Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাত্রী পরিবহন নিয়ে শঙ্কা

বিআইডব্লিউটিসি’র ৬টি যাত্রীবাহী নৌযানের ২টি অচল, দুটির অবস্থা নাজুক

| প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : ঈদ উল আজহা আসন্ন হলেও রাজধানী থেকে দক্ষিনাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র  প্রস্তুতি অত্যন্ত নাজুক অকবস্থায়। আসন্ন ঈদের আগে পরে রাজধানী থেকে অন্তত ১০লাখ যাত্রী দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করবে। অথচ সংস্থাটির ৪টি প্যাডেল জাহাজের দুটির অবস্থাই যথেষ্ঠ ঝুকিপূর্ণ। পাশাপাশি গত তিন বছরে সংগ্রহ করা ২টি স্ক্রু-হইল জাহাজই বন্ধ কারিগরি ত্রুটির কারনে। অথচ আর মাত্র ৮দিন পরেই নিয়মিত সার্ভিসের অতিরিক্ত বিশেষ ষ্টিমার চালাতে হবে সংস্থাটিকে। কিন্তু সচল নৌযান সংকটে ঢাকা থেকে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন কতটুকু নির্বিঘœ হবে তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। অথচ বেসরকারী অন্তত ১৮টি নৌযানমারিকরা ঈদের আগে পরে দৈনিক ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এমনকি ঈদের এক সপ্তাহ আগে ও দশদিন পরের কোন নৌযানে কেবিন টিকেটও মিলছে না। ৮হাজার টাকা দামের ভিআইপ কেবিন টিকেট ইতোমধ্যে সোনার হরিন।
অপরদিকে ২০১৪ ও ’১৫সালে সালে প্রায় ৫৭কোটি টাকা ব্যায়ে সংগ্রহ করা ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযানের লোকশানের বোঝা বইতে গিয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র  আর্থিক ভীত নরবরে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে-পরে এসব নৌযান যাত্রী পরিবহনে কতটুক অবদান রাখবে তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। দুমাসের জন্য ইজারা দিয়ে এমভি বাঙালী জাহাজটির তলায় প্রবাল আটকে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে দ্বিতীয় দফায় ডকিং করতে হচ্ছে । গত ফেব্রুয়ারী-মার্চে নৌযানটি ইজারা দিয়ে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে চালাতে গিয়ে এর তলায় প্রবাল জমাট বেধে যায়। ফলে তা ডকিং করে পরিস্কার করার লক্ষে গত ৭জুন নৌযানটিকে হাইস্পীড নেভিগেশনের ডকইয়ার্ডর ¯øীপওয়েতে তোলা হলেও কাজ শুরুতে বিলম্ব ঘটে। আর এরই মধ্যে গত ১৮জুন ¯øীপওয়ের রোপওয়ে ছিড়ে নৌযানটি আক্ষমিকভাবেই নদীতে নেমে যায়। এ দূর্ঘটনায় নৌযানটির কোন ক্ষতি না হলেও তা অসম্ভব ছিলনা। এমনকি প্রায় ১হাজার টন ওজনের এমভি বাঙালী ঐ ¯øীপওয়েতে তোলার ক্ষমতা নিয়েও ওয়াকিবাহাল মহল সন্দেহ রয়েছে। নৌযানটির তলা পরিস্কার এবং রঙ না করেই ঐ অবস্থাতে গত ঈদ উল ফিতরের সময় তা যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনা হয়।
কিন্তু ঈদের পরে দ্রæত নৌযানটি ডকিং করে মেরামতের আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঈদ উল আজহা আসন্ন হবার মুখে গত ১৬আগষ্ট পুনরায় ‘এমভি বাঙালী’কে একই ডকইয়ার্ডে তোলার প্রক্রীয়া শুরু হয়। গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত নৌযানটি সম্পূর্ণভাবে ডকিং করা সম্ভব হয়নি। তবে ঐ অবস্থায়ই ¯øীপওয়েতে তোলা অংশের প্রবাল পরিস্কার করে তলার রঙের কাজও চলছে বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রায় আড়াইশ ফুট দৈর্ঘের নৌযানটির পেছনের ১শ ফুট এখনো ডকিং করাই সম্ভব হয়নি। আদৌ তা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে কারিগরি মহলে। মহলটির মতে, নৌযানটির তলার পরিপূর্ণ মেরামত সম্ভব নাও হতে পারে।
এদিকে ২০১৫সালে সংগ্রহ করা ‘এমভি মধুমতি’ নৌযানটির ডান পাশের প্রপেলারের বুশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে নৌযানটি বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগস্থ বুশের কারনে এর মূল বডিরও কিছু অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। তবে কিভাবে কবে নাগাদ নৌযানটির মেরামত করা হবে, তা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত গতকাল পর্যন্ত হয়নি। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও ঢাকা ঘাটের বেজ ইঞ্জিনিয়ার বাইরে থাকায় বিষয়টি তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। তবে নৌযনিটির যে ক্ষতি হয়েছে তা ডকিং করে মেরামত করাই সমচিন হবে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারিগরি বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু কবে নাগাম নৌযানটির মেরামত শুরু ও শেষ হবে তা জানা যায়নি গতকাল পর্যন্ত।
এদিকে চলমান ৪টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে ‘পিএস টার্ণ’ এর মূল ইঞ্জিনের টার্বো চার্জার কর্মক্ষম না থাকায় তার গতি প্রায় ২০ভাগ হৃাস পেয়েছে। ফলে নৌযানটি কোন গন্তব্যেই নির্ধারিত সময়ে পৌছছে না । এমনকি তা ফিরতি ট্রিপে ঢাকায় পৌছছে ৬ঘন্টা বিলম্বে। গত এক বছরখানেক যাবত নৌযানটির টার্বো চার্জার প্রায় অকার্যকর হলেও তা পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ নেই সংস্থাটির কারিগরি পরিদফÍরের। ‘পিএস লেপচা’র অবস্থাও খুব ভাল নয়। নৌযাটির মূল গীয়ারেও সমস্যা রয়েছে। প্যাডেল-এর পরিপূর্ণ রক্ষনাবেক্ষন ও মেরামত জরুরী। এ দুটি প্যাডেল জাহাজে যাত্রী সুবিধাও তলানীতে। দুটি নৌযানেই ডেক থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত নুন্যতম যাত্রী সুবিধার অভাব রয়েছে।
অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় রয়েছে ‘পিএস মাহসুদ’ ও ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ জাহাজ দুটি। কিন্তু আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে পরে দক্ষিনাঞ্চলমুখি জনশ্রোত সামাল দিতে সংস্থাটির ৪টি প্যাডেল জাহাজের পপাশাপাশি দুটি স্ক্রু-হুইল জাহাজও ত্রুটিমূক্ত করার কোন বিকল্প নেই বলে মেন করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
এব্যপাওে গতকাল বিঅইডবিøউটিসি’র চোরম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ঈদের আগে সবগুলো যাত্রীবাহী নৌযান বানিজ্যিক পরিচালনে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি নিজেও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন ও তদারকি করছেন বলেও জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ