Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৫ মাসেও সংস্কার হয়নি বেড়িবাঁধ

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তান্ডবে বিধ্বস্ত হওয়ার ১৫ মাস পরও বাঁধ মেরামত হয়নি। তাই স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে পানি বাড়লেই প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। যা এখন নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মালিপাড়া-বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকাবাসীর এ দুর্দশার কথা জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ছালেহ আহমদ (৩৫)। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখনো বাঁধটি সংস্কার করেনি।
পাউবো সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পরে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় উপজেলার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লি. (সিইউএফএল) থেকে সাপমারা খালের মুখ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। পরে বিভিন্ন সময় সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধের বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ গত বছরের ১৯ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ওই এলাকার ৫৪০ মিটার বাঁধ পুরোটাই পানিতে ভেসে যায়। এরপর থেকে সাগরের ক্রমাগত ভাঙন বাঁধটিকে আরো জরাজীর্ণ করেছে। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার অনেক পরিবার আজ ভিটে ছাড়া। প্রতিমাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় সাগরে বাড়ে জোয়ারের পানি। ৪ থেকে ৫ দিন ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট সবকিছু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় রান্নাবান্না, ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরের আসবাবপত্র। দুর্ভোগের শেষ থাকে না এলাকাবাসীর। লবণ পানিতে বারবার প্লাবিত হওয়ায় জমির ফসল নষ্ট হয় প্রতিবার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে মাঝে মধ্যে জরুরী মেরামতের নামেও চলে লুটপাট। আর এ কারণে এলাকাবাসীর কষ্টের শেষ নেই।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মালিপাড়া-বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার ৫৪০ মিটার বাঁধ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে বাঁধ ভেসে যাওয়া অংশে কিছু গাছের বল্লি ও বালিভর্তি জিও ব্যাগ ছাড়া আর কিছু নেই। যার কারণে বাঁধের পাশে বসবাসরত পরিবারগুলো উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। গহিরা উপক‚লীয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র নুরুল আলম জানান, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ বেড়িবাঁধটি বিধ্বস্ত হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। একই এলাকার ষাটোর্ধ আবদুচ ছালাম বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভেতরের রাস্তাঘাট সব নষ্ট হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় মসজিদে নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেন না। মানুষ মারা গেলে ভাটা ছাড়া দাফন করা যায় না। এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশ লোক মৎস্যজীবী। পেশা হারিয়ে বহুজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কায়ছার উদ্দিন বলেন, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার ৫৪০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের জন্য ৪০ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এতে মাটি ভরাটের পাশাপাশি জিও ব্যাগ ও সিসি বøক বসানো হবে। এমজিআর নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়ে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিন শরীফ জানান, গত বছরের ৯ আগষ্ট একনেকে অনুমোদিত উপক‚ল সুরক্ষায় ২৮০ কোটি টাকার মধ্যে আনোয়ারায় বেড়িবাঁধ সংস্কারে ১৩০ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেছে পাউবো। তার মধ্যে বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার বাঁধটিও রয়েছে। তবে বর্ষার কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এখনো পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি। এ ব্যাপারে রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ইনকিলাবকে বলেন, রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত এ বাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। তা নাহলে এলাকাবাসীর কষ্টের সীমা থাকবে না। এ জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছে কোরবানি ঈদের পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ শুরু করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ