Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরার খামারিদের যন্ত্রণা ভারতীয় গরু

| প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু: ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন সাতক্ষীরার খামারিরা। শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। গত কয়েক বছরে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠেছে গরুর খামার। এসব খামারে প্রচুর পরিমানে দুধ উৎপাদন করার পাশাপাশি কুরবানির ঈদে জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পশু সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে ভারতীয় গরু আমদানি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা ভর করেছে খামারিদের মনে। তাদের একটাই মাথা ব্যথা ভারতীয় গরু ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সারাবছর ধরে লালন-পালন করা পশুগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চলছে খামারিদের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। খামারের শ্রমিকদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ কাটছেন ঘাস-খড়, কেউ খৈল, লালিগুড়, ভূষির মিশ্রণে খাবার তৈরি করে দিচ্ছেন গরুকে। কেউবা পরম যতেœ লালিত পশুকে দিচ্ছেন খুদের ভাত। চিকিৎসকের পরামর্শে অনেকে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ালেও ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা ইনজেকশন ব্যবহার করছেন না বলে দাবি খামারিদের।
একাধিক গো-খামারি জানিয়েছেন, সারাবছর পরিশ্রম করে, অর্থ লগ্নি করে শেষ মুহূর্তে লোভে পড়ে অনেকেই মোটাতাজা করণে অসাধু পন্থা বেছে নিতেন। কিন্তু, এ পদ্ধতিতে ডেক্রামেথাসন ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর গরুর চামড়ার ভেতরে বাড়তি পানির স্তর জমে গরুক বেশি মোটাতাজা ও সবল দেখায়। এতে কমে যায় গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তারা বলেন, ইনজেকশন বা ওষুধ দিয়ে দ্রæত মোটাতাজা করা গরুর গায়ে শক্তি থাকে না, মাদকাসক্ত মানুষের মতো ঝিমায়। অনেক সময় মানুষের মতো স্ট্রোক করে মারা যায় এসব গরু। ইতোপূর্বে এ অঞ্চলের মুনাফালোভী খামারি ও চাষিরা কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে বাজারে বিক্রি করতে না পেরে লোকসান দিয়েছেন। ফলে এ বছরা জেলায় শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ খামারি ও চাষি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
গো খামারিরা জানান, দেশী জাতের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান, ভারতের হরিয়ান, পাকিস্তানি সাহিয়াল জাতের পাশাপাশি স্থানীয় সংকর জাতের গরুর সমাহার এখন খামারগুলোতে। তারা বলেন, এসব গরুর চাহিদা রয়েছে বাজারে। তবে, পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে গরু আসা শুরু হওয়ায় আমরা চিন্তিত। অনেক টাকা খরচ করে গরু পালন করার পর ভারতীয় গরু আসার কারণে হয়তো আমাদের বিক্রিতে কাটতি দেখা দিতে পারে। সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করার পর ঈদের সময় যদি আবার ভারত থেকে গরু আসতে থাকে, তাহলে তাদের পোষা গরুর উপযুক্ত দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে কমদামে লোকসানে তা বিক্রি করতে হয়। তারা ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, ¯া’ণীয় খামারিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করে পশু পালনে উদ্বুদ্ধ করার। তারা আরো দাবী করে বলেন, জেলায় খামারিদের কাছে প্রচুর গরু থাকায় এবার পশুর দামও মোটামুটিভাবে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তিন মনের অধিক একটি দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৫৩ হাজার টাকায়। সুতরাং ভারতীয় গরুর ওপর ক্রেতাদের ভরসা না করলেই চলে।
আসন্ন কুরবানির ঈদে চাহিদা অনুযায়ি জেলায় পশু সংকট হবে না মন্তব্য করে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ জানান, জেলায় ৩২ হাজার গরুসহ ৫৩ হাজার বিভিন্ন ধরণের পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ভারতীয় গরু আসার কারণে স্থাণীয় খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতীয় গরু আমদানি হলে তা অবশ্যই খামারিদের ওপর প্রভাব ফেলবে। খামারিার হয়তোবা ন্যয্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন।
সাতক্ষীরা রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারত থেকে এ পর্যন্ত গরু এসেছে এক লাখ ১৪ হাজার ৩৯৮ টি। জেলার দেবহাটার কোমরপুর, ভাতশালা, সদরের হাড়দ্দহা, সাতানী, কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া, কালিগঞ্জের বসন্তপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। চলতি আগষ্ট মাসেই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় চার হাজার গরু এ দেশে এসেছে । তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ভারতীয় গরুর আমদানি আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ