Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াচ্ছে ক্রেডিট কার্ড

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দৈনন্দিন বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনে এখন আর নগদ টাকা নয়; কার্ডের ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন গ্রাহকরা। আর তাই কেনাকাটা, ব্যাংক থেকে টাকা তোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিদিনই বাড়ছে কার্ডের ব্যাবহার। এমনকি বিদেশেও এ দেশের মানুষ এখন কার্ড ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকছেন। বেড়ানো কিংবা চিকিৎসা অথবা ব্যবসার প্রয়োজন- যে কারণেই বিদেশ যাওয়া হোক না কেন, পকেটে করে বিদেশি মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার চেয়ে কার্ডেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমান টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলের বিল পরিশোধ- সব ধরনের আর্থিক লেনদেনে কার্ডের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। অর্থাৎ যে লেনদেন আগে মানুষ নগদে করতেন, সেসব ক্ষেত্রে এখন কার্ডের ব্যবহারে ঝুঁকছে মানুষ।
সাধ ও সাধ্যের মধ্যে টানাপোড়েনের সুযোগ নিয়েই ক্রেডিট কার্ডের যাত্রা শুরু। আগামী দিনের চাহিদাকে বর্তমানে মেটানোর এক অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে এই কার্ড। ঋণ সুবিধায় ব্যক্তিপর্যায়ে কেনাকাটা ও নগদ অর্থের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও চাহিদা বাড়ছে সেবাটির। বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ৫৭ টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টি বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। চালুর প্রায় দুই যুগ পর গত মে মাসে গ্রাহকদের স্বার্থে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা করা হয়। পরবর্তীতে তা আবার সংশোধন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশোধিত নীতিমালায় বাস্তবায়নের সময় ১ জানুয়ারি ২০১৮ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নীতিমালায় সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতি, পরিশোধের সময়সীমাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংশোধনী ক্রেডিট কার্ডকে আরো জনপ্রিয় করবে। যদিও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ- ক্যাবের দাবি, নীতিমালায় ব্যাংকের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে।
আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলো ভোক্তা ঋণ নয়, অন্য যেকোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের সুযোগ পাবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বা দ্বৈত মুদ্রায় সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যুর ওপর, নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়েছে। এসব সংশোধনীর ফলে ক্রেডিট কার্ড আরো জনপ্রিয় হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক পরিপত্রে নগদ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবসায়ে ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে প্রভিশন সংরক্ষণের হার সংশোধন করা হয়েছে। এতে অশ্রেণিকৃত ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের ঋণের বিপরীতে ২ শতাংশ সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে, যা আগে ছিল ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোকে আগে এই ঋণের বিপরীতে ১৫০ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হতো, সেখানে প্রভিশনের হার কমায় এখন করতে হবে ৬০ কোটি টাকা।
তথ্য মতে, বর্তমানে ১৮ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ হারে ক্রেডিট কার্ডের সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে, বেশিরভাগ ব্যাংকেরই এই সুদের হার ৩০ শতাংশের বেশি। ভোক্তা ঋণের চেয়ে অন্য অনেক ঋণের সুদহার ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি রয়েছে। যদিও নীতিমালা সংশোধন হওয়ায় ব্যাংকগুলোর সেই বাড়তি সুদ আদায়ের সুযোগ কিছুটা হলেও কমবে। আগে যেখানে ৩০শতাংশ বা তার বেশি সুদ আদায় করতো ব্যাংকগুলো। এখন তা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। ভোক্তা ঋণ বা কনজ্যুমার লোন বলতে বুঝায়- সাধারনত গৃহঋণ, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারসহ ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি কেনা বাবদ, চিকিৎসা এবং বিয়েসহ ব্যক্তিগত প্রয়োজনের পাশাপাশি গৃহস্থালি পণ্য কেনার জন্য প্রদত্ত ঋণ। এর পরিমাণ হতে পারে ১০ হাজার থেকে ১ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন মেয়াদে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হয় গ্রহীতাদের। ব্যাংকভেদে এ ঋণের সুদের হার হয় আলাদা।
সুদ হার বেশি নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচালন খরচ বেশি হওয়াকে নেপথ্য কারণ হিসেবে দাবি করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান।
তবে, সুদের হার কমানোর দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ- ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেছেন, সুদের হারের পাশাপাশি গোপন চার্জও প্রত্যাহার করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। গোপন চার্জ প্রত্যাহার করা গেলে প্রযুক্তি নির্ভর এই কার্ডের ব্যবহার আরো বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
সূত্র মতে, নগদ টাকার ঝুঁকি এড়াতে দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে নানান ছাড়ের অফার দিয়ে ক্রেডিট কার্ড বাজারে ছাড়ছে ব্যাংকগুলো। আর তাই গ্রাহকদের প্রত্যাশার নিরিখেই ক্রেডিট কার্ড-সংক্রান্ত নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশের সবক’টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখ। ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বড় অংশই দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর। সুদহার সহনীয় পর্যায়ে নেমে এলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্রেডিট কার্ডের সেবা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা অর্ধকোটিতে উন্নীত করা সম্ভব হলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ক্রেডিট কার্ডে একসময়ে ৩০ শতাংশ আরো বেশি সুদ নেয়া হতো। আর তাই গ্রাহকদের স্বার্থে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে গত ১১ মে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পরবর্তীতে কিছুটা সংশোধনও করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রেডিট কার্ড

২ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ