পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ নয়, দেশের মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। গতকাল (রোববার) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসনে বিশ্বাস করে না, তারা শুধুমাত্র আয়ত্বশাসনে বিশ্বাস করে। অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আয়ত্বে নিয়ে এখন উচ্চতর আদালতকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্বে নেয়ার জন্য তারা বেহুঁশ হয়ে পড়েছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর গদি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। তাই তারা বিচার বিভাগকে চাপে রাখতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে।
রায় প্রকাশের পর থেকেই আওয়ামী লীগ বেসামাল হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেসামাল হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা ক্রমাগতভাবে বিচার বিভাগকে আক্রমণ করে হুমকি দিয়ে নৈরাজ্যকর বক্তব্য রাখছেন। নজিরবিহীনভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান বিচারপতির বাসায় নৈশ ভোজের নামে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং এটর্নি জেনারেলের বৈঠক হয়, বৈঠকে তারা প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে এখন চারিদিকে মানুষের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ চেয়ে আওয়ামী লীগ যে দাবি জানিয়েছেন সেটা আইনগতভাবে অসম্ভব। এটা এক্সপাঞ্জ করার সুযোগও নেই। সুপ্রিম কোর্ট যা বলবেন, সেটাই সংবিধান। বিচারকদের কাজই হচ্ছে বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে সংবিধানের অর্থ পরিষ্কার করা। দেশে গণতন্ত্রের যে শুণ্যতা বিরাজ করছে, যেভাবে বিনা ভোটে বিতর্কিত সংসদ গঠন করা হয়েছে, দেশজুড়ে যে ভয়াল দুঃশাসন চলছে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিমকোর্ট তা পরিস্কার করেছেন।
সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক ক্ষমতাসীনদের পদতলে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়ে লবিষ্ট নিয়োগ করছেন। সাবেক বিচারপতি খায়রুল হকসহ আরও কিছু লোক তাদের দলীয় লবিষ্ট হয়েই কাজ করছেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কলঙ্ক তিলক হচ্ছে খায়রুল হক। এই ব্যক্তিটি অর্থের বিনিময়ে, চাকুরির বিনিময়ে নীতি, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার ক্ষমতাসীনদের পদতলে বিলিয়ে দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি নিজের মানসম্মান সম্পর্কে সচেতন নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়েই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশকে বিশৃঙ্খল ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন সেই লোকটি আবারও নির্লজ্জের মতো গতকাল (শনিবার) বলেছেন ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বিরাগ থেকে করা হয়েছে কিনা বিবেচনা করুন, প্রধান বিচারপতির শপথ ভঙ্গ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন’। খায়রুল হক সাহেব আপনি নিজেকে নিজে খতিয়ে দেখুন, আপনি কী সর্বনাশ করেছেন এদেশের। আপনি গণতন্ত্র হত্যার প্রধান জল্লাদ। অবসরের পর তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ে স্বাক্ষর করে আপনি দেশকে এক নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ইচ্ছাকে সন্তষ্ট করতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিজের বিবেককে কলুষিত করেছেন। বিএনপির এই নেতা খায়রুল হককে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা নিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছিলেন বলেই আপনি বর্তমান বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আপনি দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এবারে আপনি কত টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের লবিষ্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনগণ তা জানতে চায়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা বিদ্যমান দু:সময়ে লাখ লাখ কন্ঠে কোটি কোটিবার উচ্চারিত অনুভুতিরই বহি:প্রকাশ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদা আওয়ামী আদর্শে রঞ্জিত একজন মানুষ মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের সময় সিইসি বলেছেন সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব নিবে না ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যস্থতা করার দায়িত্ব ইসির কাজ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনতে ইসি কোনও সমঝোতার উদ্যোগ নেবে না। এর আগে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংলাপের সময় বলেছেন রাজনৈতিক লেবেল প্লেয়িং তৈরির কাজ ইসির নয়। এর আগে ইভিএম ভোটিং নিয়ে তিনি বলেছেন আগামী নির্বাচনে ইভিএম এ ভোটিং হবে না। পরে আওয়ামী লীগের নেতারা যখন সভা সমাবেশে ইভিএম এর পক্ষে কথা বলেন তখন তিনি মত পাল্টে বলতে থাকেন আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যায় কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিইসি’র কথায় মনে হয় আওয়ামী লীগের অনুকুলে কাজ করাই কমিশনের প্রধান কাজ। নুরুল হুদার দায়িত্ব গ্রহণকালীন সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রিজভী বলেন, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, নুরুল হুদা সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময় বলেছেন সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় আনতে কাজ করবে ইসি। দায়ত্ব পালনে তিনি অটল এবং আপোসহীন থাকবেন। নিয়ম ভেঙ্গে সিইসির একক সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বদলীর মাধ্যমে তার বিতর্কিত কর্মকান্ড শুরু হয়েছে সেটিও নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সমান সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেয়া ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোন বৃহৎ দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এমন কোন নজীর নেই। যেসমস্ত দেশে হাসিনা মার্কা দুঃশাসন আছে সেখানেই কেবল একতরফা নির্বাচন হয়। আর এই একতরফা নির্বাচনের পক্ষেরই বংশীবাদক বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কোন কারণে দেশের কোন বৃহত্তম রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে কমিশন নির্বাচনী তফশীল পিছিয়ে দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে এমন নজীর সারা দুনিয়ায় ভুরিভুরি। সিইসি নুরুল হুদা সাহেব সাংবিধানিক দায়িত্বকে অস্বীকার করে তিনি যে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ধীরে ধীরে এগুচ্ছেন তাঁর বক্তব্যে সেটাই পরিস্কার হচ্ছে। সিইসির বক্তব্যে মনে হচ্ছে তিনি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোপনে শপথ নিয়েছেন। জনসাধারণ মনে করতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন ‘সংলাপ’ নামে আইওয়াশ করছেন। আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তিনি যে নিরপেক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন না, এ বিষয়টি এখন অনেকটা পরিস্কার হচ্ছে। সিইসির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি কী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত রকিব কমিশনের মতো আরেকটি ভোটারিবিহীন ইলেকশনের নীলনকশা করছেন ? কারণ তাঁর বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে অসৎ ও দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনাই ফুটে ওঠছে।
বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেণ, সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছে বানভাসীরা। একদিকে খাদ্য সংকট অন্যদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেই। খোলা আকাশের নিচে কোন রকমে স্থান করে নিয়েছে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে দূর্গত এলাকায়। এখনও প্রকৃত বানভাসীরা ত্রাণ পাচ্ছেনা। অথচ আওয়ামী লীগ নেতাদের ত্রাণ কার্যক্রম দেখলে মনে হয় যে, বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করা নয়, বরং দুর্গত এলাকায় গিয়ে বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিষাক্ত বক্তব্য দেয়াই যেন মূল উদ্দেশ্য। আওয়ামী নেতারা শহর এলাকায় নামমাত্র ত্রাণ বিতরণ করে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগারে মেতে ওঠেছে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সপু প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।