বিএনপি নেতা সাজুর তত্ত্বাবধানে বিজয় দিবস র্যালিতে বিপুল নেতাকর্মীর অংশগ্রহন
ঢাকা-১৪ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দারুসসালাম থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে সরকার এখন দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে পড়েছে। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে সমাজের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এ জন্য সরকার দিদ্বিদিকশূন্য হয়ে গেছে। সরকার এখন পাগলের মতো বকছে। তাই তো ব্যারিস্টার তাপসদের মতো আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছে। এখন তো সন্দেহ তৈরি হয়েছে সরকার প্রধান বিচারপতিকে ‘মানসিক অসুস্থ’ আখ্যা দিয়ে তাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো অশুভ উদ্দেশ্য সাধন করে কি না? আসলে দেশের মানুষ চায় শুধু আওয়ামী লীগের অপসারণ। কেননা সরকারের জ্বালা ধরেছে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকায়। এই জন্য তারা যা তা বকছেন। আমার তো মনে হয় একদিন দেখা যাবে তাপসরা প্রধানমন্ত্রীরও পদত্যাগ দাবি করবেন। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে ‘চলমান অস্থিরতা : কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন। জাতীয় নেতা মরহুম মশিউর রহমান যাদু মিয়ার বড় ছেলে ও বাংলাদেশ ন্যাপের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম শফিকুল গানি স্বপনের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ছড়াকার আবু সালেহ, শাহজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, অন্যায় এবং বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের চূড়ান্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। যে কারণে সরকারের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তারা এখন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কথা বলছে।
তিনি বলেন, সরকার তো পুলিশ বাহিনীর ওপর ভর দিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। তারা তো জনগণের রায়ের ওপর দিয়ে দেশ চালাচ্ছে না। সুতরাং তারা যদি ঠাণ্ডা মাথায় একটিবার চিন্তা করতো যে সরে গেলে কি হবে? তাহলে বাংলাদেশ অনেক উপকৃত হতো। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ এক জীবনবিনাশী দানব থেকে রক্ষা পেত। ভয়ঙ্কর এক উপদ্রব থেকে রেহাই পেত। কিন্তু এসব তাদের মধ্যে নেই। আজকে সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে।
তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যারা মানুষের ঘরবাড়ি দখল করছে, সম্পদ লুট করছে গরু চুরি করছে তাদেরকে সহায়তা করা। সুতরাং এসব অনিয়মের বাইরে সুপ্রিমকোর্ট আলাদা কেনো ভূমিকা রাখবে? সে জন্য আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
রিজভী বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম, গ্রেফতার এবং হয়রানির কথা প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা সাদাতকে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে না দিলে বুঝা যাবে এটা সরকারের ইশারায় হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকাতে আমাদের নতুন সদস্য সংগ্রহেও বাধা দিচ্ছে সরকার। সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের বাড়িতে এই কর্মসূচী ছিল। কিন্তু পুলিশ মঙ্গলবার রাত থেকেই বাসা ঘিরে রেখেছে। তারা কর্মসূচী করতে দেবে না।
বগুড়ার শাহজাহানপুরে বিএনপি নেতাকে প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। সেখানে মারধরের পর তার মৃত্যু হয়। আসলে আজকে মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই। সরকারের কাছে মানুষের জীবন নেয়া যেন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এসবই করা হচ্ছে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ঘটনাকে আড়াল করে। বিএনপির পক্ষ থেকে এধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।
তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক প্রসঙ্গে বলেন, একজন মানুষ অর্থের লোভে কত নিচু হতে পারে তার দৃষ্টান্ত তিনি। তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যার যাত্রা শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশকে অকার্যকর করা হচ্ছে। আজকে দেশের মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত হননা। যারা শেয়ার বাজার লুট করে, ব্যাংক লুট করে মানুষের অর্থ সম্পদ চুরি করে, ধন সম্পদ ছিনতাই করে তারাই কেবল দেশে থাকতে চাচ্ছে। দেশের মুক্তিযুদ্ধকে যারা এগিয়ে নিয়েছেন তাদেরকে কি সম্মান দিলো সরকার। চলচিত্র জগতের নক্ষত্র নায়ক রাজ্জাককে কি সম্মান দেয়া হলো? দেশের মুক্তিযুদ্ধে কি শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের একার অবদান? সেখানে জহির রায়হানেরও অবদান রয়েছে। তো তার নাম তো বলা হয় না!
রিজভী বলেন, প্রধান বিচারপতির পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য তো আন্দোলন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পৃথিবীর কোনো দেশ ভালো দৃষ্টান্ত রাখলে তা তো সবার জন্য অনুকরণীয়। তবে পাকিস্তানের একাত্তরের ভুমিকার জন্য নিন্দা জানাই। আসলে সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নাকি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দল তা নিয়ে জনগণের মাঝে বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এখন চলমান পরিস্থিতি এমন যে সরকারের অবস্থান খুব নড়বড়ে। রশি ধরে টান মারলেই রাণী খান খান হবেন। তাদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে তারা যাচ্ছে তাই করছেন।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে খুব বেশি উচ্ছোষিত হওয়ার কিছু নেই। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে রায়ের কোনো বিষয়ের কারণে প্রভাবিত হবেনা তার নিশ্চয়তা কে দিলো? সুতরাং এ নিয়ে আনন্দের কোনো কারণ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।