খের ভাঙন অব্যাহত থাকলে জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন আনোয়ারার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। ভাঙন রোধে পাউবো চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কোন মতেই ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। স্মরনকালে ভয়াবহ ভাঙন দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। গত বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন করে চারটি ঘরসহ আরো শতাধিক মিটার এলাকা ভেঙ্গে গেছে বলে জানান তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে,উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের লামার বাজার এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে। শঙ্খের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে জম মাঝির বাড়ি থেকে ফেছির বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রিংবাঁধ ও সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর তীরবর্তী মানুষ ঘরভিটা সরিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও পুরো এলাকার অসংখ্য দোকানপাট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। একপ্রান্ত দিয়ে ভাঙছে অন্যপ্রান্ত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রবল ¯্রােতে ওইসব জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে যাচ্ছে।
এদিকে,মোহছেন আউলিয়া সড়কের একাংশ নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ার কারণে ৩ গ্রামের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দারা বিকল্প পথে যাতায়াত করছেন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সমাজকর্মী সাদ্দাম হোসেন বলেন, নদী ভাঙন পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এলাকার প্রধান সড়কটি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। শঙ্খের ভাঙনে সমগ্র জুঁইদন্ডীবাসী আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাই এই ইউনিয়নকে রক্ষা করার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ,সিসি বøকসহ সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরী। পাউবো সূত্র জানায়,আনোয়ারা উপক‚লের জন্য একনেকে মেগা প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তারমধ্যে জুঁইদন্ডী লামার বাজার এলাকার ক্ষতিটা ব্যাপক। ইতিমধ্যে ওই এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এতে মাটি ভরাটের পাশাপাশি জিও ব্যাগ ও সিসি বøক বসানো হবে। জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকা জানান, ইতিমধ্যে অসংখ্য ঘরবাড়ি,দোকানপাট,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন আতংকে এলাকার বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ভাঙন ঠেকাতে পাউবোকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী কায়ছার উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন,ইতিমধ্যে জুঁইদন্ডী লামার বাজার এলাকার বিশাল অংশ ভেঙে গেছে। বুধবার নতুন করে আরো কয়েকটি ঘর নদীতে বিলিন হয়েছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাজে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বর্ষা কমে গেলে পুরোদমে কাজ করা সহজ হবে।