পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিরিয়ার পর লিবিয়ায় ক্রমেই প্রভাব বাড়ছে রাশিয়ার। লিবিয়ার শক্তিশালী নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারের সাথে মস্কোর মৈত্রীর সম্পর্ক রচিত হয়েছে। তার পরিণতিতে মস্কো সফর করেছেন তিনি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় তার উপস্থিতি জোরদার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার আগ্রহ নির্দিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঐ অঞ্চলের বহু খেলোয়াড়ের সাথেই সে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায়। একটি প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে রাশিয়া নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে মধ্যপ্রাচ্যে তার উপস্থিতি জোরদার করে চলেছে। সিরিয়া ও ইউক্রেইন বিষয়ের প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সাল থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়া এবং অঞ্চল হিসেবে উত্তর আফ্রিকার সাথে মস্কোর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন ও তার পর সোভিয়েত মিত্রদের সবাইকে ভুলে যাওয়ার কারণে আফ্রিকায় সোভিয়েত স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তথাকথিত আরব বসন্তে গাদ্দাফির পতন ঘটলে রাশিয়ার স্বার্থ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, লিবিয়ার সাথে রাশিয়ার ছিল ঐতিহাসিক উষ্ণ সম্পর্ক।
এমনকি মস্কোর জন্য কঠিন সময় দেখা দিলেও দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা ছিন্ন হয়নি। গাদ্দাফির শাসনের অবসান ঘটার সাথে রাশিয়ার কোনো রকম সম্পৃক্ততা ছিল না। রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদে লিবিয়া বিয়য়ক প্রস্তাব গ্রহণের সময় অনুপস্থিত ছিল। সিরিয়া বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থানের উপর এর প্রবল প্রতিক্রিয়া পড়ে যে কারণে এ অঞ্চলে তার পদক্ষেপ ও নীতিতে সার্বিক পরিবর্তন ঘটে। গাদ্দাফির ক্ষমতাচ্যুতি লিবিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা ডেকে আনে। সেখানে সন্ত্রাসের বিস্তৃতি লিবিয়ার আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যই শুধু নয়, ইউরোপ মহাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতি ও শংকা সৃষ্টি করে। রাশিয়া শুরু থেকেই লিবিয়ায় পুনরায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টার উদ্যোগ নেয়। তবে এ এলাকায় তার অধিকাংশ কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার রাডারে ছিল। কারণ সিরিয়া ছিল তখন খবরের শিরোনাম। এখন সিরিয়া সংঘাত প্রশমিত হচ্ছে, বিশ^বাসীর দৃষ্টি পড়তে চলেছে লিবিয়ার দিকে। এবং মনে হচ্ছে, রাশিয়া ইতোমধ্যেই সেখানে শক্ত ভাবে উপস্থিত হয়েছে।
লিবিয়ার সামরিক কমান্ডার খলিফা হাফতার গত সপ্তাহে রাশিয়া সফর করেন। তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সাথে সাক্ষাত করেন। রাশিয়া খলিফা হাফতার এবং প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল সারাজ উভয়কেই সমর্থন করে। ফায়েজের সরকার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত , কিন্তু সামরিক নেতার সাথে তার সম্পর্ক বিরোধপূর্ণ। হাফতারের সফরের উদ্দেশ্য ছিল লিবিয়ার সংঘাত অবসানের ব্যাপারে একটি ঐকমত্যে পৌঁছা। এ সংঘাত উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর জন্য উচ্চ ঝুঁকির উৎস হয়ে উঠেছে। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ইতালির মধ্য দিয়ে ইউরোপে অভিবাসীর ঢেউ বয়ে এনেছে।
লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতা হাফতার দু’বার রাশিয়া সফর করেছেন। জানুয়ারিতে লিবিয়ার উপকূলে রুশ বিমানবাহী জাহাজের উপস্থিতি এ জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি করে যে মস্কো লিবিয়াতে তার প্রভাব আরো বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। হাফতারের সৈন্যরা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর ও উগ্রপন্থীদের শক্তঘাঁটি বেনগাজি দখল করে। বেনগাজি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রের কাছে এবং গুরুত্বপূর্ণ তেল অবকাঠামো কেন্দ্র। এখন তা ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়ের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে। যে দেশ উত্তর আফ্রিকা নিয়ন্ত্রণ করবে সে দেশ ইউরোপে তেল ও গ্যাস সরবরাহের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মস্কোতে বৈঠকের পর হাফতার বলেন, স্থিতিশীলতা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যতক্ষণ না লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ লাভ না করছে ততক্ষণ আমাদের এ লড়াই অব্যাহত রাখব। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া হাফতারকে একজন সম্ভাব্য মিত্র এবং লিবিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বহু মিলিশিয়া গ্রæপ ও ইসলামিক স্টেট (আইএস)সহ ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিচরণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি।
হাফতারের সাথে মস্কোর ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক এ অঞ্চলে তার আরো শক্ত করে পা রাখার ইচ্ছারই ইঙ্গিত বহন করছে। এ কারণেই লিবিয়া ও উত্তর আফ্রিকার উপকূলসহ ভূমধ্য সাগরে নৌ উপস্থিতি ক্রমশই বাড়াচ্ছে রাশিয়া। এদিকে অভিবাসী জোয়ারের কারণে নিজের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চাপ পড়ার ফলে উদ্বিগ্ন ইতালি সাগরের অভিবাসী আগমনের রুটগুলোতে টহল দেয়ার জন্য রুশ নৌ সহযোগিতা চেয়েছে।
সিরিয়া ও ইউক্রেনে রাশিয়ার ভূমিকার কারণে পাশ্চাত্য আন্তর্জাতিক আঙ্গিনা থেকে রাশিয়াকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু লিবিয়াতে ক্রমশই বেশি করে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে রাশিয়া ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিচ্ছে যে সিরিয়া, ইউক্রেন বা অন্য কোনো স্থানের ঘটনায় সে প্রভাবিত নয় , তার আন্তর্জাতিক কৌশলের সমর্থনে সে কাজ করবে।
*নিবন্ধকার মারিয়া দুবোভিকোভা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশিষট রাজনৈতিক ভাষ্যকার, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ। তিনি মস্কোভিত্তিক ইন্টারন্যশনাল মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজ ক্লাবের সভাপতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।