Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাগুরায় পাঁচটি কাঁচা সড়কের উন্নয়ন নেই, ১৭ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের দশটি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের চলাচলের প্রায় ১৬ কিলোমিটারের পাঁচটি কাচাঁ রাস্তার বেহাল দশায় জনগণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা সড়ক বর্ষাকাল এলেই চলাচলের সম্পুর্ন অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ কারণে প্রতি বছর জনগণকে দুর্ভোগের শিকার হয়ে পড়তে হয় সমস্যায়। রোগীদেকে দ্রæত হাসপাতালে নিতে, উৎপাদিক কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে কষ্ট করতে হয়। এ সময় স্কুলে কমে যায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। কাদার যন্ত্রণায় স্থানীয় বাজারের অনেক ব্যবসায়ী দিন শেষে বাড়ি রিতে পারেনা। বিকল্প না থাকায় গ্রামের বাসিন্দাদের এই কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়। বছরের পর বছর ধরে মানুষ চলাচলের অনুপযোগী এসব সড়ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তারা ধর্ণা দিয়েও কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না বলে জানান।
দেখা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলা সদর থেকে পাকা রাস্তা ধরে তিন কিলোমিটার গেলেই বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। প্রধান সড়ক থেকে গ্রামের মধ্যে যাওয়া অধিকাংশ সড়কই কাঁচা। এসব সড়ক বর্ষাকালে সম্পূর্ণ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বেহাল এ সড়কগুলো হচ্ছে, বড়রিয়া বাবু মোল্যার বাড়ির ব্রীজ হতে মৌশা গুচ্ছ গ্রাম হয়ে নিখড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩ কিলোমিটার। বড়রিয়া নতুন বাজার হতে মৌশা আদর্শ গ্রাম হয়ে নিখড়হাটা হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশ দিয়ে ছোট কলমধারী ৪ কিলোমিটার। বালিদিয়া শিকাদার মোড় থেকে নিখড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে গোলাবাড়ি মৌশা হয়ে কানুটিয়া বাজার ৫ কিলোমিটার। বালিদিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যন পান্নু মোল্লার বাড়ির সামনে থেকে ঘোষপুর মোড় হয়ে মৌশা মোল্লা পাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এবং বড়রিয়া মেলা এলাকা থেকে নিখড়হাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ কিলোমিটার রাস্তা।
এসব সড়ক দিয়ে ধোয়াইল, বড়রিয়া, নিখোড়হাটা, বালিদিয়া, শ্রীপুর, ছোটকলমধারী, মঙ্গলহাটা, মৌলী, চাবিনগর, গোপিনাথপুর, কাওড়া, চাপাতলা, কানুটিয়া, মাইজপাড়া, ঘোষপুর, আউনাড়া ও যশপুরসহ আশপাশের এক লাখের বেশি মানুষ চলাচল করেন। এসব গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরা এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেও গ্রামের মানুষ এই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। কয়েক হাজারহেক্টর কৃষি জমির উৎপাদিত ধান পাটসহ বিভিন্ন ফসল এসব সড়ক দিয়ে কৃসকের আঙিনায় আনতে হয়। অথচ সড়কগুলো উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এসব গ্রামের অর্ধেকের বেশী লোক কৃষিকাজ করেন। অন্যান্যরা ব্যবসায় ও চাকুরীর সাথে জড়িত। তাদের প্রতিদিন চলাচল করতে হয় খুব কষ্ট করে। রাস্তার বেহাল দশায় পাশের গ্রামের লোকেরা উপহাস করে কাদার গ্রাম নাম দিয়েছে। বর্ষা এলেই এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গ্রামগুলোর মানুষ। অথচ এই কাঁচা সড়ক ব্যবসা-বাণিজ্য ও এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে এ এলাকার বাসিন্দারা জানান।
বর্ষা মৌসুমে কাদার জন্য লোকজন কোনো কাজে গ্রামের বাইরে যেতে চায় না। আত্মীয় স্বজন বেড়াতে আসেন না। বিয়েসহ বন্ধ থাকে নানা সামাজিক আচার অনুষ্ঠান। গ্রামে বিদ্যালয় থাকলেও ভোগান্তির কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় যেতে চায় না। ওই ১৭ গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, পুরো বর্ষায় সব রাস্তা কাদায় ভরে থাকে। তারা এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহু ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। শুধু রাস্তার কারণে গ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকাজ স্থবির হয়ে গেছে। মৌশা ও নিখোড়হাটা গ্রামের রাস্তা দিয়ে কাদা মাড়িয়ে জুতা হাতে কয়েকজন পথচারী চলাচল করতে বাধ্য হয়। গ্রম্য পরিবহন রিকশাভ্যান বাই সাইকেল নিয়ে পড়তে সব চেয়ে বেশী সমস্যায়। মৌশা গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর দিন মজুর বলেন, ‘১৫ বছরেও কোনো উন্নয়ন নাই। বড় কষ্টে আছি। সুযোগ থাকলে গ্রাম ছাড়ে চলে যেতাম।’ মৌশা গুচ্ছগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, আলী আকবর জানান, ‘বর্ষার ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে স্কুলে আসতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে শরিরে কাঁদা মেখে বাড়িতে ফিরেযেকে বাধ্য হয়।ফলে স্কুলে কমে যায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।’
বড়রিয়া গ্রামের লাখু মোল্যা বলেন, ‘হাটুসমান কাদা মাড়িয়ে কী যে কষ্টে চলাচল করতে হয়, তা বোঝানোর না। গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তা নিয়ে কেউ ভাবেও না। ধোয়াইল হাইস্কুলের শিক্ষক অলিয়ার রহমান বলেন, ‘ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাগুলো তার দাদার আমলের। অথচ বর্ষাকালে এটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আজ পর্যন্ত রাস্তার কোন উন্নয়ন নেই। গোপিনাথপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর শেখ বলেন,‘ধান-পাটসহ কৃষিফসল বিক্রির জন্য হাটে নিতে পারি না। কোন যানবাহন এই সব রাস্তায় আসে না। মাথায় করে তিন কিলোমিটার দূরে পাকা রাস্তায় নিতে হয়।
বালিদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্লা জানান, বলেন, ওই রাস্তাগুলো পাকাকরণের জন্য স্থানীয় সাংসদকে অনুরোধ করেছি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানিয়েছি। ১৭ গ্রামের মানুষ কাদাপানি মাড়িয়ে অতি কষ্টে চলাচল করছেন বলে তিনি জানান। মহম্মদপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘সড়কটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাভুক্ত (ডিপিপি) হলে উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। আর যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এমপি সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করে সড়কটি উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


চলতি বছর কোরবানি হবে ৫৫ হাজার গরু
নরসিংদীতে খামার ও কৃষক পর্যায়ে লক্ষাধিক : দেশী ও ক্রস জাতের গরু তৈরি রয়েছে
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদী জেলায় চলতি বছর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দেশী ও ক্রস জাতের গরু দিয়েই কোরবানীর চাহিদা মিটানো হবে। কোরবানীর জন্য এবছর নরসিংদীতে ১৫ হাজার ৫৭৫টি খামার গরু মোটাতাজাকরণ করেছে। এসব খামার ও কৃষক পরিবারগুলোতে কোরবানীর জন্য তৈরী করা হয়েছে লক্ষাধিক গরু। এসব গরু নরসিংদীর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানী করতে পারবে। এ হিসেব সরকারী পর্যায়ে।
জানা গেছে, নরসিংদীতে প্রতিবছর ২৪ লাখ মানুষের জন্য ৫০ থেকে ৫৫ হাজার গরুর প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও জেলার বাইরে রফতানী করা হবে আরো সমসংখ্যক গরু। যার ফলে নরসিংদীর জনগনকে এ বছর বাইরের বা ভারতীয় গরুর কোন প্রয়োজন হবে না। নরসিংদীর নুরালাপুরের রায়হান ডেইরি ফার্মের মালিক মোঃ ইমরান হোসেন ভূইয়া জানিয়েছেন, তার খামারে এ বছর ২৫টি গরু কোরবানীর জন্য তৈরী করা হয়েছে। এর মধ্যে ১টি ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের ষাড় গরুর ওজন দাড়িয়েছে দেড় টন। অর্থাৎ কমবেশী ৪০ মন। এ গরুটির নাম দেয়া হয়েছে বাদশা। গরুটির উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং লম্বা মাথা থেকে পিছন পর্যন্ত ১০ ফুট। অপর গরুটি সিন্দি দেশী ক্রস জাতের ষাড় গরু। এর নাম দেয়া হয়েছে রেডকাউ। গরুটির উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি, লম্বা ৮ ফুট। এর ওজন হচ্ছে ৩৫ মন। প্রথম বাদশা নামের গরুটির দাম হাকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় রেডকাউ নামের গরুটির দাম হাকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ফার্মের মালিক জানিয়েছে, পবিত্র হাদিস শরিফে কোরবানীর জন্য মোটাতাজা ও দেখতে সুন্দর ও সুশ্রী চেহারার পশুকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা সে দিকে খেয়াল রেখে গরু মোটাতাজা করণ করে থাকি। তবে আমরা গরু মোটাতাজাকরণে কোন হারাম পথ বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, হারাম খাদ্য ব্যবহার করি না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করি। যেমন প্রাকৃতিক ঘাস, খড়, ভুষি, ভাতের মার এবং প্রাকৃতিক লতাপাতা ব্যবহার করে থাকি। এবছর খামারে ২৫টি গরু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। একইভাবে সারা জেলার মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরা, শিবপুর, পলাশ ও নরসিংদী সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫সহশ্রাধিক খামারে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া নরসিংদী জেলায় রয়েছে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ গরুর হাট। যার নাম পুটিয়ার হাট। এই হাটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গরু ছাড়াও সারা দেশ থেকে গরু আমদানী হয়ে থাকে। এই হাটে দেশী জাতের গরু ছাড়াও বিভিন্ন ক্রস জাতের গরু আমদানী হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ক্রেতারা এসে গরু কিনে নিয়ে যায়। ঢাকা শহরে দেড় কোটি মানুষের ৪০ ভাগ কোরবানীর গরু সরবরাহ করে নরসিংদীর পুটিয়া, বেলাব, শিবপুর ও হাতিরদিয়া গরুর হাট। প্রতি বছর কোরবানী এলে এসব হাটে কয়েক লাখ গরু বেঁচা কেনা হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ