Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের আগে কঠোর কর্মসূচি

বকেয়া পাওনার দাবিতে ফুঁসে উঠেছে খুলনার পাটকল সেক্টর

| প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি: ভাল নেই খুলনাঞ্চলের পাটকল সেক্টর। শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার পাটকল শ্রমিক সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে। ঈদের আগেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে রাজপথে। জনদুর্ভোগের অশনি সংকেতে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে আমজনতা। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর। যে কোন মুহূর্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবসরোত্তর বকেয়া পাওনার দাবিতে ফুসে উঠেছে খুলনার ৭ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের অবসরপ্রাপ্ত আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। ভুখা মিছিল সহ বিভিন্ন কর্মসূচীর পর আজ মঙ্গলবার প্রতিটি মিলগেটে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ২৬ আগষ্টের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ না হলে ব্যক্তিমালিকানা জুট মিলের হাজার হাজার শ্রমিক রাজপথ রেলপথ অবরোধের কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন।
সূত্রমতে, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলের আড়াই হাজার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক তাদের প্রাপ্য পিএফ ও গ্রাচ্যুইটির বকেয়া পাওনা পাচ্ছেনা। তারা বেঁচে থাকার আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে। ৪ দিনের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গত রোববার বাসন হাতে ভুখা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আজ মঙ্গলবার প্রতিটি মিল গেটে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং ২৭ আগস্ট মিলগেটে প্রতীক অনসন ধর্মঘটের কর্মসূচী রয়েছে।
গতকাল সোমবার খালিশপুরে এক প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন প্লাটিনাম জুটমিলের আবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন, মুন্সী আঃ ওয়াদুদ, শফিকুল ইসলাম মাস্টার, ক্রিসেন্ট জুটমিলের আব্দুস ছালাম সরদার, স্টার জুটমিলের আব্দুর রশিদ হাওলাদার, আলীম জুটমিলের রেজাউল হোসেন, ইস্টার্ন জুটমিলের মোঃ মোজাম্মেল হক, আব্দুল মজিদ, কার্পেটিং জুটমিলের শ্রমিক আহাদ আলী, জেজেআই জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ইকবাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা ঈদের পূর্বেই সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা না হলে কঠিন কর্মসূচি দেবে বলে জানান। তারা আরোও বলেন, ঘামে অর্জিত সকল বকেয়া টাকা দিয়ে দাও, নইলে কাফনের কাপড় দাও।
এদিকে, খুলনা অঞ্চলের বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানা জুট মিলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের ঈদুল আজহার আগে বকেয়া পাওনা বেতন, বোনাস পরিশোধ, বন্ধ মিলগুলোর চালু এবং আংশিক চালু মিলগুলো পূর্ণাঙ্গ চালুর দাবিতে গত রোববার ফুলবাড়িগেটে এবং শিরোমণিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন পালিত হয়। বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন এ কর্মসূচি আহবান করে। মানববন্ধনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, আগামী ঈদুল আজহার পূর্বে ২৬ আগস্টের মধ্যে দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করা না হলে খেটে খাওয়া শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
সূত্রমতে, ২৬ আগষ্টের পর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৭ রাষ্টায়ত্ত পাটকলের আড়াই হাজার অবসর প্রাপ্ত শ্রমিক এবং বেসরকারী পাটকলের শ্রমিকরা যৌথভাবে মোরচা গঠন করতে পারে। ফলে ঈদের আগে রাজপথ রেলপথ অবরোধ করে হাজার হাজার ঈদে ঘর ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হতে পারে। বিগত দিনে এ ধরনের দুর্ভোগের ইতিহাস রয়েছে। খুলনাঞ্চলের পাটকলের শ্রমকিদের রয়েছে আন্দোলনের চরম অভিজ্ঞতা।
এদিকে পাটকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৮ বছরে পাট শিল্পে সরকারের দেয়া উন্নয়নের বুলি ফাঁকা আওয়াজে রুপান্তরিত হয়েছে। খুলনাঞ্চল দেশের অন্যতম পাট শিল্পের সূতিকাগার হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে চিহ্নিত। শুধু এই অঞ্চলেই নয় পাট শিল্প রক্ষায় গোটা দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অগ্রযাত্রার রোড ম্যাপ ছিল অদূরদর্শীতায় ভরপুর। যে কারণে সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারী পাটকলগুলোও লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে খুলনাঞ্চলে বেশকিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল গড়ে উঠলেও দেশের বিভিন্ন স্থানের ১২টি পাটকল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের পথে রয়েছে আরও অন্তত ১২টি পাটকল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পাটকলগুলো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন।
সূত্রমতে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধ পাটকল চালু এবং রুগ্ন শিল্পকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা ও প্রকল্প হাতে নেয়। এটি এ অঞ্চলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল। দু’টি পাটকল চালু করলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দূরদর্শীতার অভাবে তা সঠিক সময় আলোর মুখ দেখতে পারেনি। গত ৮ বছর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের চেয়ে আশার আলোয় গাধার সামনে মুলা ঝুলিয়ে রাখার মত করে রাখা হয়েছে। এই শিল্পে অগ্রগতির চেয়ে অনেকক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের উদসীনতায় অবনতিই হয়েছে বেশি। ফলে এই শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা পড়েছে চরম বিপাকে। যেখান থেকে এই মুহুর্তে উত্তরনের তেমন কোন সম্ভবনাই দেখা যাচ্ছে না। কারণ সকল প্রতিকুলতার সাথে যোগ হয়েছে এখন রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা। অবশ্য ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকলের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি এবং সরকারের দেয়া সাবসিডির পরিমাণ কমিয়ে দেয়ায় দেশের বেসরকারী পাটকলগুলোতে দৈন্যদশা চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ