পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যতোই দিন এগিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে শঙ্কা। আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঈদুল আযহা। এখনও ঢাকা ছাড়তে শুরু করেনি ঘরমুখি মানুষ। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে কিভাবে দুরের পথ পাড়ি দিবে সেই শঙ্কা মানুষের মনে। সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা বহুদিন ধরে। এর মধ্যে বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক। ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়কে গতকালও ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও যানজট লেগে আছে মাস কানেক ধরে। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কটি এখনও মেরামত হয়নি। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ১শ’ কিলোমিটার চলাচলের অযোগ্য। ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়কগুলো জরুরীভিত্তিতে মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছিল। এখনও তা পুরোপুরি হয়নি। খানাখন্দের রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়ে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। এর বাইরে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ব্যটারিচালিত যান ও সিএনজি অটোরিকশাতো আছেই। কোনো কোনো এলাকায় সড়ক-মহাসড়কের উপরে কোরবানির হাটও বসবে। অন্যদিকে, বন্যায় দেশের প্রায় ১শ’ কিলোমটিার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কিছু অংশ এখনও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে বন্যার পানির তোড়ে সেতুর মাটি সরে যাওয়ার পর ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ৪০ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। মেরামতের পর রেললাইনের ওই অংশে ‘ডেড স্টপ’ করে মাত্র ৫ কিলোমটার বেগে ট্রেন চলছে। ওই ৪০ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি রেলওয়ে। প্রায় প্রতিটি ট্রেনই চলছে দেরিতে। ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়লে সিডিউল রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাকী থাকে নৌপথ। বর্ষায় নদীগুলো এখন উত্তাল। উত্তরাঞ্চলের প্রবল বন্যার স্রোত মেঘনা হয়ে সগরমুখি হওয়ায় মেঘনা ও এর ভাটির শাখা নদনদীগুলোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি করছে। পানির তোড়ে ভেঙ্গে পড়েছে নৌসংকেত ব্যবস্থা। বন্যার বহমান অতিরিক্ত বালু মিশ্রিত পানির স্রোতে অনেক নৌপথেই ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো নৌযান চলাচলের জন্য হুমকী উল্লেখ করে বিআইডবিøউটিএ-এর কর্মকর্তারা চালকদের সতর্কতার সাথে নৌযান পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন। সব মিলে এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঈদে সড়ক পথে ভোগান্তি হবে। কারণ বর্ষায় রাস্তাগুলো ড্যামেজ হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারনে সেগুলো ঈদের আগে মেরামত করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় গাড়ির গতি কম থাকবে কিন্তু চাপ থাকবে বেশি। গাড়িগুলো নির্ধারিত গতিতে চলতে পারবে না। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ঈদে ঘরমুখি মানুষের ভোগান্তি দুর করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদুল আযহায় ঘরমুখি মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হয়। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা নাজুক। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে দেশের প্রতিটি এলাকার রসড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। সওজের হিসাবেই সারাদেশে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক ভাঙ্গাচোরা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক যোগ হলে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। এমনিতেই ঈদে লাখ লাখ মানুষ একসাথে ছুটতে গিয়ে পরিবহন যান সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের ভয়াবহ যানজটের কারণে গন্তব্য থেকে ফের ঢাকার দিকে ফিরতে গিয়ে দেরি হওয়ায় গাড়ি সঙ্কট দেখা দেয়। সকাল ৭টায় যে বাস ছাড়ার কথা সেই বাস ঢাকায় ফিরতে দুপুর হয়ে যায়। অথচ যাত্রীরা সেই সকাল থেকেই বাসের জন্য অপেক্ষা করেন।
গত এক মাসন ধরে সড়ক-মহাসড়কে যানজটের যে ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে অনেকেই ভীত এবারে সড়কপথের ভ্রমণ নিয়ে। এ কারণে এবার ট্রেনের টিকিটের জন্য চাপ ছিল বেশি। চাহিদা অনুসারে চারভাগের তিনভাগ মানুষই এবার ট্রেনের টিকিট পাননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কে গতকালও ৩০ কি.মি. যানজট ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কও যানজটমুক্ত নয়। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়ার শেরপুর পর্যন্ত মহাসড়কটি এখনও চলাচলের উপযোগী করে মেরামতের কাজ সম্পন্ন হয়নি। সেখানে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এখনও ৪/৫ ঘণ্টা সময় লাগছে। ঢাকা থেকে গাজীপুরের রাস্তাটিরও বেহাল দশা। ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কে কমপক্ষে ৮০ কিলোমিটারজুড়ে খানাখন্দ। ফেনী-নোয়াখালী-লক্ষীপুর মহাসড়কটিও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও গত কয়েকদিন ধরে যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জেলা মহাসড়কগুলো সংস্কার না করায় খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে আছে। কোনো যানবাহনই ওই সব সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলতে পারছে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন স্থানে যানজটের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, ঈদে যানবাহনের চাপে আশুলিয়ার জিরাবো বাজার, ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে, সাভার বাইপাইল মোড়, গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, নবীনগর, কাঁচপুর, ভুলতা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই প্রান্তে যানজট লেগেই থাকে। এবার এর সাথে আরও বহু পয়েন্ট যোগ হয়েছে। ঢাকা থেকে বের হতে গেলেই এসব পয়েন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে। ভুক্তভোগিদের মতে, গত ঈদুল ফিতরে পূর্বাঞ্চলের ঘরমুখি যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়কে। তখন সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে একটি বাস কাঁচপুর পর্যন্ত যেতে সময় লেগেছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে চলতে গিয়ে আধা কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। এবারও ফ্লাইওভারের নীচের অংশে রাস্তা তৈরীর কাজ শেষ হয়নি। বরং এর উল্টো দিকে ডেনেজের কাজের কারণে রাস্তাটি একেবারে সরু হয়ে গেছে। ওই রাস্তায় গাড়ি প্রবেশ করতে গিয়ে ফ্লাইওভারের মুখে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। যা কখনও কখনও শনিরআখড়া ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দুরপাল্লানর বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কে নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রধান অন্তরায় অবৈধ তিন চাকার যানবাহন। সিএনজি অটোরিকশার সাথে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার অবাধে চলাচল করে মহাসড়কে। এগুলোর কারণে যানজটের সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে।
মহাসড়কের এই বেহাল দশায় ট্রেন ছিল যাত্রীদের অন্যতম ভরসা। কিন্তু এবার ট্রেনের অবস্থাও নাজুক। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় একশ কিলোমিটার রেল লাইন অচল হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের কিছু অংশ এখনও বিচ্ছিন্ন। টাঙ্গাইলে সেতুর মাটি সরে ওই অংশ দিয়ে খুব ধীর গতিতে চলছে ট্রেন। কালিহাতি সেতুর বিকল হয়ে পরায় ৪০ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। সেই ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠেতে পারেনি রেল। সিডিউল বিপর্যয় এখনও কাটেনি। এতোকিছুর পরেও মানুষ ট্রেনেকেই ঈদযাত্রার জন্য নিরাপদ মনে করে ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ট্রেনের টিকিটের সংখ্যা একেবারে অপ্রতুল ছিল। যারা টিকিট পেয়েছেন তার তিনগুণ ফিরে গেছে টিকিট না পেয়ে।
অন্যদিকে, বন্যার কারনে দেশের সবগুলো নদ-নদী এখন উত্তাল। ছোট লঞ্চ চলা ঝুঁকিপূর্ণ। জানতে চাইলে ঢাকা-বরিশাল রুটের এক লঞ্চ মালিক বলেন, নদী ভরাট থাকায় লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। কারন নৌ সংকেতগুলো ভেঙ্গে গেছে। খুব এক্সপার্ট চালক না হলে পথ চেনা মুশকিল। অন্যদিকে, জোয়ারের টানে কোথাও কোথাও চরের সৃষ্টি হয়েছে। সবমিলে এবার নদীপথে চলাচলও অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে লঞ্চের টিকিট নিয়েও কাড়াকাড়ি হয়েছে। অনেকেই কাঙ্খিত টিকিট না পেয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার চিন্তা করেছেন। সরকারি স্টিমারের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিকল থাকায় সঙ্কট আরও বেড়েছে।
এতোকিছুর পরেও মানুষ ছুটবে নাড়ির টানে। ঘরমুখি লাখ লাখ মানুষ তাহলে ভরসা করবে কিসে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্যাহ বলেন, ঈদে মানুষ ছুটে যায় নাড়ির টানে। এটা তার সামাজিক দায়বদ্ধতা। প্রতিটি ঈদেই আমরা একই চিত্র দেখি। সড়কে যানজট, ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ইত্যাদি। কিন্তু তারপরেও মানুষতো আর বসে থাকবে না। একটা পথ সে বেছে নিবেই। সরকারের উচিত মানুষের সেই যাত্রা নিরাপদ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।