বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রাষ্ট্রায়ত্ব চিনি শিল্পের লোকসান কমতে শুরু করেছে। গত চার বছরের ব্যবধানে লোকসান কমেছে প্রায় শত কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে লোকসান ছিল ৫৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, সেখানে গত অর্থবছরে কমে এসে দাড়ায় প্রায় সাড়ে চার শত কোটি টাকায়। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা দেয়ার পরিমানও বেড়েছে। আশার কথা হলো ধীরে ধীরে রাষ্ট্রায়ত্ব এই সংস্থাটি ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে। দেশের সব ক’টি রাষ্ট্রায়ত্ব সেক্টর করপোরেশনের মতো বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন একটি লোকসানি সংস্থা । এই সংস্থাটির গুরুত্ব অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। কারণ-একেতো এটি কৃষিভিত্তিক সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান, তারপর ভোক্তাদের মান সম্পন্ন চিনির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প যা বাস্তবায়নাধীন। এই মুহুুর্তে এই শিল্পের উন্নয়নে যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কোন-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নবায়নযোগ্য জ¦ালানী ব্যবহারের মাধ্যমে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চিনিকলের নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় একটি সুগার রিফাইনারীও স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে ‘র’ সুগার হতে হোয়াইট সুগার উৎপাদন করে দেশে চিনির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভুমিকা রাখা হবে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজনে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় চিনিকল ও ডিস্টিলারি কারখানা কেরু এন্ড কোম্পানী (বিডি) লিঃ। এর আধুনিকীকরণে গ্রহণ করা হয়েছে বিএমআর প্রকল্প। এতে ৭৩ বছরের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিনিকলটির বর্তমান আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষিত হবে। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক অন্যান্য যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা হলো সনাতন প্রথার পরিবর্তে একটি মোবাইল এসএম এস’র মাধ্যমে সকল আখচাষির কাছে মিলে আখ সরবরাহের আগাম বার্তা পৌছে দেয়া (ই-পুর্জি)। প্রধানমন্ত্রী গত ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর একযোগে সকল চিনি কলে ই-পুর্জি কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন। এর ফলে লাখ লাখ চাষির দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল সেবা। নিশ্চিত করা হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ই-পুর্জির সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ভারতের মস্থন এ্যাওয়ার্ড সাউথ এশিয়া ২০১০ পুরষ্কার লাভ করে। এছাড়াও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১০-এ ই-সেবা ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরষ্কার সহ বিভিন্ন পুরষ্কার লাভ করে। ই-পুর্জি ব্যবস্থাপনায় সফলতার পর সেবার পরিধি আরো বিস্তৃত করতে চালু করা হয়েছে ই-গেজেট। এর মাধ্যমে চাষিরা ই্উনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে পুরো মৌসুমের কেন্দ্র ও ইউনিট ভিত্তিক আখ ক্রয়ের আগাম কর্মসূচি দেখতে পারছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আখমাড়াই মৌসুমে ফরিদপুর চিনিকলে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয় এবং চলতি ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মৌসুমে সকল চিনিকলে চালুর কর্মসূচি নেয়া হয়। ই-পুর্জি ও ই-গেজেট প্রচলনের পর চিনিকল গুলোতে এবার মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করার যুগান্তকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ভোক্তা যাতে সহজে চিনি পান সে লক্ষ্যে ১ ও ২ কেজির প্যাকেটজাত চিনি বাজারজাত করছে চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা। তাও আবার কম মূল্যে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৫ সালের ২৮ মে’ এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। চিনিকলের প্রেসমাড ও ইথানল প্লান্টের বর্জ্য হতে বায়োকম্পোস্ট উৎপাদনপূর্বক রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণরোধ করতে কেরু এন্ড কোম্পানীতে স্থাপন করা হয়েছে জৈব সারকারখানা। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল এর উদ্বোধন করেন। করপোরেশনের চেয়ারম্যান জানান, শিল্পায়নে অগ্রগতির মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ চলায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন দেশের সকল আখ চাষি এবং চিনি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এক সময় এটি ছিল বৃহৎ একটি সেক্টর। বিগত সরকারগুলো এই করপোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বিরাষ্ট্রীয়করনের নামে বন্ধ বা বিক্রি করে দেয়ায় এটি লোকসানের মুখে পড়ে। ২৮টির মতো সহযোগী প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা বিক্রি করে দেয়া হয়। ৪ টি বৃহৎ চিনি কলও বন্ধ করে দেয়া হয়। বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া অনেক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আবার বেসরকারি খাতে কয়েকটি লাভজনক অবস্থায় চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।