Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

পাকিস্তানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে সেখানে চলে যান

প্রধান বিচারপতিকে হানিফ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স দিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, পাকিস্তানের ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে পাকিস্তানে চলে যান। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা চাই না জনগণ আপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক, সেটি ভাল দেখায় না।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আপনি (প্রধান বিচারপতি) নিজেই বলেছিলেন যে তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এর দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্যরা তো পাকিস্তানের সৈনিক ছিল, তাদেরকে জনগণ বাংলার মাটিতে জনগণ দেখতে চায় না। তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রতি যদি দরদ, অনুরাগ থাকে, তাহলে সেখানে চলে যান। কেউ তো নিষেধ করবে না। সেই অধিকার আপনার আছে। বাংলার জনগণ রুখে দাঁড়ালে অনেকেই পালাবার পথ পাবে না।
হানিফ বলেন, প্রধান বিচারপতি ষোড়শসংশোধনী নিয়ে রায়ের মধ্যে যে সকল অবজারবেশন দিয়েছেন এ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কথা বলেছি। ওনি সংসদকে বলেছেন অকার্যকর, ওনি সংসদকে বলেছেন ইমমেচিউর। তিনি বলেন, বিচারপতি সাহেব অপনাকে মনে রাখতে হবে, জনগনের দ্বারা নির্বাচিত এই সংসদ। এই সংসদ সদস্যদের দ্বারাই নির্বাচিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি। সেই মহামান্য রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ দিয়েছেন আপনাকে। সংসদ অযোগ্য হলে আপনাকেও অযোগ্য ভাবছে জনগণ।
বিচারপতির শপথ ভঙ্গ হয়েছে দাবি করে হানিফ বলেন, আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন, আপনি শপথ নিয়েছিলেন সংবিধানকে সুরক্ষা করার জন্য। আপনি সংসদকে কটাক্ষ করে শপথ ভঙ্গ করেছেন। আর এই শপথ ভঙ্গ করার কারণে গোটা বিচার বিভাগকে জনগনের মুখোমুখি করেছেন। আপনি অনেক কথা বলেছেন, সংসদকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মিমাংসিত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। আজকে আপনি একটার পর একটা কথা যেভাবে বলে যাচ্ছেন এবং কিছু বিচারপতির কর্মকান্ডের কারণে গোটা বিচার ব্যবস্থাকে জনগনের মুখোমুখি দাড় করিয়েছেন। এটা আমাদের কখনও কাম্য নয়।
হানিফ আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি সাহেব, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনি জিয়াউর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন। পৃথিবীর আর কোথাও এটা নেই। আছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের প্রতি আপনার এত দরদ। ২০১৪ সালে নির্বাচনের সময় আপনি নিজেও বলেছিলেন, আমিতো শান্তি কমিটির সদস্য ছিলাম। এর মাধ্যমে কি বুঝাতে চেয়েছিলেন?
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে যারা রাজাকার, আলবদর, আলসামস, শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন তারা পাকিস্তানের সৈনিক ছিলেন। সেই হিসেবে আপনি নিজেকে পাকিস্তানের সৈনিক ভাবছেন? বাংলাদেশের মানুষ বহু আগেই বলেছে, যারা এই বাংলাদেশে থেকে পাকিস্তানের চিন্তা চেতনা বিশ্বাস করে তাদের বাংলাদেশে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নাই। আপনার যদি পাকিস্তানের প্রতি এতই আকর্র্ষন থাকে তাহলে পাকিস্তানে চলে যান। সে অধিকার আপনার আছে। চলে যান পাকিস্তানে কেউ আপনাকে নিষেধ করবে না। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানের ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে বাংলাদেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না। আপনি পাকিস্তানের রেফারেন্স টানেন, এর মধ্য থেকে আপনি কি বুঝাতে চান? আমরা পরিস্কারভাবে বলে দিতে চাই, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ, পাকিস্তান নয়।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারকে হুমকি দিয়ে কোন লাভ নেই। জনগণ একবার জেগে গেলে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। বিচারপতি তোমার বিচার করবে এবার জনতা। আপনি নৈতিকভাবে এই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন, জনগণ আপনাকে এই জায়গায় বসা দেখতে চায় না।
বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফকে কান্নাকাটির জন্য অপেক্ষা করুতে বললেন
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, বিএনপি নাকি রাজনীতি করে জনগনের জন্য। কোন মুখে তারা এমন কথা বলে। যেখানে জনগনের ক্ষমতা নিতে চায় হাইকোর্ট সেখানে তারা খুশি হয়। সেই রায়ে তো বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকেও অবৈধ বলা হয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে খন্দকার মোশাররফের বক্তব্যের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, নিজেদের অপরাধকে আড়াল করার জন্যই আপনি বলেছেন ২১শে আগস্ট নিয়ে কান্নাকাটির কিছু নেই। আপনাদের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্যই এধরণের বক্তব্য দিয়েছেন। মোশাররফ সাহেব আপনাদেরকে বলতে চাই, এরপর কাঁদতে হবে আপনাদের। ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আদালতের রায়ে যখন আপনাদের লোকেরা অভিযুক্ত হবে তখন আপনাদেরও কাঁদতে হবে। কান্নাকাটির জন্য অপেক্ষা করুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ