বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নরসিংদীতে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সামনেই স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এক কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একটি এসএমএসের সূত্র ধরে শনিবার ভোরে ওই কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া এই কলেজ ছাত্রের নাম তামজিদ আহম্মেদ । বাড়ি নরসিংদী শহরের ভেলানগর মহল্লায়। সে নরসিংদী আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। শনিবার সদর উপজেলার চিনিশপুর রাজাদী গ্রামের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও রক্তমাখা জামাসহ তামজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তামজিদ শনিবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে।
পুলিশ দাবি করেছে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে যাকে সেই সুজন সাহার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী অদিতি সাহারই প্রেমিক এই তামজিদ । স্ত্রীর সঙ্গে যোগসাজশেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে তাকে।
গত বুধবার রাতে নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে স্ত্রীর সামনে সুজন সাহাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই পুলিশ সুজনের স্ত্রী অদিতি সাহা, শাশুড়ি অলকা রানী সাহা ও স্ত্রীর বড় ভাই সজল সাহাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন ও সুজনের শ্বশুর কাশীনাথ সাহাসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহত সুজনের বাবা বিমল চন্দ্র সাহা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর তামজিদ পুলিশকে জানায়, অদিতি সাহার সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর ধরে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। হিন্দু-মুসলমান হওয়ায় পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে পাঁচ মাস আগে অদিতির পরিবার জোর করে তাকে ঢাকার পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা সুজন সাহার সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরও তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন অদিতি। পরে স্বামী সুজন সাহা ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনা জানতে পারেন। এ নিয়ে সুজন স্ত্রী অদিতিকে গালমন্দ করেন। এই ঘটনা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয় তামজিদ। পরে সংসার আর ভালো লাগছে না বলে অদিতি তামজিদকে কিছু একটা করতে বলেন।
তামজিদ জানায়, বুধবার অদিতি স্বামী সুজনকে নিয়ে নরসিংদীতে তার বাবার বাড়িতে মনসা পূজায় অংশগ্রহণের জন্য বেড়াতে আসছিলেন। আসার সময় অদিতি স্বামীকে নিয়ে ট্রেনে নরসিংদী নেমে বাবার বাড়ি যাবেন বলে মুঠোফোনে এসএমএস করে তামজিদকে জানিয়ে দেয়। এ তথ্য পেয়ে তামজিদ তার বাসা থেকে চাপাতি নিয়ে সাদা গেঞ্জির কাপড়ে পেঁচিয়ে বাড়ি থেকে বের হন এবং ঘটনাস্থলের পাশের ঝোঁপে অপেক্ষা করতে থাকেন। সুজন ও অদিতি রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিনিশপুর কালীমন্দিরের কাছে পৌঁছালে তামজিদ চাপাতি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে সুজনকে হত্যা করে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রূপন কুমার সরকার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই তাপস কান্তি রায় জানান, গত বুধবার (১৬ আগস্ট) রাতে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পথে স্ত্রীর সামনেই দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন ঢাকার পীরেরবাগ এলাকার সুজন সাহা। এ ঘটনায় নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা করা হয়। ঘটনার পরপর সুজনের স্ত্রী, শাশুড়ি ও স্ত্রীর বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি এসএমএসের সূত্র ধরে শনিবার ভোর রাতে তামজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত সুজনের বড় বোন সীমা সাহা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ মাস আগে নরসিংদীর রাজাদী এলাকার কাশীনাথ সাহার মেয়ে অদিতি সাহাকে বিয়ে করেন সুজন। বিয়ের পর থেকেই অদিতি শাশুড়ির মুঠোফোন নিয়ে দীর্ঘ সময় সবার আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। এরপর সুজন স্ত্রীকে ১৫ হাজার টাকায় একটি মুঠোফোন কিনে দিলে বাথরুমে ঢুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন অদিতি। এতে বাড়ির সবাই বিরক্ত হয়ে তার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিলে স্বামী-শাশুড়ির সঙ্গে অদিতির মনোমালিন্য শুরু হয়। বুধবার অদিতি নিজের গয়না ও সব কাপড়-চোপড় নিয়ে মনসা পূজার নাম করে বাবার বাড়ি রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন সুজন। রাতে ট্রেন থেকে নেমে সাড়ে ১১টার দিকে রিকশায় করে রাজাদী যাওয়ার পথে চিনিশপুর কালীমন্দিরের অদূরে তার প্রেমিক তামজিদসহ কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাদের পথরোধ করে। অদিতিকে ছেড়ে দিয়ে তারা সুজনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। তার চিৎকারে পথচারী ও পাশের লোকজন এসে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।