Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতিকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে সরকার -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মানসিক অসুস্থতার অজুহাতে সরকার প্রধান বিচারপতিকে পদ থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার নিজেই এই ষড়যন্ত্র করছে। গতকাল (বুধবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের কারণে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রধান বিচারপতিকে মানসিক অসুস্থ বলে অন্য কোনো ধরনের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এগোয় কি না, সেটা আজকে মানুষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে, এটা অজুহাত সৃষ্টি করে যে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ তাকে আর রাখা যাবে না- এই বলে কোনো উদ্যোগ তারা গ্রহণ করে কি না, সেই আলোচনা হচ্ছে। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে আছে- “প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন,ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি কখনই ভাবতে পারছেন না বিচার বিভাগ, সুপ্রিম কোর্ট একটি আলাদা স্বাধীন সংস্থা। তিনি মনে করেন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ সব হচ্ছে সুধা সদনের একটি এক্সটেনশন। এখন সুপ্রিম কোর্ট, একেও তিনি আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি তার কথা শুনছেন না। তিনি আইনকে আইনের পথে যাওয়ার জন্য কথা বলছেন এবং দেশে যা ঘটছে, মানুষের বিবেককে যা নাড়া দিয়েছে, সেই বিষয়টি তিনি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। এই জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আজে-বাজে কথা বলছেন। তার মাথা খারাপ না হলে এই কথা বলতে পারে না।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতা ফজলে নূর তাপস অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের পদত্যাগ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করায় তার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, পরিস্থিতি এমনই যে, তাদের একজন খাস মানুষের পদত্যাগ চাইলেন তিনি। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা জেলে গেলে এই অ্যাটর্নি জেনারেলই তাদের কারাগারে আটকিয়ে রাখার জন্য সর্বশেষ চেষ্টা করেন। এত অনুগত অ্যাটর্নি জেনারেল আর কখনও আসেননি। হায় তারই পদত্যাগ চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ। এই ফজলে নূর তাপসরা একদিন হয়ত প্রধানমন্ত্রীরও পদত্যাগ চেয়ে বসবেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা মরহুম আবদুর রাজ্জাককে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, যখন আমাদের চলচ্চিত্র হাঁটি হাঁটি পা পা করেছে সেটাকে একটা মাত্রায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে নিজে যে শ্রম দিয়েছেন; আর্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি- দুইটাকে সমন্বয় করে একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন আবদুর রাজ্জাক, তার আজ মূল্যায়ন কোথায়? বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিপর্বের চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ এ রাজ্জাকের অভিনয়ের কথাও তুলে ধরেন রিজভী। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ নিজের দলের বাইরে যেতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। কেউ যদি স্বাধীনতাবিরোধীও হয়, সে যদি যদি জয় বাংলা শ্লোগান দেয় এবং এই সরকারকে খুশি করতে পারে, তারা সম্মানিত হবে। একাত্তর সালে পাকিস্তান রেডিওতে যারা কবিতা পাঠ করেছেন, পরবর্তীতে তারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হয়ে গেলেন। কিন্তু ড. পিয়াস করিমের মতো শিক্ষক এবং সিরাজুর রহমানের মতো সাংবাদিক শুধু সরকারের সমালোচনা করার জন্য সম্মানিত হতে পারেননি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, তাদের মাথা এতটাই গরম যে, তারা প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করে মাঠে আসতে বলেন। ভাবটা হলো যে, সব কাপড়-চোপড় খুলে শুধু একটা সকস পড়ে ওবেটা হয়ত হা-ডু-ডু খেলতে মাঠে এসেছে। এখন প্রধান বিচারপতিকেও বলছে যে আপনি হা-ডু-ডু খেলতে আসেন। দুর্ভাগ্য এই জাতির, খুব কষ্ট লাগে। তিনি আরও বলেন, নিজের মধ্যে বার বার প্রশ্নের উদ্রেক হয় আমরা কী আসলে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। নাকি স্বাধীন আওয়ামী লীগের দ্বারা শাসিত একটা দেশ? শুধু তারা স্বাধীন, অন্য কেউ নয়?’
সভাপতির বক্তব্যে ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, দেশের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার একটি রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী সরকার যেভাবে তার বিরুদ্ধে লেগেছে, তাতে স্পষ্টত প্রমাণিত হচ্ছে তারা বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। সংবিধানের ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাতজন বিচারপতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে পর্যালোচনা জাতির সামনে তুল ধরেছেন, তাতে সরকার ক্ষমতায় থাকার সব নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের আচরণে প্রমানিত হয়, তারা এর কিছুই বিশ্বাস করে না। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করতেই একের পর এক কাজ-কর্ম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমতউল্লাহ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাড. সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ