Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিমিষে হারিয়ে গেল একটি পরিবার!

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম সড়কে মৃত্যুফাঁদ, ৭ দিনে নিহত ১৪

নিমিষেই হারিয়ে গেল একটি পরিবার। বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দুই শিশু পুত্র-কন্যাসহ মা-বাবা। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুতে শনিবার মধ্যরাতের ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অটোরিকশা চালকসহ মারা যান ৫জন। এনিয়ে মাত্র এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহানগরীর ভাঙাচোরা সড়কে মৃত্যুফাঁদে পড়ে প্রতিদিনই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। কর্ণফুলী সেতুর টোলপ্লাজায় বাস চাপায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ৫ জনের মৃত্যুতে স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওই দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- শেখ মোঃ সোহেল (৩৫) ও তার স্ত্রী সাইয়মা বেগম বৃষ্টি (৩০) এবং তাদের দুই শিশু সন্তান শেখ সাদাব বিনতে সামরিন (৫) ও দেড় বছর বয়সী শেখ সাফওয়ান বিন সাফরান। নিহত অপরজন হলেন তাদের বহনকারী অটোরিকশাচালক সুরুজ মিয়া (৫৫)।
কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান ইমাম জানান, শনিবার রাত ১২টায় সোহেলের পরিবারকে বহনকারী অটোরিকশাটি টোল দেওয়ার জন্য টোল প্লাজায় অপেক্ষা করছিল। তাদের সামনে ছিল একটি ট্রাক। এসময় পেছন থেকে যাত্রীবাহী একটি বাস ওই অটোরিকশাকে চাপা দিলে সামনের ট্রাকের সাথে লেগে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই ৫ জনের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, বাসটি বরযাত্রী নিয়ে নগরী থেকে আনোয়ারার দিকে যাচ্ছিল। সেতুতে অটোরিকশাটিকে চাপা দিয়ে চালক পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটি আটক করলেও চালক বা যাত্রীদের কাউকে পায়নি পুলিশ। জানা যায় ব্যবসায়ী শেখ মোঃ সোহেল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরীর আলকরণ এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে রাতে কর্ণফুলী থানার খুরুশকুল এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। এদিকে একই রাতে নগরীর পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় মোটর সাইকেল থেকে পড়ে লরি চাপায় মারা যান তাসলিমা আক্তার (২৩) নামে এক তরুণী। পুলিশ জানায়, বন্ধুর মোটর সাইকেলের পেছনে বসে সৈকত থেকে ফেরার পথে হঠাৎ রাস্তায় পড়ে যান তিনি। এসময় পেছন থেকে আসা একটি লরি তাকে চাপা দিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নিহত তসলিমা কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার রোশন আলীর কন্যা।
অপরদিকে গতকাল সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় তেলের লরির চাপায় এক রিকশা চালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, থানার ড্রাইভার কলোনি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোঃ হাসান (২৮) কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার আব্দুর সাত্তারের ছেলে। তিনি বায়েজিদ এলাকার মিচ্ছা পাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, একটি লরি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে চাপা দিলে হাসান আহত হন। স্থানীয়রা হাসানকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার নগরীর আকবর শাহ থানার সিটি গেইট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় তিন মোটর সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। একটি বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে তারা বাসায় ফিরছিলেন। দ্রæতগামী ট্রাকটি মোটর সাইকেলটিকে প্রচন্ড ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই দুই আরোহী নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর অপরজনের মৃত্যু হয়। তার আগে ১৩ আগস্ট নগরীর বন্দর এলাকার নিমতলায় ভাঙাচোরা সড়কে কন্টেইনারবাহী লরি উল্টে সিএনজি অটোরিকশাকে চাপা দিলে ৩ জন নিহত ও ২ জন আহত হন। তার আগের দিন সিইপিজেড এলাকায় গাড়ি থেকে পড়ে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী নিহত হন।
পুলিশ জানায়, চালকদের বেপরোয়া আচরণ এবং সড়কে ব্যাপক খানাখন্দের কারণে হঠাৎ করে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের হিসাবে এবারের বর্ষায় নগরীর এক হাজার ১৭৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে সংস্কার কাজ শুরু হলেও তা চলছে ধীরগতিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ