Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অপমানজনক বক্তব্য বন্ধের আহ্বান মওদুদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ‘অপমানজনক বক্তব্য’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, সরকারকে আহ্বান জানবো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এ ধরনের অপমানজনক বক্তব্য আপনারা বন্ধ করুন। যদি কোনো নালিশ বা ক্ষোভ থাকে সেটা রেকটিফাই (সংশোধন) করার জন্য সংবিধানই আপনাদের সুযোগ করে দিয়েছে, সেটা করুন। গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির দেওয়া রায় যোগ্য বা অযোগ্য হোক সেটা সবাই গ্রহণ করে। কিন্তু আজকে তা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। হাইকোর্ট বলে যে এই রায় সংবিধানসম্মত। কিন্তু এটা যখন খায়রুল হকের কাছে গেল তখন তিনি বললেন যে এটা সংবিধানসম্মত নয়। এই খায়রুল হকের প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতাই ছিল না।
মওদুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যারা বলেন তাঁরা এর একটা নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। এই নতুন সংজ্ঞা হচ্ছে যে দেশে কোনো গণতন্ত্র থাকবে না, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা থাকবে না, বিরোধী দল থাকবে না, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে না, আইনের শাসন এবং কোনো নির্বাচন থাকবে না। এই সকলকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ একদিকে বলে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করতে হবে। যারা এই চেতনাকে নস্যাৎ করতে চায় তাদেরকে রুখতে হবে। এরা একইসাথে বলে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আমরা মানি না।
বিএনপি নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী মানুষ দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। আজকে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তাদের মনে হচ্ছে যে মুক্তিযুদ্ধ করে ভুল করেছিলাম। কিন্তু না, আমরা ভুল করিনি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী তাঁরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। বাংলার মানুষ মূলত গণতন্ত্র চায়। তাঁরা স্বৈরশাসন চায় না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সাধারণ মানুষের তো একটাই অধিকার আছে ভোটের অধিকার। ভোট দিয়ে সরকারি নির্বাচিত করার অধিকার। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে মানুষকে তো ভোটকেন্দ্রে যেতেই হয়নি। সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে না, এটাই স্বাধীনতার চেতনা? আমাদেরকে এই স্বাধীনতার চেতনার নতুন সংজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এই ধরনের সরকার এবং সরকারি দল বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নতুন নজির স্থাপন করেছে। এটাও তাঁরা স্বাধীনতার চেতনা মনে করে।
এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রসঙ্গ টেনে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এই যে খায়রুল হক একজন মেরুদন্ডহীন ব্যক্তি, নির্লজ্জ ব্যক্তি। তিনি কত নিচে নামলে এমন রায় দিতে পারেন। আজকে যারা ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণ, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি এবং জানে না, শুধু বইয়ে পড়েছে এরা আমাদের এই নতুন স্বাধীনতার চেতনা দেখে কী শিখবে? স্বাধীনতার চেতনা বলতে কী তারা এই শিখবে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে না, গণতন্ত্র থাকবে না? কিন্তু আমরা বলি আমাদের এ দেশে গণতন্ত্র থাকবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে, নির্বাচন থাকবে।’
প্রধান বিচারপতিকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেন মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা এত দিন সুবিচার পাইনি। আর সরকার যখন বলে যে তাঁরা সুবিচার পায়নি তখন তো আমরা ভীত সন্ত্রস্ত্র হই। প্রধান বিচারপতি তো একা রায় দেননি। সাতজন ইউন্যানিমাসলি (সর্বসম্মতিক্রমে) রায় দিয়েছেন। সরকারে উচিত ছিল রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে, জনমত সৃষ্টি না করে, যদি তারা বলতেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের অনেক ক্ষোভ ও দুঃখ আছে, আমরা রিভিউ পিটিশন করব। সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা আদালতকে বলতেন যে দেশের মানুষ এখন ভালো স্বপ্ন দেখে, বলতেন যে সংসদ কার্যকর, সীমাহীন দুর্নীতি হয়নি, এটা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সরকার। তাহলে আর বাকি থাকে কী? পুলিশ র‌্যাব প্রশাসন সব আপনাদের নিয়ন্ত্রণে। বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। তাহলে আর বাকি থাকে কী? মূলত রায়ের প্রত্যেকটি বিষয়ই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু খায়রুল হক কীভাবে এই রায়ের বিরুদ্ধে বলেন? গত ১ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৭৯৯ পৃষ্ঠার এ রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এর আগে গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ