বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খুলনা ব্যুরো : প্রচার-প্রচারণার অভাব ও যাত্রীসেবার নিম্নমানের কারণে খুলনা-ঢাকা স্টিমার সার্ভিসটির যাতায়াত খরচ উঠেনি। খরচ পুষিয়ে গতি আসেনি ‘এমভি মধুমতি’র। লোকসানে পড়ে আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে খুলনা থেকে রাজধানী নৌ-রুটে রাষ্ট্রয়াত্ত¡ স্টিমার সার্ভিস ‘এমভি মধুমতি’। সার্ভিসটি চালু রাখতে অবিলম্বে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে যাত্রী সমাগম বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহন বাড়াতে হবে। স্বেচ্ছায় প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা-ঢাকা রুটে স্টিমার সার্ভিস অব্যাহত ছিল। কিন্তু মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নৌপথে খুলনার সাথে ঢাকা ও বরিশালের যোগাযোগ অনেকাংশে বন্ধ ছিল। এ অঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ৩০ নভেম্বর চালু হয় ‘এমভি মধুমতি’ স্টিমার সার্ভিস। তবে যাত্রী সংকটের কারণে প্রথম থেকেই বিপুল অর্থ লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বিআইডবিøউটিসি সূত্র জানায়, এমভি মধুমতি কোন ব্যবসায়িক পণ্য বহন করে না। প্রথম যাত্রায় স্টিমারটির যাত্রী ছিল মাত্র ১৪ জন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে মাত্র ৩৫ জন যাত্রী ও অল্প কিছু মালামাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় স্টিমারটি। এদিন আয় হয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৮টাকা।
এমভি মধুমতি’র মাস্টার মাসুদ পারভেজ জানান, এ রুটে সপ্তাহে একদিন স্টিমার চলে। যাত্রী ও মালামাল অত্যন্ত কম থাকে। অনেকটা ফাঁকা যাওয়া-আসা করতে হয়। আসা-যাওয়ায় অন্তত সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। বলতে গেলে পুরোটাই লোকসান দিতে হচ্ছে।
ফলে গত বছর নভেম্বরে সার্ভিসটি চালু হওয়ার পর থেকে গত সাড়ে ৮মাসে সরকারের কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডবিøউটিসি’র কর্মকর্তারা। যাত্রী সংকট ও লোকসানের কথা স্বীকার করে তারা বলেন, লোকসান বড় কথা নয়, রাজধানীর সাথে খুলনার নৌ যোগাযোগ সচল রাখার লক্ষ্যেই সার্ভিসটি চালু করা হয়েছে। এছাড়া এ সার্ভিস চালুর বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ছিল।
যাত্রীদের অভিযোগ- স্টিমারে ১ম শ্রেণীর যাত্রীদের নি¤œমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। কেবিনের দায়িত্বরত কর্মচারীরা যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার দিকে একটুও খেয়াল রাখে না। বিআইডবিøউটিসির কর্মকর্তারা জানান, খুলনা থেকে নৌপথে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার। এ পথের জন্য এমভি মধুমতি স্টিমারে প্রথম শ্রেণীর ভাড়া জনপ্রতি দুই হাজার ১০০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়া এক হাজার ২৬০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর ৩১০ টাকা। প্রতি ট্রিপে প্রায় ৯ হাজার লিটার জ্বালানি প্রয়োজন হয় স্টিমারটিতে- যা ঘণ্টা হিসাবে প্রায় ২০০লিটার। কাজেই এ রুটে যাত্রী সংখ্যা বাড়ানো না গেলে লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যেতে পারে সার্ভিসটি।
বিআইডবিøটিসি’র হিসাব অনুযায়ী, খুলনা-ঢাকার একটি ট্রিপে স্টিমারটির জ্বালানি তেল বাবদ খরচ হয় অন্তত ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আর আয় হয় সর্বসাকুল্যে দেড় লাখ টাকা। এতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে প্রতি মাসে চার ট্রিপে লোকসান হয় অন্তত ১৩ লাখ টাকা। ৮ মাসে লোকসান হয়েছে এক কোটি টাকার বেশি।
খুলনা বিআইডবিøউটসির ম্যানেজার আবদুল মান্নান জানান, প্রতি ট্রিপে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা লোকসান হয়। যাত্রী না থাকার কারণে এ লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া সড়ক পথে সময় অনেক কম লাগায় যাত্রীরা স্টিমার সার্ভিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নৌপথে বিভিন্ন স্থানে নাব্য সংকট রয়েছে। ডুবো চরের আতঙ্কও রয়েছে। এভাবে লোকসান দিয়ে স্টিমার সার্ভিস চালু রাখা কঠিন ব্যাপার।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, যেকোনো মূল্যে স্টিমার সার্ভিসটি চালু রাখতে হবে। সে জন্য যাত্রী সমাগম বৃদ্ধি করতে প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন। বিআইডবিøউটসি’র পক্ষ থেকে প্রতি সপ্তাহে দু/একবার প্রচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাণিজ্যিক মালামাল বহনের অনুমতি দিলে খুলনার মৎস্য, কাঁচা তরকারিসহ কৃষি পন্য বাজারজাতকরণ হবে ঢাকায়। তাতে সার্ভিসটির খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।