Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফারাক্কার খোলা গেট দিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটে আসছে ঘোলা পানি শঙ্কা জাগাচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষকে

| প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : মরা পদ্মায় বান ডেকেছে। ফারাক্কার খোলা গেট দিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটে আসছে ঘোলা পানি। বিশাল বালিচরের নীচে চাপা পড়ে থাকা পদ্মায় চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। প্রতিদিনই দু’চার সে:মি: করে পানি বাড়ছে। ছুঁতে যাচ্ছে বিপদসীমার কাঁটা। ইতোমধ্যে দক্ষিণের চরাঞ্চল আর উত্তরের নদী তীরবর্তী ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। তীব্র ¯্রােতে ছুটে চলার কারণে ভাঙছে দু’পাড়। চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত দুকুল ছাপিয়ে আর ভেঙে যাচ্ছে। পদ্মার এমন ভয়ংকর রুপ দেখে নদী তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কিত। রাজশাহী মহানগরবাসী বন্যার শঙ্কা করছে। নগরীকে যে বাঁধদিয়ে বন্যা ঠেকানো হবে তার অবস্থা বড্ড নাজুক। অনেক স্থানে বাধের অস্তিত্ব নেই। চলে গেছে সব অবৈধ দখলকারীদের দখলে। আর এক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড পালন করে চলেছে রহস্যজনক নীরবতা। রাজশাহীতে পদ্মার বিপদ সীমার ১৮ দশমিক পঞ্চাশ মিটার। আর এখন গতকাল সোমবার দুপুর বারটায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৫৪ মিটার। নগরীর বড়কুঠি হতে জাহাজঘাট পর্যন্ত পদ্মার মাঝবুকে কয়েক মাইলজুড়ে জেগে ওঠা চর যা মধ্যচর নামে পরিচিত। বেশ ক’বছর সেখানে পানি না ওঠায় নদী ভাঙন মানুষ ঘর বসতি গড়ে ছিল। এবার সেই চরটিও তলিয়ে গেছে। আর এতে করে নগরবাসীর শঙ্কা আরো বেড়েছে। নদীর তলদেশ ভরতে ভরতে নগরীর তলদেশের চেয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে। যদি পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে আর কোথাও বাঁধ বা ¯øুইস গেট ভেঙে যায় তাহলে গোটা নগরী তলিয়ে যাবে। বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহীর পদ্মা নদীর গভীরতা এখন যে অবস্থায় আছে। তার চেয়ে চার দশক আগে আরো ১৮ মিটার নীচু ছিল। ফারাক্কা চালুর পর থেকে নদীতে বালি জমতে জমতে তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীর ধারন ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। সারা বছর পানি আটকে রাখলেও ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার গেটগুলো একসাথে খুলে দেয়া হয়। এক সঙ্গে এত পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে দুকুল ভাসিয়ে ভাঙনের তান্ডব চালিয়ে যায়। পানির চাপে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাবার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তিনি স্মরন করিয়ে দেন বন্যায় ১৮৫৫ সালে ১৮৬৪ সালে রাজশাহী শহর ডুবে গিয়েছিল। একবার কুড়ি দিন বন্যার পানি স্থায়ী ছিল। পরবর্তীতে ১৮৬৫ সালে বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়ে ১৮৯৫ সালে শেষ হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত পনের বছরে পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। যা ছিল ২০০৪ সাল ও ২০১২ সালে। টানা নয় বছর পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম না করলেও গত বছর বিপদ সীমা প্রায় ছুই ছুই করেছে। বিহারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় পানির উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার। যা ছিল বিপদ সীমার মাত্র চার সে:মি: নীচে। এবার পানিবৃদ্ধির গতি বিপদ সীমা ছাড়িয়ে যাবার শঙ্কা জাগাচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীর আশেপাশের জেলাগুলোর নদনদী ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে মহানন্দা, পুর্নভবা, আত্রাই, ছোট যমুনা, বারনই শিব ফকিন্নী নদীর পানিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বিশ্লেষনে প্রকাশিত হয়েছে গঙ্গা পদ্মা অববাহিকায় বড় বন্যা ধেয়ে আসছে। দু’চার দিনের মধ্যে পদ্মা বিপদ সীমা অতিক্রম করলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে। এমন খবরে রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জের মানুষ শংকিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পানি ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে সংশ্লিষ্ট রাবির সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. চৌধুরী সরওয়ার জাহান সজলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন এ মুহূর্তে এ অববাহিকায় নয় ভয়াবহ বন্যা হবার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। কারণ হিসাবে বলেন এখন নেপাল ভারত বাংলাদেশের উপর ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া পদ্মার ভাটিতে পানি কমছে। ফলে রাজশাহীতে ভয়াবহ বন্যা হবার আলামত নেই। যদি ভারী বর্ষণ হয় তবে ভিন্ন কথা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান বলেন, বর্ষণের পানি ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে এসে পদ্মার পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা আরো দু’চার দিন বাড়তে পারে। বর্ষায় পদ্মায় পানিবৃদ্ধি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আর শহর রক্ষা বাঁধ নিয়ে আতংকিত হবার কিছুনেই। বাঁধ রক্ষায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। বালিভর্তি জিওব্যাগ, বোল্ডার সবই মজুদ রয়েছে। নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক এ্যাড.এনামুল হক বলেন, শুকনোর সময় ফারাক্কা বাঁধদিয়ে পানি আটকে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে মরুময়তার দিকে ঠেলে দেয়া। আবার বর্ষার সময় নিজেদের বন্যার হাত থেকে বাঁচতে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশ ডুবিয়ে মারার যে মরণ খেলা ভারত চালিয়ে যাচ্ছে তা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শঙ্কা থেকেই যাবে। তিনি বলেন প্রতি বছর হাজর হাজার টন টন বালি এসে জমছে পদ্মার বুকে। নদী নাব্যতা হারিয়েছে সেই কবে। নদীর তলদেশের নগরীর তলদেশের চেয়ে অনেক উপরে। ফলে একবার বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করলে নগরী তলিয়ে যাবে পনের বিশ ফুট পানির নীচে। এখন নগরীর উত্তরের নদী গুলোতেও উপচেপড়া পানি। ফলে পদ্মা তার সাথে মিলে মিশে ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যায়।
গতকাল পদ্মা তীর ধরে বেশ কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় পদ্মার ভয়ঙ্কর ভাবে ছুটে চলা দেখে নদী তীরবর্তী মানুষ বেশ আতঙ্কিত। অন্যদিকে প্রতিদিন পদ্মার বিভিন্ন স্পটে মানুষ ভীড় জমাচ্ছে নানা বয়েসের মানুষ। পদ্মার ফিরে পাওয়া ক্ষনিকের যৌবন দেখতে। ঘোলা পানিতে পা ডোবাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ